বনভোজনের ব্যাপার নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর [নতুন]

বনভোজনের ব্যাপার নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর: আমরা আজকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। এরকম পোস্ট আমদের মতো কেউ করতে পারবে না। আমরা হলাম official-result.com. তাই আমাদের ওয়েবসাইটকে কখনো ভুলে জাবেন না। 😉😉

বনভোজনের ব্যাপার নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর

বনভোজনের ব্যাপার নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর

বিষয়সংক্ষেপ  

হাবুল সেন, টেনিদা বনভােজনের খাদ্যতালিকা তৈরি করছিল। হাবুলের পােলাও, ডিমের ডালনা, মাছ-মাংসের কোর্মা প্রভৃতির কথা বলার মাঝখানে প্যালা আলু ভাজা, শুক্তো, বাটি-চচ্চড়ি, কুমড়াের ছক্কার মতাে দেশি খাদ্যের কথা বলায় টেনিদা তাদের উল্লুক প্রভৃতি বলে গালিগালাজ করে। টেনিদা রেগে গিয়ে চলে যাওয়ার উপক্রম করায় হাবুল সেন, প্যালা তাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে। এরপর বিরিয়ানি, কোর্মা, কোপ্তা প্রভৃতির একটি লিস্ট বানানাে হলেও দশ টাকা ছ-আনা চাঁদা ওঠায় কিছু আইটেম বাদ দিয়ে খিচুড়ি, আলুভাজা ও অন্যান্যর একটি লিস্ট বানানাে হয়। টেনিদাকে খুশি করতে প্যালা ডিমের একটি আইটেম বা পদ বাড়াতে বলে। তবে রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব পড়ে প্যালার ওপর। সে ভন্টাকে কিছু ভেট দিয়ে তার বাড়ি থেকে ডিম সংগ্রহ করতে গেলেও রক্ত ঝরিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। সবশেষে মাদ্রাজি ডিম কেনা হয়।

    পরদিন বনভােজনের উদ্দেশ্যে শ্যামবাজার স্টেশন থেকে মার্টিন রেলে চড়ে তারা চারজন রওনা দেয়। মাঝে টেনিদা লেডিকেনির স্বাদ নেওয়ার নামে পুরাে হাঁড়িটিই একা শেষ করে। এরপর স্টেশন থেকে এঁটেল মাটির পিচ্ছিল কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে ক্যাবলার মামারবাড়ির কাছে বাগানবাড়িতে পৌছােতে গিয়ে, ক্যাবলা ছাড়া বাকি তিনজনই মাটিতে আছাড় খায় এবং ডিমের পুঁটলি, আমের আচার ও রসগােল্লা মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। পােনা মাছ, চাল, ডাল, আলু নিয়ে তারা পৌছায় সুপুরি ও নারকেলের বাগান পরিবেষ্টিত স্থানটিতে। টেনিদা তার স্বভাবমতাে নিজে কিছু না-করে হাবুলকে ইট, প্যালা ও ক্যাবলাকে কাঠ কুড়িয়ে আনার নির্দেশ দেয় এবং নিজে জিনিসপত্রগুলির পাহারায় নিযুক্ত থাকে। প্যালার ওপরে মাছের কালিয়া রাধার দায়িত্ব পড়ে। সে কড়াইতে তেল দিয়েই মাছ ছেড়ে দিলে তা মাছের হালুয়ায় পরিণত হয়। টেনিদার হাত থেকে বাঁচার জন্য প্যালা সেখান থেকে দৌড় মারে এবং খিচুড়ির লিস্ট থেকে তার নাম কাটা যায়।
    কিছুক্ষণ পরে হাবুল ও ক্যাবলা কাঠ সংগ্রহ করতে সেখানে এসে উপস্থিত হয়। তারা তিনজনই তখন অত্যন্ত ক্ষুধার্ত ছিল। এমনসময় তারা সেই বাগানে পাকা জলপাই দেখতে পেয়ে তা পেট ভরে খায়। ঘণ্টাখানেক পরে খিচুড়ির আশায় তারা প্রত্যাবর্তন করে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দ্যাখে। টেনিদা সেই নারকেল গাছটায় হেলান দিয়ে ঘুমােচ্ছে আর বলছে—“দে ক্যাবলা, পিঠটা আর একটু ভালাে করে চুলকে দে।” কিন্তু ক্যাবলা নয়, একটি গােদা বানর তার পিঠ চুলকে দিচ্ছিল এবং আরাে চার-পাঁচটি টেনিদার চারিদিকে বসেছিল। প্যালারা তিনজনে তারস্বরে চিৎকার করে টেনিদাকে বাঁদরের দলের উপস্থিতির কথা জানালে টেনিদার ঘুম ভাঙে এবং বাঁদরগুলি চাল, ডাল, আলুর পুঁটলি নিয়ে কাঁঠাল গাছের মাথায় উঠে পড়ে এবং তাদের দেখিয়ে দেখিয়ে খেতে থাকে। শেষে প্যালার মুখে বাগানের একটি গাছে পাকা জলপাই-এর কথা শুনে টেনিদা লাফিয়ে বাগানের দিকে ছুয়ে যায়। তার মতে, “বনে ফলভােজন—সেইটেই তাে আসল বনভােজন।”

নামকরণ

সাহিত্যে নামকরণ এমন একটি বিষয়, যার মধ্য দিয়ে পাঠক বিষয়ের গভীরে প্রবেশের পূর্বে বিষয়ের ইঙ্গিত পেয়ে যায়। বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত গল্পকার নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘টেনিদাসমগ্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘আলােচ্য গল্পটির নামকরণ বনভােজনের ব্যাপার’ খুবই শিল্পসম্মত। বনভােজন হল- একটি খােলা জায়গায় সারাদিন ধরে আনন্দ-হুল্লোড় করা আর নিজেদের ইচ্ছা ও সামর্থ্য অনুসারে খাবারের আয়ােজন করা। এই কাজে থাকে নানান আয়ােজন এবং অনুষ্ঠান। সব কিছুতেই লুকিয়ে থাকে একটি চাপা আনন্দ। আর তা শেষ হয় খাওয়া-দাওয়ার মধ্য দিয়ে। গল্পের প্রথমেই গল্পকার এখানে বনভােজনের জন্য একটি দলের পরিকল্পনাকে দেখিয়েছেন। তারপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন ঘটনায় তাদের আয়ােজন প্রায় শেষ হয়েছে।

    বনভােজন যাত্রার প্রথম পর্ব নির্বিঘ্নে কাটলেও গােল বাধে কাঁচা রাস্তায় বৃষ্টিভেজা কাদায় হাঁটার সময়। আছাড় খাওয়ার সূচনা ঘটে, হাবুল সেনের মাধ্যমে। একে একে প্যালা ও টেনিদাও কাদাতে পড়ে যায়। এরপর কোনােক্রমে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছােনাে আর সেখানে গিয়ে সময়ান্তরে অবশিষ্ট ভােগান্তি একে একে জুটতে থাকে। মাছের কালিয়া মাছের হালুয়াতে রূপান্তরিত হয় খিচুড়ি টেনিদার ঘুমের জন্য হয়ে যায় বানরদের মহাভােজ। অবশেষে বনভােজন হয়। ফলভােজনের নামান্তর। গল্পের শেষে পিকনিকের সাধারণ প্রাপ্তিও আর তাদের কপালে জোটেনা। পিকনিকের মতাে একটি ঘটনা হয়ে দাঁড়ায় ‘বনভােজনের ব্যাপার, যা সবদিক থেকে হাস্যরসাত্মক ও ব্যাঙ্গাত্মক হয়ে ওঠে। সমগ্র গল্পটির মধ্যে দেখা যাচ্ছে বনভােজনের প্রস্তুতি ও তার চরম পরিণতি। সব মিলিয়ে বলা যায়, গল্পের নামকরণটি অবশ্যই সার্থক হয়েছে।

হাতে কলমে 

১.১ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়  বাংলা সাহিত্যের কোন বিখ্যাত চরিত্রের সৃষ্টিকর্তা?

উঃ টেনিদা 

১.২ তাঁর লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখো। 

উঃ ‘উপনিবেশ’ ও ‘পদসঞ্চার’

২ নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও : 

২.১ বনভােজনের উদ্যোগ কাদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল ? 

উঃ  বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছােটোগল্পকার ও ঔপন্যাসিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘বনভােজনের ব্যাপার’ গল্পে টেনিদা, ক্যাবলা, হাবুল ও প্যালার মধ্যে বনভােজনের উদ্যোগ দেখা গিয়েছিল। 

২.২ বনভােজনের জায়গা কোথায় ঠিক হয়েছিল ? 

উঃ  বনভােজনের জায়গা ঠিক হয়েছিল বাগুইআটি ছাড়িয়ে আরও চারটে স্টেশন পরে ক্যাবলার মামার বাড়ির কাছে এক বাগানবাড়িতে। 

২.৩ বনভােজনের জায়গায় কীভাবে যাওয়া যাবে ? 

উঃ  বনভােজনের জায়গায় যেতে প্রথমে শ্যামবাজার থেকে মার্টিনের রেলে চাপতে হবে। ওই ট্রেনে করে বাগুইআটি ছাড়িয়ে আরও চারটে স্টেশন পার করে নামতে হবে। সেখান থেকে নেমে প্রায় মাইলখানেক রাস্তা হেঁটে গেলে বনভােজনের জায়গায় পৌঁছনাে যাবে। 

২.৪ রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব কে নিয়েছিল ?

উঃ  রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব প্যালা নিয়েছিল। 

২.৫ বনভােজনের বেশিরভাগ সামগ্রী কারা সাবাড় করেছিল ?

উঃ 
বনভােজনের বেশিরভাগ সামগ্রী বানরের দল সাবাড় করেছিল। 

২.৬ কোন খাবারের কারণে বনভােজন ফলভােজনে পরিণত হল ?

উঃ  বাগানের একটি গাছে পেকে থাকা জলপাই খাওয়ার ফলে বনভােজন পরিণত হয় ফলভােজনে।

৩ নীচের শব্দগুলির সন্ধি বিচ্ছেদ করাে : মােগলাই, রান্না, বৃষ্টি, পরীক্ষা, আবিষ্কার। 

» মােগলাই = মােগল+ আই।

» রান্না =রাধ + না। 

»  বৃষ্টি = বৃষ + তি।

» পরীক্ষা = পরি + ঈক্ষা। 

»  আবিষ্কার = আবিঃ + কার। 

৪ নীচের শব্দগুলির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিচার করাে : বিচ্ছিরি, প্ল্যান-ট্যান, লিস্টি, ভদ্দর, ইস্টুপিড। 

»  বিচ্ছিরি = বিশ্রী > বিচ্ছিরি—সমীভবন। 

»  প্ল্যান-ট্যান = অনুকার শব্দ। 

»  লিস্ট > লিস্টি—ধ্বন্যাগম (‘ই’-স্বরধ্বনির আগমন)।

» ভদ্দর = ভদ্র > ভদ্দর—সমীভবন। 

» ইস্টুপিড = স্টুপিড > ইস্টুপিড—আদি স্বরাগম (‘ই’ ধ্বনির)।

৫ নীচের বাক্যগুলি প্রত্যেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি খুঁজে নিয়ে লেখাে : 

৫.১। আর সে গাট্টা, ঠাট্টার জিনিস নয়-জুতসই লাগলে স্রেফ গালপাট্টা উড়ে যাবে। 

উঃ  এই বাক্যে ‘ট্টা’ বর্ণটি একাধিকবার বাক্যে প্রযুক্ত হয়েছে। একে বৃত্তানুপ্রাস অলংকার বলে, যার প্রয়ােগ এখানে লক্ষণীয়। 

৫.২ দ্রাক্ষাফল অতিশয় খাট্টা।

উঃ 
‘খাট্টা’ শব্দটি হিন্দি শব্দ, যার প্রয়ােগ আলােচ্য বাক্যে লক্ষ করা যায়। একইসঙ্গে দুটি তৎসম শব্দ প্রয়ােগ করার ফলে বাংলা বাক্যে শব্দ প্রয়ােগের বৈচিত্র্য এসেছে। 

৫.৩। আহা-হা চৈইত্যা যাইত্যাছ কেন ? 

উঃ উদ্ধৃত বাক্যের ‘চৈইত্যা’ ও ‘যাইত্যাছ’ শব্দবন্ধে অপিনিহিতির প্রয়ােগ লক্ষ করা যায়। এই ধরনের বাক্য বঙ্গালি উপভাষায় বেশি প্রযুক্ত হতে দেখা যায়। 

৫.৪। এক চড়ে গালের বােম্বা উড়িয়ে দেব।

উঃ 
এখানে ‘বােম্বা’ নামক প্রাদেশিক বা কথ্য ভাষার প্রয়ােগ দেখা যায়। এই বিশেষ লঘু শব্দটিকে আমরা অনেক সময় ‘রকের ভাষা’ বা ‘ছেলেছােকড়ার ভাষা বলে থাকি।

৬ ব্যাসবাক্য-সহ সমাসের নাম লেখাে : বনভােজন, দলপতি, বেরসিক, দ্রাক্ষাফল, রেলগাড়ি। 

» বনভােজন = বনে ভােজন-অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস। 

» দলপতি = দলের পতি-সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস।

» বেরসিক = বে (নয়) রসিক– নতৎপুরুষ সমাস। 

» দ্রাক্ষাফল = দ্রাক্ষা নামক ফল—মধ্যপদলােপী কর্মধারয় সমাস। 

»  রেলগাড়ি = রেল বাহিত গাড়ি—মধ্যপদলােপী কর্মধারয় সমাস।

৭ নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করা : 

৭.১ লাফিয়ে উঠে টেনিদা বাগানের দিকে ছুটল। (জটিল বাক্যে) 

উঃ লাফিয়ে উঠে টেনিদা যেদিকে ছুটল সেদিকে বাগান। 

৭.২। চোখের পলকে বানরগুলাে গাছের মাথায়। (জটিল বাক্যে) ) 

উঃ যেই-না চোখের পলক ফেলা, অমনি বানরগুলাে গাছের মাথায়। 

৭.৩ দুপুর বেলায় আসিস। বাবা-মেজদা অফিসে যাওয়ার পরে। (একটি সরল বাক্যে)

উঃ  দুপুর বেলায় বাবা-মেজদা অফিসে যাওয়ার পরে আসিস। 

৭.৪ ইচ্ছে হয় নিজে বের করে নাও। (জটিল বাক্যে)

উঃ 
যদি ইচ্ছে হয় তাহলে নিজে বের করে নাও। 

৭.৫ টেনিদা আর বলতে দিলে না। গাঁক গাঁক করে চেঁচিয়ে উঠল। (একটি সরল বাক্যে) 

উঃ টেনিদা আর বলতে না-দিয়ে গাঁক গাঁক করে চেঁচিয়ে উঠল।

৮ নীচের শব্দগুলির সমার্থক প্রবচনগুলি খুঁজে বের করাে এবং তা দিয়ে বাক্যরচনা করাে : চুরি, নষ্ট হওয়া, পালানাে, গােলমাল করে ফেলা, লােভ দেওয়া, চুপ থাকা। 

» চুরি—(হাত সাফাই করা) = হাবুল দিদিমার ঘর থেকে আমের আচার হাতসাফাই করেছিল। ) 

» নষ্ট হওয়া –(বারােটা বাজা) = মহিম তার জল-খাবার নিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ায় জলখাবারের বারােটা বাজল। 

