আজকের আমরা ”যারে তুমি নিচে ফেল, সে তোমারে বাঁধিবে যে নিচে পশ্চাতে রেছে যারে, সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে” ভাবসম্প্রসারণটি পড়ব। ভাবসম্প্রসারণ পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপৃর্ণ। বিশেষ করে এই ভাবসম্প্রসারণটি খুবই গুরুত্বপৃর্ণ।
যারে তুমি নিচে ফেল, সে তোমারে বাঁধিবে যে নিচে পশ্চাতে রেছে যারে, সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে
মূলভাব: পৃথিবীতে কোন মানুষই তুচ্ছ নয়। সমাজের সকল মানুষই একই পথের সহযাত্রী। কেউ কারো বড় কিংবা ছোট নয়। স্রষ্টা যা কিছু সৃষ্টি তার সবই একটি অপরটির উপর নির্ভরশীল। একে অন্যের সহযোগিতা নিয়ে আজকে সবাই সভ্যতার উৎকর্ষের অবদান রাখছে।
সম্প্রসারিত ভাব: বিশ্বে সাদা-কালো, আর্য- অনার্য, হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ- খৃষ্টান, আরব-অনারব ইত্যাদি বর্ণগত ও জাতিগত পার্থক্য ও বৈষম্য বিরাজমান। সব ভেদাভেদ ও বৈষম্যের কারণে মানব সমাজের উন্নতি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সে সাথে দেখা দিয়েছে জাতিভেদ, শ্রেণীভেদ এবং ঘৃণ্য বিরোধ। ছোট- বড়, ধনী- গরীব, জাত- অজাতের প্রশ্ন মুখ্য নয়, যারা এগুলো মুখ্য মনে করে একা একাই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই প্রকৃতপক্ষে তারা এগোতে পারে না। পৃথিবীর উচ্চতম মানুষগুলো শিক্ষা-সংস্কৃতি, আর্থিক সুযোগ-সুবিধা, সামাজিক মর্যাদা, প্রভাব-প্রতিপত্তি সবদিক থেকে নিম্ন স্তরের মানুষ গুলোকে বঞ্চিত রাখতে সদাতৎপর। এর ফলে মানব সমাজের একটা বৃহৎ অংশ মনুষত্ব বিবর্জিত স্তরে অবহেলা, অবমাননা, বঞ্চনা, ও দারিদ্র্যের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। যা সমগ্র দেশ ও জাতির উন্নয়নে মানবকল্যাণের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। মানুষ সমাজের অন্যান্য মানুষের সাথে সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে যদি এগিয়ে যায় তাহলে সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা যেমন গড়ে উঠতে পারে তেমনি মানুষের ব্যক্তিগত সুখ ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত হতে পারে। সমাজে যারা উঁচু-নিচু, ধনী-দরিদ্র এসব শ্রেণীবৈষম্যের সৃষ্টি করে তারা সমাজ হিতৈষী নয়, মানবহিতৈষী নয়। এমনকি এসব স্বার্থপর মানুষ নিজেরাও একসময় বিপদগ্রস্ত হয়। কারণ অবহেলা করে, ঘৃণাভরে স্বার্থপর মানুষেরা যাদের পেছনে ফেলে দেয় সেসব অবহেলিত বঞ্চিত মানুষেরাই তাদের এক সময় পেছন দিকে টেনে ধরে। অথচ সবাই যদি একে অপরের সতীর্থ হয়ে একযোগে কাজ করে তাহলে সবার জন্যই মঙ্গল। বিশ্বের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী যেখানে অশিক্ষার অন্ধকারে কুসংস্কার এবং মানবতা বিবর্জিত জীবন যাত্রায় অবদমিত সেখানে মুষ্টিমেয় উচ্চশ্রেণীর সংস্কৃতি উন্নত জীবনযাত্রায়ও কলঙ্কের কালিমা চিহ্ন পড়বে– তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না। কারণ সমাজ একটা যৌথ পরিবার। সেখানে একের জীবনধারা, জীবনচর্চা অপরকে প্রভাবিত করেই। তাছাড়া বিশ্বের এসব সুবিধা বঞ্চিত অবহেলিত মানুষ গুলোর মধ্যে দিনে দিনে সঞ্চিত অসন্তোষ অনেক সময় বিদ্রোহ ও বিপ্লবের রূপ পরিগ্রহ করে থাকে। তাতে সমাজ হয় বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সবার একত্রে অবস্থানের মধ্য দিয়ে যে কোন কঠিন কাজ সম্পন্ন করা সহজতর হয়। ব্যক্তিগত সীমারেখা সামষ্টিক সীমারেখার তুলনায় খুবই সংকীর্ণ। তাই ব্যক্তিকে সামষ্টিক সীমারেখা ধরেই পথ চলতে হবে। নচেৎ একসময় ব্যাক্তি নিজেই সামষ্টিক শক্তির কাছে নত হয়ে পড়তে বাধ্য হয় এবং অস্তিত্বের সংকটে পড়ে।
মন্তব্য: জগত সংসারে জাতি, বর্ণ, গোত্র, শ্রেণি, উঁচু, নিচু ইত্যাকার সকল শ্রেণীর জনগণের বসবাস। জীবনযাপন প্রণালীতে এদের রয়েছে ব্যাপক বৈষম্য ও ভিন্নতা। কাজেই সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত সুখ-সমৃদ্ধি নিশ্চিত হতে পারে। কারো একার পক্ষে তা সম্ভব নয়, এটাই বাস্তবতা।
অন্য বই থেকে বিকল্প ১
ভাব-সম্প্রসারণ : জীবনের পরিপূর্ণ সার্থকতার পেছনে রয়েছে সমষ্টিগত সহযোগিতা। জীবনকে সার্থক বিকাশ ও পরিপূর্ণ সফলতার জন্য সকলের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কাউকে পেছনে ঠেলে একা সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা অনুচিত।
