উপন্যাস কাকে বলে? | uponnash kake bole? | উপন্যাসের উপাদান কয়টি ও কি কি? | উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য কি কি?

আজকে আমরা জানবো উপন্যাস কাকে বলে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আশা করি আপনারা এই প্রশ্নের উত্তর ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন।

উপন্যাস কাকে বলে
উপন্যাস কাকে বলে

উপন্যাস কাকে বলে?

একদম খুব সহজেই বললে এভাবে বলা যায় যে, গ্রন্থকারের ব্যক্তিগত জীবন দর্শন ও জীবনানুভূতি কোন বাস্তব কাহিনীকে অবলম্বন করে যে বর্ণনাত্মক শিল্পকর্মে রূপায়িত হয়, তাকে উপন্যাস বলে।

মনে রাখার কৌশল: উপরের যেকোনো একটি সংজ্ঞা ১০ বার পড়ুন। তাহলে দেখবেন এমনিতে মনে থাকছে। ❤️

এখন আরো ভালোভাবে ব্যাখা করলে এভাবে বলা যায় যে, উপন্যাস বলতে বোঝায় বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি জীবন সম্পর্কে সামগ্রিক আখ্যান কে। আবার বলা যায় – যে আখ্যান ধর্মী সাহিত্য মানুষের অভিজ্ঞতা লব্ধ সামগ্রিক জীবন কাহিনী, চরিত্র, মানব, জীবনের ঘাত – প্রতিঘাত মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণে সমৃদ্ধ হয়ে ও লেখকের জীবনাদর্শ ও জীবনের বোধ, দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত হয় তাকে উপন্যাস বলে।

উপন্যাস হচ্ছে একটি কাহিনি বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেটি বর্ণনা করে দির্ঘায়িত করা। উপন্যাস এর আক্ষরিক অর্থ যদি বলি, উপন্যাস হলো উপযুক্ত কিংবা বিশেষ রূপে স্থাপন করা। অর্থাৎ, গদ্য জগতে একটি কাহিনীকে দীর্ঘায়িত করে বিশেষ কৌশলে বর্ণনা করাকে উপন্যাস বলে। উপন্যাসে বিভিন্ন মানব-মানবীর জীবনচিত্র গুলো কল্পকাহিনী করে পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করে বিশেষ ভাবে গদ্য জগতে লিপিবদ্ধ হয়।

একটি সাবলীল ও সুন্দর উপন্যাসে থাকে কাহিনী, চরিত্র, বর্ণনা, সংলাপ, ঘটনা, ভাষা প্রভৃতি। এই সকল কিছু মিলেই একটি উপন্যাসের জন্ম হয়। আর উপন্যাস কিভাবে পাঠকদের কাছে জীবন্ত ভাবে ফুটিয়ে তুলতে হয় এবং মানব-মানবীর জীবনদর্শন কিভাবে আকর্ষনীয় করে তোলা যায় তার সবটুকু নির্ভর করে একজন ঔপন্যাসিকের উপর। যিনি উপন্যাস লিখেন তিনি মূলত ঔপন্যাসিক।

Also Read: করপাস ক্যালোসাম কাকে বলে?

উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য কি কি?

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্য সকল সাহিত্য শাখার মত উপন্যাসের নির্দিষ্ট কোন শিল্পরূপ নেই।

  1. উপন্যাস সাহিত্য সরকার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো একটি বিশিষ্ট জীবন-দর্শনের প্রকাশ ঘটানো।
  2. উপন্যাসের সমকালের জীবন দর্শন প্রকাশিত হয়।
  3. উপন্যাসের সমকাল জীবন দর্শনের সঙ্গে সামরিক জীবন দর্শন ও প্রকাশিত হয়।
  4. মানুষের জীবনের গল্প শোনার আগ্রহ থেকে উপন্যাসের সৃষ্টি হয়েছে, সুতরাং উপন্যাসে গল্পের আবহ থাকে।
  5. উপন্যাসে সাধারণত কোনো তত্ব বা আদর্শ প্রচারিত হয় না যদিও কখনো উপন্যাসে কোন তত্ত্ব বা আদর্শ প্রচারিত হয় তবে উপন্যাসের নিজস্ব শিল্পগুণ নষ্ট হয়।
  6. উপন্যাস আধুনিক জীবনের গদ্যকাব্য যা বাস্তব সমাজ জীবনের প্রতিফলন।
  7. উপন্যাসের মধ্য দিয়ে জীবন সম্পর্কে লেখকের এর একটা নিজস্ব ব্যাখ্যা প্রকাশিত হয়

Also Read: Adjective কাকে বলে?

সুতরাং আমরা বলতে পারি উপন্যাস একটি আধুনিক এবং সর্বজনপ্রিয় সাহিত্য শাখা। উপন্যাস বিভিন্ন জীবনের প্রতিফলনে নিজের কলেবর বৃদ্ধি করে চলেছে যাতে আছে বৈচিত্র অভিজ্ঞতালব্ধ জীবন এবং জীবনের নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। বাংলার আধুনিক সাহিত্য শাখা টি মানব জীবনের আলেখ্য কে সমৃদ্ধ করে তুলেছে।

মানব জীবনের বিভিন্ন রসের আঁধারকে লেখক ও কবীরা ব্যক্ত করে তাদের মনের একীভূত করে তৈরি করে সাহিত্য তারই এক নবীনতম প্রতিফলন ছিল বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টি হওয়া উপন্যাস গুলি। আধুনিক ভারতের অন্যতম এই ফসল উপন্যাস যে কারণে উপন্যাসে বারবার উঠে এসেছে মানুষের যুগ যন্ত্রণার কথা পারিবারিক টানাপোড়েন সমস্যা মুখর জাতির কথা মানুষের মানসিক উদ্ভ্রান্ত দিক গুলিও উপন্যাস থেকে বাদ যায়নি।

Also Read: করপাস ক্যালোসাম কাকে বলে?

উপন্যাসের উদ্ভাবন কিভাবে?

১৭৮৯ সালে মূলত রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ, ফরাসি বিপ্লব, গণতন্ত্রের চর্চা, আমেরিকার স্বাধীনতা, মানবধিকার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বিষয় কে ঘিরে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ কে নিয়ে সাহিত্য জগতে তৈরি হয় মূল পটভূমি। এভাবেই তাদের জীবনকে কেন্দ্র করে তাদের জীবনদর্শন, জীবনচর্চা সকল কিছুই ফুটিয়ে তোলা হয় গদ্য সাহিত্যে উপন্যাস হিসেবে। তবে বলা হয়ে থাকে উনিশ শতক উপন্যাস রচনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টাতে উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে তার নিজের অবস্থান করে নেয়। সাহিত্য জগতে জন্ম হয় উপন্যাস নামক এক নতুন শাখার।

Also Read: নক্ষত্র পতন কাকে বলে?

উপন্যাস এর শ্রেণিবিভাগ

বাংলা সাহিত্যে বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে উপন্যাস এর বেশ কয়েকটি শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। সেগুলো হলোঃ

  1. সামাজিক উপন্যাস।
  2. আঞ্চলিক উপন্যাস।
  3. ঐতিহাসিক উপন্যাস।
  4. কাব্যধর্মী উপন্যাস।
  5. রহস্যমূলক উপন্যাস।
  6. রোমাঞ্চমূলক উপন্যাস।
  7. গোয়েন্দামূলক উপন্যাস।
  8. হাস্যরসাত্মক উপন্যাস।
  9. রাজনৈতিক উপন্যাস।
  10. পত্রোপ্যানাস।
  11. মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস প্রভৃতি।

সামাজিক উপন্যাস

উপন্যাস শ্রেণিবিভাগের মধ্যে সামাজিক উপন্যাস হচ্ছে একটি বিশেষ শ্রেণিবিভাগ। এখানে সাধারণত সমাজের বিভিন্ন চিত্র, সমস্যা গুলো তুলে ধরা হয়।

আঞ্চলিক উপন্যাস

এ ধরণের উপন্যাসে মূলত একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলকে ঘিরে কাহিনী কিংবা চরিত্রের পটভূমি সাজানো হয়।

ঐতিহাসিক উপন্যাস

এই ঐতিহাসিক উপন্যাসে রচিত হয় ঐতিহাসিক কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে। অতীতের ইতিহাস, সংস্কৃতি সকল কিছু নিয়েই রচিত হয় ঐতিহাসিক উপন্যাস।

কাব্যধর্মী উপন্যাস

এই শ্রেণির উপন্যাস যিনি লিখেন অর্থাৎ, লেখকের জীবনদর্শন, চিন্তা-চেতনা প্রাধান্য পেয়ে রচিত হয়।

রহস্যমূলক উপন্যাস

এই রহস্যমূলক উপন্যাস রচিত হয় কিংবা সাজানো হয় বিভিন্ন রহস্য, ভয় কে ঘিরে। পাঠক এতে রহস্য উদঘাটনের জন্য ডুবে যায় লিখার গভীরে।

রোমাঞ্চমূলক উপন্যাস

রোমান্স অর্থ আমরা সকলেই জানি। এ ধরণের উপন্যাসে ফুটে উঠে কাল্পনিক কিংবা অবাস্তব, উচ্ছ্বাসে ভরপুর কল্পকাহিনী।

গোয়েন্দামূলক উপন্যাস

গোয়েন্দা এবং অপরাধ মিশ্রিত করে রচিত হয় এ ধরণের উপন্যাস। টানটান উত্তেজনায় যেনো পাঠকের মন বিভোর থাকে এ ধরণের উপন্যাসে।

হাস্যরসাত্মক উপন্যাস

এ ধরণের উপন্যাসে লেখক চরিত্রকে ঘিরে অসঙ্গতি বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে হাস্যরসাত্মকে পরিণত করে লিখে থাকেন।

রাজনৈতিক উপন্যাস

এই উপন্যাসে রচিত হয় রাজনৈতিকমূলক পটভূমি। রাজনৈতিক ঘটনাবলি, মতাদর্শ, ক্ষোভ-বিক্ষোভ সকল কিছুই থাকে এই শ্রেণির উপন্যাসে।

পত্রোপ্যানাস

এ ধরণের উপন্যাস বেশ আগ্রহজনক হয়ে থাকে। এতে রচিত হয় বিভিন্ন পত্রকে ঘিরে লিখা উপন্যাস। পত্র আকারে রচনা করা হয় এই উপন্যাস।

মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস

মনব মনের বিভিন্ন জটিল দিক গুলো ফুটিয়ে তোলা হয় এক ভিন্ন আঙ্গিকে এই উপন্যাসে। মানব মনের ভাবনা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, ঘাত-সংঘাত সকল কিছুকে কেন্দ্র করেই রচনা করা হয় এই উপন্যাস।

উপন্যাসের উপাদান কয়টি ও কি কি?

একটি উপন্যাস তৈরীর ক্ষেত্রে প্রধান ৫টি উপাদানের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

  1. ঘটনা
  2. চরিত্র
  3. সংলাপ
  4. ভাষা এবং
  5. ঔপন্যাসিকের জীবন দর্শন।

তো আজকে আমরা দেখলাম যে উপন্যাস কাকে বলে,uponnash kake bole,উপন্যাসের উপাদান কয়টি ও কি কি? এবং আরো অনেক বিস্তারিত বিষয়। যদি পোস্ট ভালো লাগে তাহলে অব্যশয়, আমাদের বাকি পোস্ট গুলো ভিসিট করতে ভুলবেন না!

Leave a Comment