আজকে আমরা জানবো ব্যাকরণ কাকে বলে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আশা করি আপনারা এই প্রশ্নের উত্তর ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন।

ব্যাকরণ কাকে বলে?
ব্যাকরণের সংজ্ঞা : সাধারনভাবে বলা যায় ,যে শাস্ত্রের সাহায্যে ভাষার স্বরূপ ও গঠণপ্রকৃতি নির্ণয় করে সুবিন্যস্ত করা যায় এবং ভাষা শুদ্ধরূপে বলতে, পড়তে এবং লিখতে পারা যায়, তাকে ব্যাকরণ বলে।
ব্যাকরণের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
‘ ব্যাকরণ ’ শব্দটি সংস্কৃত শব্দ এবং এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে — বিশ্লেষণ । শব্দটির ব্যুৎপত্তি এরকম – বি+আ+√কৃ+অন = ব্যাকরণ
ব্যাকরণ যার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বিশেষভাব বিশ্লেষণ। ব্যাকরনকে বলা হয় ভাষার সংবিধান। ব্যাকরণ না জানলেও ভাষা ব্যবহার করা সম্ভব তবে শুদ্ধভাবে মনের ভাব বা ভাষা প্রকাশ করতে চাইলে আপনাকে ব্যাকরণের নিয়ম-কানুন জানা আবশ্যক। ইংরেজিতে আমরা ব্যাকরণকে বলে থাকি Grammar যার অর্থ ‘শব্দশাস্ত্র’।
যে শাস্ত্রে কোনা ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপর বিচার-বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়োগবিধি বিশদভাবে আলোচিত হয়, তাকে ব্যাকরণ বলে।
Also Read: সিলভার কাকে বলে?
Also Read: সিলভার কাকে বলে?
বাংলা ব্যাকরণের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা সম্পর্কে ভাষা বিজ্ঞানীগণ এখনাে পর্যন্ত একমত হতে পারেননি । তাঁরা এ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত দিয়েছেনঃ
ড. হুমায়ুন আজাদের মতে
“ এখন ব্যাকরণ বা গ্রামার বলতে বোঝায় এক শ্রেণির ভাষা বিশ্লেষণাত্মক পুস্তক যাতে সন্নিবিষ্ট হয় বিশেষ বিশেষ ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগের সূত্রাবলি।”
ড . মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেছেন
“ যে শাস্ত্র জানিলে বাঙ্গালাভাষা শুদ্ধরুপে লিখিতে , পড়িতে ও বলিতে পারা যায় , তাহার নাম বাঙ্গালা ব্যাকরণ।”
ড . সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে
“ যে শাস্ত্র কোনও ভাষাকে বিশ্লেষণ করিয়া তাহার স্বরূপ , প্রকৃতি ও প্রয়ােগরীতি বুঝাইয়া দেওয়া হয় , সেই শাস্ত্রকে বলে সেই ভাষার ব্যাকরণ । যে শাস্ত্র বাংলাভাষার স্বরূপ ও প্রকৃতি সবদিক দিয়া আলােচনা করিয়া বুঝাইয়া দেওয়া হয় , তাহাকে বলে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বা বাংলা ব্যাকরণ । ”
ড . এনামুল হকের মতে
“ যে শাস্ত্রের দ্বারা ভাষাকে বিশ্লেষণ করিয়া ইহার বিবিধ অংশের পারস্পরিক সম্বন্ধ নির্ণয় করা যায় এবং ভাষা রচনা কালে আবশ্যকমত সেই নির্ণীত তত্ত্ব ও তথ্য প্রয়ােগ সম্ভবপর হইয়া উঠে , তাহার নাম ব্যাকরণ ।”
ড . মুনীর চৌধুরীর মতে
“ যে শাস্ত্রে কোন ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়ােগবিধি বিশদভাবে আলােচিত হয় , তাকে ব্যাকরণ বলে।”
” ব্যাকরণের সংজ্ঞা সম্পর্কে পণ্ডিতগণের বিভিন্ন মতামত আমরা লক্ষ্য করলাম । ওপরের সংজ্ঞাগুলাে থেকে ব্যাকরণ সম্পর্কে এ কথা বলা যায় , ব্যাকরণ এমন একটি বিষয় যার মাধ্যমে ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপ বিশ্লেষণ ও সমন্বয় সাধন করে ভাষার গঠন ও লিখনে শৃঙ্খলা বিধান করা যায় ।
মােটকথা ভাষার বিশ্লেষণ , গঠন ও লিখনে ব্যাকরণের কোনাে বিকল্প নেই । কেননা বাংলাভাষার ইতিহাস লক্ষ্য করলেই আমরা বুঝতে পারবাে , শুরু থেকেই ব্যাকরণবিদগণ এই শাস্ত্রের মাধ্যমেই ভাষার গঠন – প্রকৃতি , ভাষার উপাদান , উপকরণ সম্যকভাবে বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করেছেন এবং করছেন।
ব্যাকরণ পাঠের প্রয়ােজনীয়তাঃ
ব্যাকরণ পাঠের প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ড . মুহম্মদ এনামুল হক বলেছেন , ‘ আলাে , জল , বিদ্যুৎ , বাতাস প্রভৃতি সম্বন্ধীয় বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্য না জানিয়াও মানুষ বাঁচিয়াছে , বাচিতেছে ও বাঁচিবে । কিন্তু , তাই বলিয়া ! ঐ সমস্ত বস্তুর বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্যকে মানুষ অস্বীকার করিয়া বর্তমান সভ্যতার গগনবিচুম্বী সৌধ নির্মাণ করিতে পারে নাই ।
ব্যাকরণ না জানিয়াও ভাষা চলিতে পারে ; কিন্তু ভাষাগত সভ্যতা না হউক , অন্তত সভ্যতার পত্তন বা সমৃদ্ধি হইতে পারে না ।. . . এই জন্যই শিক্ষিত ব্যক্তির পক্ষে ব্যাকরণ – সম্বন্ধীয় সাধারণ জ্ঞানের সঙ্গে বিশেষ জ্ঞানও আবশ্যক ।
একটি ভাষা সম্বন্ধে পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করতে হলে সেই ভাষার ব্যাকরণ পাঠের প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম , কারণ
1 । ব্যাকরণ কোনও ভাষাকে বিশ্লেষণ করে তার স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করে । যে কোনাে ভাষার বিধি – বিধানের নিয়ামক হল ব্যাকরণ । তাই ব্যাকরণকে ‘ ভাষার সংবিধান ‘ বলা হয় ।
2 । ব্যাকরণ পাঠ করে ভাষার বিভিন্ন উপাদানের গঠন – প্রকৃতি ও সে – সবের সুষ্ঠু ব্যবহারবিধি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায় এবং লেখায় ও কথায় ভাষা প্রয়ােগের সময় শুদ্ধি – অশুদ্ধি নির্ধারণ সহজ হয় ।
3 । ভাষার সৌন্দর্য সম্ভােগের জন্যেও সেই ভাষার ব্যাকরণ পাঠ অবশ্য কর্তব্য ।
4 । সাহিত্যরসিকদের মতে সাহিত্যের রস আস্বাদন করতে হলে পুরােপুরি সে রস গ্রহণ করতে হয় ; ব্যাকরণ সে রস গ্রহণের সহায়ক ।
5। ব্যাকরণের তত্ত্ব ও তথ্য সম্পর্কে উপযুক্ত জ্ঞান না থাকলে ভাষাগত আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে । তখন । উন্নত ভাবের বাহনরূপে ভাষাকে ব্যবহার করে উৎকৃষ্ট সাহিত্য সৃষ্টি করা যায় না ।
6 । মােটের ওপর ভাষার সামগ্রিক রূপটিকে বােধের উপযােগী করে তােলা ব্যাকরণ শিক্ষার লক্ষ্য । বাংলা ব্যাকরণের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযােজ্য ।
7 । ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য স্বেচ্ছাচারিতা রােধ হয় , ফলে ভাষার বিশুদ্ধতাও রক্ষা পায় ।
অতএব ভাষাপ্রয়ােগের জন্য এবং ভাষার সৌন্দর্য সম্পাদনের রীতি – নীতি ( যেমন — ধ্বনি , শ , ছন্দ , বাক্য । অলঙ্কার , বাগধারা প্রভৃতি ) জানা ও প্রয়ােগের জন্য ব্যাকরণ – জন অপরিহার্য । তবে একটি কথা মরণ রাখতে হবে – ভাষা আগে , পরে ব্যাকরণ ।