» পালানাে–(হাওয়া হওয়া)= কালীবাবুর বাগানের আম চুরি করে ধরা পড়ার ভয়ে বলাই সেই রাত্রে বাড়ি থেকে হাওয়া হল।

» গােলমাল করে ফেলা—(তালগােল পাকানাে)= অর্পিতা টিভি দেখতে দেখতে অঙ্ক করতে গিয়ে সব তালগােল পাকিয়ে ফেলেছে। 

» লােভ দেওয়া —(নজর দেওয়া) = অপরের সম্পত্তিতে নজর দেওয়া ভালাে নয়।

» চুপ থাকা—(মুখে কুলুপ আঁটা) = মার খাওয়ার ভয়ে ঈশান তার দাদার সামনে মুখে কুলুপ এটে রইল।

৯ টীকা লেখাে : কলম্বাস, লেডিকেনি, বিরিয়ানি, ইউরেকা।

কলম্বাস: ক্রিস্টোফার কলম্বাস পঞ্চদশ শতকে উত্তর আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর জন্ম ১৪৩৬ খ্রিস্টাব্দে ইটালির জানােয়ায়। তিনি ছিলেন তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন, মেধাবী মানুষ। তিনি ইতিহাস, ভূগােল, জ্যামিতি ও জ্যোতিষ শাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন। নৌবিভাগে চাকরি নিয়ে স্পেনের রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলার সাহায্যে ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতে আসার জন্য যাত্রা শুরু করেন। তিনি ভারতবর্ষে আসতে গিয়ে আমেরিকা মহাদেশের মধ্যভাগে পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে জাহাজ নিয়ে পৌছেছিলেন এবং সেখানকার অধিবাসীদের নাম দিয়েছিলেন রেড ইন্ডিয়ান। ) 

লেডিকেনি : ছােটো পানতুয়া বা পানতুয়ার মতাে মিঠাই-বিশেষ। কথিত আছে, লর্ড ক্যানিং তাঁর স্ত্রীকে খুশি করার জন্য কলকাতার প্রখ্যাত ময়রা নবীনচন্দ্রকে মিষ্টান্ন তৈরি করতে বললে, তিনি এমন এক মিষ্টান্ন উদ্ভাবন করেন। লেডি ক্যানিং এই জাতীয় মিষ্টি খুবই পছন্দ করতেন। তাই তাঁর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়। 

বিরিয়ানি : মাংস বা মাছ সহযােগে প্রস্তুত পােলাও জাতীয় খাবার-বিশেষ। সুগন্ধি চাল, মাছ বা মাংস, গরম মশলা (দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, জাইফল, জয়িত্রী, কাবাব চিনি), ঘি, তেজপাতা, নুন, চিনি, গােলাপ জল, হলুদগুঁড়াে, লঙ্কাগুঁড়াে, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, কাঁচালঙ্কা, সাদা তেল সহযােগে এই খাদ্য প্রস্তুত করা হয়। এটি প্রধানত মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত হলেও বর্তমানে সকল সম্প্রদায়ের মধ্যেই বিশেষ প্রিয় খাদ্যরূপে মর্যাদা পেয়েছে। কথিত আছে, সুলতান রাজিয়া তাঁর সেনাদের জন্য এই খাদ্যের প্রচলন করেন । 

ইউরেকা : শব্দটি গ্রিক ‘heureka’ থেকে এসেছে। যার অর্থ—“আমি খুঁজে পেয়েছি। ইংরেজিতে I have found it? Oxford English Dictionary-60 Eureka শব্দের অর্থ করা হয়েছে— ‘Used to show pleasure at having found 5th, especially the answer to a problem’। সাধারণত কোনাে বিশেষ কিছু হঠাৎ আবিষ্কৃত হলে, আমরা এই শব্দটি প্রয়ােগ করে থাকি। আর্কিমিডিস একবার একটি চৌবাচ্চায় নামার সঙ্গে সঙ্গে তার কিছুটা জল উপচে পড়ে যায়, তখন তিনি ‘ইউরেকা’ বলে চেঁচিয়ে ওঠেন, যার অর্থ হল ‘পেয়েছি। পরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শব্দভাণ্ডারে এই শব্দটি বহুলভাবে প্রচলিত হয়। 

১০ নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত ও যথাযথ উত্তর দাও : 

১০.১ বনভােজনের প্রথম তালিকায় কী কী খাদ্যের উল্লেখ ছিল ? তা বাতিল হল কেন ?

উঃ  বিখ্যাত ছােটোগল্পকার নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত। ‘বনভােজনের ব্যাপার’ শীর্ষক ছােটোগল্পে উদ্ধৃত বনভােজনের প্রথম তালিকায় বিরিয়ানি, পােলাও, কোর্মা, কোপ্তা, কাবাব (দু-রকম), মাছের চপ প্রভৃতি খাদ্যের উল্লেখ ছিল।

» প্রথম তালিকায় যেমন খাদ্যের উল্লেখ করা হয়েছিল, তার খরচ নেহাত কম নয়। তারপর ক্যাবলা জানায় বাবুর্চি, চাকর, মােটগাড়ির জন্য আরও দু-শাে টাকা খরচা হবে। অথচ, তাদের চারজনের চাঁদাই উঠেছে। মাত্র দশ টাকা ছ-আনা। সুতরাং, ওসবের খরচ যােগাড় করা অসম্ভব। মূলত খরচা কমাতেই বনভােজনের খাদ্যের প্রথম তালিকা বাতিল করতে হল।

১০.২ বনভােজনের দ্বিতীয় তালিকায় কী কী খাদ্যের উল্লেখ ছিল এবং কে, কী কাজের দায়িত্ব নিয়েছিল ? 

উঃ বনভােজনের দ্বিতীয় তালিকায় খিচুড়ি, আলুভাজা, পােনা মাছের কালিয়া, আমের আচার, রসগােল্লা, ও লেডিকেনির উল্লেখ ছিল। এছাড়াও ডিমের ডালনা লিস্টে ছিল। 

» প্যালা রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব নিয়েছিল । ক্যাবলা নিয়েছিল আলু ভাজার দায়িত্ব, প্যালা নিয়েছিল পােনা মাছের কালিয়া রাধার দায়িত্ব এবং হাবুল দিদিমার ঘর থেকে আমের আচার সংগ্রহ করার দায়িত্ব নিয়েছিল। 

১০.৩ প্যালার রাজহাঁসের ডিম আনার ঘটনাটির বর্ণনা দাও। 

উঃ  প্যালা রাজহাঁসের ডিম জোগাড় করার জন্য ভন্টাকে ধরেছিল। কারণ কেবলমাত্র ভন্টাদের বাড়িতেই কয়েকটি রাজহাঁস ছিল। ভন্টা দু-আনার পাঁঠার ঘুগনি ও ডজনখানেক ফুলুরি খাওয়ার পরে জানিয়েছিল যে, সে ডিম দিতে পারে কিন্তু প্যালাকে তার নিজের হাতে বাক্স থেকে বের করে নিতে হবে। ভন্টা আইসক্রিমের পরিবর্তেও প্যালাকে ময়লা ঘেঁটে রাজহাঁসের ডিম বের করে দিতে রাজি হল না। অগত্যা প্যালাকে নিজের হাতে ডিম বের করার সিদ্ধান্ত নিতে হল। পূর্বের কথামতাে দুপুরবেলাতে সে এল। উঠোনের একপাশে কাঠের বাক্সের মধ্যে সার-সার খুপরি। তার মধ্যে দুটি হাঁস ডিমে তা দিচ্ছে। কাছে যেতেই তারা ফাস-ফাস করে উঠল। ময়লা ও বিশ্রী গন্ধকে উপেক্ষা করে, সাহসে ভর করে হাত ঢােকানাের সঙ্গে সঙ্গে একটা রাজহাঁস ঘটাং করে প্যালার হাতটি কামড়ে ধরল। রাজহাঁসের কামড়ের ভীষণ কষ্টে প্যালা চিৎকার করে উঠল। প্যালার গলার আওয়াজ পেয়ে ভন্টার মা জেগে উঠেছিল। ফলে ভয়ে হ্যাচকা টানে নিজের হাত ছাড়িয়ে প্যালা রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ােল। কিন্তু তখন তার হাত থেকে দরদর করে রক্ত পড়ছে। এইভাবে রাজহাঁসের ডিম আনতে গিয়ে রক্ত ঝরিয়ে ব্যর্থ মনােরথ হয়ে প্যালাকে ফিরতে হল। 

১০.৪ ট্রেন থেকে নেমে হাঁটতে গিয়ে তাদের কী কী বিপদ ঘটেছিল ?

উঃ গল্পকার নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘বনভােজনের ব্যাপার’ গল্পে বনভােজনে যাওয়ার পথে ট্রেন থেকে নেমে বনভােজনের জিনিসপত্র নিয়ে হাবুল, ক্যাবলা, প্যালা ও টেনিদা এগােতে লাগল। তিন পা যেতে -যেতেই হাবুল আছাড় খেল ও তার হাতের ডিমের পুঁটলি কুঁকড়ে গিয়ে হলুদ রস পড়তে লাগল। এর পরেপরেই প্যালা ও টেনিদার মাটিতে পড়ে গিয়ে কাদামাখা অবস্থা হল এবং আমের আচার, রসগােল্লারা মাটিতে লুটোপুটি খেল। অবশিষ্ট রইল শুধু চাল-ডালের পুঁটলিটি ও পেপানামাছগুলি।

    আগেরদিন বৃষ্টি হয়ে গ্রামের রাস্তা পিছল হয়ে যাওয়ায় তাদের বনভােজনের অধিকাংশ দ্রব্যই মাটিতে পড়ে অব্যবহার্য সামগ্রীতে পরিণত হয়েছিল এবং তারা হাঁটতে গিয়ে নিজেরা ও তাদের পরিধেয় বস্ত্রও কর্দমাক্ত হয়েছিল। 

১০.৫ মাছের কালিয়ার তিনটে বেজে গেল’ মাছের কালিয়া সম্পর্কে এরকম বলার কারণ কী ? 

উঃ  ‘বনভােজনের ব্যাপার গল্পের উদ্ধৃত প্রশ্নে মাছের কালিয়া রাধার দায়িত্ব ছিল প্যালার। টেনিদা লিস্ট বের করে প্যালাকে সর্বপ্রথম মাছের কালিয়া রাঁধার নির্দেশ দেয়। ক্যাবলার মা মাছ কেটে লবণ ও অন্যান্য জিনিস মাখিয়ে দিয়েছিলেন। প্যালা কড়াইতে তেল চাপিয়ে সঙ্গে সঙ্গে কাঁচা তেলে মাছ ঢেলে দেওয়ায় কড়াই ফেনায় পরিপূর্ণ হয়ে অতগুলি মাছ একসঙ্গে তালগােল পাকিয়ে যায়। মাছের কালিয়া পরিণত হয় মাছের হালুয়াতে। আসলে কাঁচা তেলে মাছ দেওয়ায় মাছের এই অবস্থা হয়েছিল। এই জন্যই ক্যাবলা ডিম, আমের আচার ও রসগােল্লার পরিণতির সঙ্গে তুলনা করে মাছের কালিয়ার সম্পর্কে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেছিল। 

১১ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে : 

১১.১ এই গল্পটির নাম ‘বনভােজন’ না-হয়ে বনভােজনের ব্যাপার হল কেন ?

উঃ  কবিতা, নাটক, কথাসাহিত্য-সহ সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। নামকরণের মধ্য দিয়েই সর্বপ্রথম আমরা পাঠ্য বিষয়ের কাহিনি ও তার গভীরে প্রবেশ করতে চেষ্টা করি। আলােচ্য ‘বনভােজনের ব্যাপার’ গল্পটি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের এক অনন্য সৃষ্টি।

    ‘বনভােজন’ হল ‘চড়ুইভাতি’ এবং ‘ব্যাপার’ বলতে আভিধানিক অর্থে ঘটনা, অনুষ্ঠান বা বিষয়কে বােঝানাে হয়। আলােচ্য গল্পে হাবুল, টেনিদা, প্যালা ও ক্যাবলা একটি বনভােজনের আয়ােজন করেছিল। অর্থের অপ্রতুলতার কারণে বনভােজনের খাদ্যের তালিকার অনেকটাই তাদেরকে হেঁটে ফেলতে হয়েছিল। যদিও পরে নির্বাচিত খাদ্য তালিকার ডিমের কালিয়া, রসগােল্লা এমনকি আমের আচার পর্যন্ত তাদের কপালে জোটেনি। চাল, ডাল, আলু ইত্যাদি খিচুড়ির প্রাথমিক উপাদানও বানরদলের সংগ্রহে চলে যায়। শেষে জলপাই খেয়ে তাদের বনভােজনকে ফলভােজনে পরিণত করতে হয়। আসলে গল্পকার আলােচ্য গল্পটিকে রসভােগ্য করে তুলেছেন তার কাহিনি বর্ণনার অপূর্ব গুণে। যেহেতু বনভােজনের মূল খাওয়াদাওয়া বা বিষয়টি শেষপর্যন্ত বনভােজন হয়ে রইল না, তা বনভােজনের একটি উপাদেয় গল্প বা ঘটনা হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে তাই কাহিনির নিপুণ বয়ন ও বিষয়কে লক্ষ রেখে বলা যায়, গল্পটির নামকরণ ‘বনভােজন’ না হওয়ার ফলে ‘বনভােজনের ব্যাপার হওয়ার ফলে সার্থক হয়েছে। 

১১.২। এই গল্পে কটি চরিত্রের সঙ্গে তােমার দেখা হল ? প্রত্যেকটি চরিত্র নিয়ে আলােচনা করাে।

উঃ  কথাসাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘বনভােজনের ব্যাপার’ নামাঙ্কিত গল্পটিতে হাবুল সেন, ক্যাবলা, টেনিদা, প্যালা প্রভৃতি চরিত্রের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়।

 » হাবুল সেন : নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সৃষ্ট হাবুল সেন চরিত্রটি ঢাকাই বাঙাল। তার কথাবার্তার মধ্যে বাঙাল সদৃশ টান ও বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। সে পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের অবস্থান বদলায় এবং সমস্ত বিষয়কে স্বাভাবিকভাবে, মানানসই রূপে গ্রহণ করার প্রবণতাও তার মধ্যে লক্ষণীয়। গল্পের প্রথমে দেখা যায়, হাবুল বনভােজনের খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করার সময় টেনিদার মনের মতাে খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করে। একজন প্রকৃত খাদ্যরসিকের মতাে ডিমের ডালনা, রুই মাছের কালিয়া, মাংসের কোর্মা, বিরিয়ানি, পােলাও তারও প্রিয় পদ। আবার প্যালা রাজহাঁসের ডিম আনার নাম করে সাধারণ ডিম আনলে টেনিদা রেগে যায়, সেই-ই সহমর্মিতাবশত তাকে আশ্বস্ত করে বলে যে, প্যালা ডিম এনেছে সেটিই বড়াে কথা। বনভােজনের প্রস্তুতিতে তার আগ্রহ কম নয়। হাবুল মােট চাঁদার এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ, চার টাকা নিজে দিয়েছে। সবমিলিয়ে চরিত্রটি কাহিনির উপযােগী হয়ে উঠেছে।

 » কাবলা: ক্যাবলা একটি মজার চরিত্র। সে প্রত্যেকের কথার পর বা একটি করে ঘটনার পরে নিজের মন্তব্য পেশ করে। এটি তার চরিত্রের রসবােধের পরিচয় বহন করে। সে ছােটোবেলায় পশ্চিমে ছিল, তাই তার কথার মধ্যে দুই-একটি হিন্দি শব্দ মাঝে মাঝে বেরিয়ে পড়ে। ক্যাবলার চলাফেরা, কথাবার্তার মধ্যে একটি কৌতুকের লক্ষণ আছে। মাটির পিছল রাস্তায় বাগানবাড়িতে পৌঁছােনাের সময় হাবুল। ডিমের পুঁটলি-সহ আছাড় খেলে সে বলে—“ডিমের ডালনার বারােটা বেজে গেল। প্যালা আমের আচার। নিয়ে পড়ে গেলে সে মন্তব্য করে—‘আমের আচারের একটা বেজে গেল। সে জানে, সব লেডিকেনি টেনিদা একাই শেষ করবে। তাই বুদ্ধি করে খিচুড়ি রান্নার কাজ ক্যাবলাই টেনিদার কাঁধে চাপিয়ে দেয়। 

» টেনিদা : কথাসাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি টেনিদা চরিত্রটি। টেনিদা আসলে সব জায়গায় দাদাগিরি দেখাতে চায়। তার আচরণের মধ্যে একটি ভারিক্কি ভাব বর্তমান। তার কাছে টাকা থাকলেও সে মুর্গ মুসল্লম, বিরিয়ানি খেতে পছন্দ করে। মাছের কালিয়া, মাংসের কোর্মা খাওয়ার কথা বলে অথচ, চাঁদার সময় ছয় আনা দেয়। সে রকমারি রসভােগ্য খাদ্য খেতে চায়। অথচ সেই খাদ্য সংগ্রহ করার দায়িত্ব দেয় অপরের ঘাড়ে। স্টেশন থেকে নেমে সঙ্গে নেওয়া খাদ্যের মধ্যে সবচেয়ে হালকা জিনিসটিই সে বহন করে। ট্রেনে চেপে লেডিকেনিগুলি তিনি একাই শেষ করে। অন্য কেউ পড়ে গিয়ে খাবার নষ্ট করলে তাকে সে শাস্তি দেয় কিন্তু নিজে পিছলে পড়ে রসগােল্লা নষ্ট করলে তখন চুপ থাকে। টেনিদা চরিত্রটি আমাদের বাংলা সাহিত্যের শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সৃষ্ট ‘নতুনদা’ চরিত্রটিকে স্মরণ করায়।

 » প্যালা : প্যালা পুরাে কাহিনির বক্তা। সে অত্যন্ত সাধারণ, সাদাসিধে প্রকৃতির ছেলে। বনভােজনের খাদ্যতালিকা প্রস্তুতির সময় প্যালা কিছু সাধারণ খাদ্যের কথা জানায়—আলুভাজা, শুক্তো, বাটিচচ্চড়ি। প্যালা মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষ। টেনিদাকে খুশি করার জন্য ডিমের একটি পদ সে-ই বাড়িয়ে দেয়। রাজহাঁসের ডিম জোগাড় করার দায়িত্বও সে নেয়। আসলে তার মধ্যে বাস্তববুদ্ধির পরিচয় মেলে। আবার টেনিদা তাকে শাস্তি দিলে সে মুখ বুজে তা সহ্য করে। সে এমনই নিরীহ। টেনিদার মুখের ওপর সে বড়াে একটা কথা বলে না। টেনিদার কথা থেকে জানা যায়, সে একটু পেটরােগা বলে প্রায় সারা বছরই শিঙিমাছের ঝােল-ভাত খায়। » অন্যান্য চরিত্র: এছাড়াও গল্পটিতে পার্শ্বচরিত্র হিসেবে ভন্টা ও ভন্টার মায়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। 

১১.৩ এ গল্পটিতে হাস্যরস সৃষ্টির জন্য ভাষার দিক থেকে লেখক নানারকম কৌশল অবলম্বন করেছেন। কী কী কৌশল তুমি খেয়াল করেছ লেখাে। 

উঃ  নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘বনভােজনের ব্যাপার। গল্পে হাস্যরস হল প্রধান অলংকার। হাস্যরস সৃষ্টিতে তাঁর দক্ষতা সত্যই প্রশংসনীয়। চরিত্র সৃষ্টি, কাহিনির বুনন ছাড়াও ভাষাগতভাবে তিনি বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করেছেন। যেমন— 

(ক) ভাষার মধ্যে আরবি, ফারসি, ইংরেজি প্রভৃতি বিদেশি শব্দের প্রয়ােগ ঘটিয়েছেন। যেমন— বিরিয়ানি, মশলা, দোসা, বাবুর্চি, কাবাব ইত্যাদি। 

(খ) বিভিন্ন চরিত্রের সংলাপে কথ্যভাষার প্রয়ােগ লক্ষ করা যায়। যেমন—ময়লা আর কী বদখত গন্ধ! ‘চোঁচা দৌড়’, ‘হ্যাচকা টান’, ‘ফেরেববাজ’ ইত্যাদি 

(গ) হাবুল সেন চরিত্রের সংলাপে বঙ্গালি উপভাষার প্রয়ােগ দেখা যায়। যেমন—“আহা-হা চৈইত্যা যাইত্যাছ কেন?’ ‘পােলাপানে কয়’ ইত্যাদি। 

(ঘ) ধ্বনিগত দিক থেকে অপিনিহিতি, বর্ণবিপর্যয়, স্বরাগম প্রভৃতির প্রয়ােগ লক্ষ করা যায়। যেমন— ‘ইস্টুপিড’, ‘বিচ্ছিরি’, ‘লিস্টি’, ‘ভদ্দর’ প্রভৃতি। 

(ঙ) ধ্বন্যাত্মক, অনুকার শব্দের ও শব্দদ্বৈতের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। যেমন—ডিম-টিম, প্ল্যান-ট্যান, ধ্বস-ধ্বস, ভোঁস ভোঁস, ঝাল-ঝাল । 

(চ) ক্রিয়াপদের ব্যবহারেও বৈচিত্র্য লক্ষণীয়। প্রাদেশিক (ধ্বন্যাত্মক) রীতির ভাষাও বর্তমান। যেমন—খাওয়া অর্থে ‘সাবাড়-করা’ শব্দের প্রয়ােগ। লােভ দেওয়া অর্থে নজর দেওয়া প্রভৃতির প্রয়ােগ হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। 

(ছ) অর্থগত দিক থেকে শব্দের বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার, যেমন—খাবার নষ্ট হওয়া অর্থে বারােটা বাজা’, ‘একটা বাজা’ প্রভৃতি শব্দের ব্যবহার। 

(জ) এ ছাড়াও প্রবাদ প্রবচনের ব্যবহার, বাগধারার ব্যবহার লক্ষণীয়। 

(ঝ) অলংকারের প্রয়ােগবৈচিত্র্যও হাস্যরস সৃষ্টির সহায়ক হয়েছে। 

(ঞ) অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব শব্দের প্রয়ােগবৈচিত্র্যও লক্ষণীয়। 

(ট) চরিত্রের সংলাপে ‘দ্রাক্ষাফল অতিশয় খাট্টা, ‘এক চড়ে গালের বােম্বা উড়িয়ে দেব’– প্রভৃতির মাধ্যমে হাস্যরস সৃষ্টি হয়েছে।

১১.৫ টেনিদার মতাে আরও কয়েকটি ‘দাদা’ চরিত্র বাংলা সাহিত্যে দেখতে পাওয়া যায়। এরকম তিনটি চরিত্র নিয়ে সংক্ষেপে আলােচনা করাে। 

উঃ বাংলা সাহিত্যে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সৃষ্ট টেনিদা-র মতাে আরও কয়েকটি চরিত্র হল-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সৃষ্ট ‘নতুনদা’, সত্যজিৎ রায়ের ‘ফেলুদা’ এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘ঘনাদা।

 » নতুনদা : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত “শ্রীকান্ত’ উপন্যাসে বর্ণিত ‘নতুনদা’ এক অনন্য সৃষ্টি। কলকাতা থেকে তিনি গ্রামে আসেন একটি থিয়েটারে হারমােনিয়াম বাজানাের জন্য। নতুনদা চরিত্রের মধ্যে একটি ভারিক্কিভাব বর্তমান। তিনি ডিঙিতে করে থিয়েটারে যাওয়ার সময় শ্রীকান্তের প্রতি অত্যন্ত অভদ্র ব্যবহার করেন। আবার তিনি ক্ষুধার্ত হলে রাতদুপুরে ইন্দ্র ও শ্রীকান্তকে মুড়ি আনতে পাঠান। হাওয়া পড়ে এলে নিজে দাঁড় না-টেনে ইন্দ্রনাথ ও শ্রীকান্তকে জলে নেমে কাছি দিয়ে নৌকা টানতে বলেন। আসলে সমাজে এক শ্রেণির মানুষ থাকেন, যারা পরনির্ভরশীল ও পরজীবী। আলােচ্য অংশে ‘নতুনদা’ সেইসব মানুষের প্রতিনিধি, যারা চুড়ান্ত স্বার্থপরতার নিদর্শন দিয়ে থাকেন এবং উপযুক্ত শাস্তি পাওয়ার পরেও নিজেকে বদলানাের চেষ্টা করেন না।

» ফেলুদা : সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা চরিত্রটি তাঁর অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। ফেলুদার মধ্যে একটি গাম্ভীর্যভাব বর্তমান। তিনি মিতভাষী, কিন্তু যে-কোনাে বিষয়ের পর্যবেক্ষণে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তিনি তাঁর শিষ্য তপেশকে (তােপসে) বিভিন্ন নির্দেশ দেন। সমস্যার সমাধানে তাঁর অনুসন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গি ও চতুরতার পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর অপর একজন সঙ্গী ‘জটায়ু’। 

» ঘনাদা : প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘ঘনাদা’ চরিত্রটি বাংলা সাহিত্যের একটি অন্যতম বিখ্যাত চরিত্র। ঘনাদার স্বভাববৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলতে গেলে বলা যায়, তার মধ্যে একটি সবজান্তা ভাব, গাম্ভীর্য এবং সমস্ত কিছুর মধ্যে নিজের অহংবােধ প্রকাশের প্রবণতা লক্ষ করা যায়।

আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। “.বনভোজনের ব্যাপার নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর” এরকম আরো অনেক বিষয় জানতে হলে অব্যশয় আমাদের অন্যান্য পোস্ট পড়তে ভুলবেন না। ধন্যবাদ ❤

Leave a Comment