মানুষ যেহেতু সামাজিক জীব, সেহেতু সমাজ জীবনে পরস্পরে একে অপরের ওপর নীর্ভরশীল, ফলে পরস্পরের সহযোগিতা ছাড়া কেউ চলতে পারে না। কিন্তু সমাজে এক শ্রেণীর মানুষ রয়েছে, যারা স্বার্থবুদ্ধি, সঙ্কীর্ণতা ও অনুদারতাবশত অন্যদের কেউ চলতে পারে না। কিন্তু সমাজে এক শ্রেণীর মানুষ রয়েছে, যারা স্বার্থবুদ্ধি, সঙ্কীর্ণতা ও অনুদারতাবশত অন্যদের কথা না ভেবে, তাদেরকে পেছনে ফেলে রেখেই এগিয়ে যেতে চায়। সে শুধু নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয় তখন অপরের ক্ষতি সাধনে তৎপর হয়, অন্যের বড় হওয়ার পথেও বাধার সৃষ্টি করে। ফলে ব্যক্তি ও সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্তরা জাতির অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে রাখে। তাছাড়া বঞ্চিত ও অবহেলিত শ্রেণীর মধ্যে ধূমায়িত অসন্তোষ অনেক সময় বিদ্রোহ-বিপ্লবে রূপ নেয়। কারণ, যাকে নিচে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় প্রকৃত অর্থে এই এগিয়ে যাওয়াটা নিষ্কণ্টক নয়। বস্তুত কাউকে নিচে ফেললে সে নিচ থেকে আটকে রাখে। তখন উপরে ওঠার সুযোগ থাকে না। তেমনি কাউকে পেছনে ফেললে সে পেছন থেকে টেনে ধরে। তখন সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া যায় না। তাই টানাটানি যদি পরিহার করা যায় তাহলে উভয়ের এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। সুতরাং কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বা পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা না করে পরস্পর সহযোগিতার মাধ্যমেই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। এর মধ্যেই প্রকৃত কল্যাণ নিহিত।
একা বেশি দূর এগিয়ে যাওয়া যায় না। সেজন্য সকলকে সুযোাগ দিতে হবে, সকলের জন্য ভাবতে হবে। ‘আগে-পিছে’র প্রতিযোগিতায় না গিয়ে সবাই মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কেননা সকলের সম্মিলিত উদ্যোগের ফলে শক্তি সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়, লক্ষ্য অর্জনে সফল হওয়া যায়।
অন্য বই থেকে বিকল্প ২
মূলভাব : মানব জাতির সভ্যতার ঐতিহাসিক ক্রমবিকাশের ধারাবাহিক গতিপথ প্রতিক্রিয়ার অসংখ্য নজির দ্বারা চিহ্নিত। লক্ষ লক্ষ বছর আগে প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষ একে অপরের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করত।
সম্প্রসারিত-ভাব : বিশ্বের মানবসমাজ বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত। এ শ্ৰেণীবিভক্তি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। ধর্ম, বর্ণ, পরিবেশ, আর্থ-সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ প্রভাব এ শ্রেণীভেদ, সৃষ্টি করে থাকে। মুসলমান-হিন্দু, আরব-ইহুদি, সাদা-কালাে, আর্য-অনার্ষ, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ইত্যাদি বর্ণগত ও জাতিগত পার্থক্য ও ভেদাভেদ বিদ্যমান। মাবসমাজের উন্নতি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির প্রধান অন্তরায় এ জাতিভেদ, শ্রেণীভেদ ঘৃণা ও বিরােধ। উচ্চ শ্রেণী শিক্ষা, সংস্কৃতি, আর্থিক সুযােগ-সুবিধা, সামাজিক মর্যাদা ও প্রতিপত্তি প্রভৃতি দিক থেকে তথাকথিত নিম্ন শ্রেণীকে বঞ্চিত করতে চায়। এর ফলে মানবসমাজের একটা বৃহৎ অংশ মনুষ্যত্বহীন স্তরে অবমাননায়, লাঞ্ছনায় ও দারিদ্র্যে মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হয়। তা সমগ্র সমাজের ও দেশের উন্নতি এবং মানবকল্যাণের পরিপন্থী। দেশের বৃহত্তর জনসংখ্যা যেখানে অশিক্ষিার অন্ধকার ও হেয়তায় কুসংস্কারে এবং অমানবােচিত জীবনযাত্রায় অবনমিত, সেখানে স্বল্পসংখ্যক উচ্চবিত্তের সংস্কৃতি-উজ্জ্বল জীবনেও তার মসীচিহ্ন পড়তে বাধ্য। কারণ, সমাজ একটা যৌথ-জীবনধারা; একের জীবনচর্চা ও ধারা অপরকে সেখানে প্রভাবিত করবেই। তাছাড়া বঞ্চিত, অবহেলিত শ্রেণীর মধ্যে ধূমায়িত অসন্তোষ অনেক সময় বিদ্রোহ-বিপ্লবের রূপ গ্রহণ করে থাকে। তাতে সমাজ বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পৃথিবীর বহু প্রাচীন সভ্যতা এ কারণে বিনষ্ট হয়েছে। জন্ম লগ্ন থেকেই মানুষ স্বাধীন। তাকে নিকৃষ্ট ইচ্ছা চরিতার্থ করার জন্য বেশিদিন পরাধীনতায় বেঁধে রাখা যায় না। তাৎক্ষণিকতাবে বা দেরিতে যেভাবেই হােক সময় সকল সমস্যার সমাধান করে ছাড়ে।
আশা করি তোমাদের এই ভাবসম্প্রসারণটি ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবে।