শিলা সহায়িকা প্রশ্ন ও উত্তর অষ্টম শ্রেণী ভূগোল [নতুন]

শিলা সহায়িকা প্রশ্ন ও উত্তর অষ্টম শ্রেণী ভূগোল: আমরা আজকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। এরকম পোস্ট আমদের মতো কেউ করতে পারবে না। আমরা হলাম official-result.com. তাই আমাদের ওয়েবসাইটকে কখনো ভুলে জাবেন না। 😉😉

শিলা সহায়িকা প্রশ্ন ও উত্তর অষ্টম শ্রেণী ভূগোল

শিলা সহায়িকা প্রশ্ন ও উত্তর অষ্টম শ্রেণী ভূগোল

অধ্যায়ভিত্তিক সংজ্ঞা:  

 1. শিলা: প্রকৃতিতে প্রাপ্ত এক বা একাধিক খনিজের সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণকে শিলা (Rock) বলে।

2. শিলার প্রবেশ্যতা : শিলার প্রবেশ্যতা বলতে বােঝায় শিলার মধ্য দিয়ে তরল বা গ্যাসীয় পদার্থ প্রবেশ করার ক্ষমতা।

3. শিলার সচ্ছিদ্রতা : শিলা-মধ্যস্থ শূন্যস্থান এবং শিলার মােট আয়তনের অনুপাত হল শিলার সচ্ছিদ্রতা।

4. শিলার প্রকারভেদ : শিলার সৃষ্টি(উৎপত্তি) এবং বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে শিলাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথাআগ্নেয়শিলা, পাললিক শিলা এবং রূপান্তরিত শিলা।

5. আগ্নেয়শিলা : ভূ-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত আগ্নেয় পদার্থ, যেমন ম্যাগমা এবং ভূপৃষ্ঠে নির্গত লাভা জমাট বেঁধে যে শিলার সৃষ্টি হয়, তাকে বলে আগ্নেয়শিলা (Igneous Rock)।

6. নিঃসারী আগ্নেয়শিলা : ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত গলিত পদার্থ বা ম্যাগমা ভূ-অভ্যন্তরের অত্যধিক চাপে ভূত্বকের দুর্বল ফাটল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে তরল লাভারূপে ভূপৃষ্ঠে প্রবাহিত হয়। এই লাভা বাতাসের সংস্পর্শে ঠান্ডা ও কঠিন হয়ে যে শিলার সৃষ্টি করে, তাকে বলে নিঃসারী আগ্নেয়শিলা।

7. উদ্বধী আগ্নেয়শিলা: অনেকসময় ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত তরল ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে পৌঁছােতে না পেরে ভূগর্ভের ভিতরেই দীর্ঘকাল ধরে ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে কঠিন শিলায় পরিণত হয়। এই ধরনের শিলাকে উদবেধী আগ্নেয়শিলা বলে।

৪. উপপাতালিক শিলা: ভূ-অভ্যন্তরের কোনাে ফাটল বা ছিদ্রপথের মধ্যে ম্যাগমা যখন ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে জমাট বেঁধে শিলার সৃষ্টি করে, তখন তাকে উপপাতালিক শিলা বলে।

9. পাতালিক শিলা: ভূ-অভ্যন্তরের একেবারে তলদেশে অবস্থিত ম্যাগমা ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে যে শিলার সৃষ্টি করে তাকে পাতালিক শিলা বলে।

10. পাললিক শিলা: বৃষ্টি, তুষারপাত, নদী, বায়ু, হিমবাহ ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কার্যের ফলে পাহাড়, পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ক্ষয়কার্যের ফলে উৎপন্ন পলি সাগরমহাসাগর, নদী বা হ্রদে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় এবং পরবর্তীকালে ওই পলি জমাট বেঁধে যে শিলা গঠিত হয় তাকে পাললিক শিলা (Sedimentary Rock) বলে।

11. জীবাশ্ম : শিলা সৃষ্টির সময় কখনাে কখনাে সামুদ্রিক উদ্ভিদ বা প্রাণী দুই শিলার মধ্যে চাপা পড়ে যায়। পরে পাললিক শিলার মধ্যে ওই উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহ প্রস্তরীভূত হলে তাদের দেহাবশেষের ছাপ থেকেই যায়। একে জীবাশ্ম (Fossil)বলা হয়।

12. উৎপত্তি অনুসারে পাললিক শিলার প্রকারভেদ : পলির উৎপত্তি অনুসারে পাললিক শিলা দু-প্রকারের হয়। যথাসংঘাত শিলা এবং অসংঘাত শিলা।

13. সংঘাত শিলা: প্রাচীন শিলা চূর্ণবিচূর্ণ ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বহুদিন ধরে জমাট বেঁধে যে শিলার সৃষ্টি হয় তাকে সংঘাত শিলা বলে। 14. অসংঘাত শিলা: রাসায়নিক বা জৈবিক উপায়ে যে শিলা সৃষ্টি হয় তাকে অসংঘাত শিলা বলে।

15. যান্ত্রিক উপায়ে গঠিত পাললিক শিলার প্রকারভেদ : যান্ত্রিক উপায়ে গঠিত পাললিক শিলা তিন প্রকারের হয়। যথাকর্মময় পাললিক শিলা, বালুকাময় পাললিক শিলা এবং প্রস্তরময় পাললিক শিলা।

16. রূপান্তরিত শিলা : দীর্ঘ সময় ধরে ভূত্বকে প্রচণ্ড চাপ ও তাপের প্রভাবে আগ্নেয়শিলা ও পাললিক শিলা পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ নতুন ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মবিশিষ্ট শিলায় পরিণত হয়। পূর্বের রূপ বা অবস্থার পরিবর্তন হয় বলে, এই শিলাকে পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rock) বলে।

17. শিলাচক্র  : প্রকৃতিতে শিলার উৎপত্তি ও এক শিলা থেকে অন্য শিলায় রূপান্তর একটি নির্দিষ্ট নিয়মে চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে চলেছে। এই বিভিন্ন প্রকার শিলার বিভিন্ন পদ্ধতিতে চক্রাকারে আবর্তনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি হল শিলাচক্র।

18. কাস্ট ভূমিরূপ : চুনাপাথরে গঠিত ভূমিরূপকে কাস্ট ভূমিরূপ বলা হয়।

19. খনিজ: শিলা-মধ্যস্থ কেলাসিত, নির্দিষ্ট রাসায়নিক সংযুতিবিশিষ্ট ও নির্দিষ্ট পারমাণবিক গঠনযুক্ত মৌলিক বা যৌগিক পদার্থকে খনিজ বলা হয়।

20. রেগােলিথ: বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা (যেমন—নদী, বায়ু, বৃষ্টিপাত, সমুদ্রতরঙ্গ, হিমবাহ প্রভৃতি) বহুদিন ধরে শিলা ও শিলা গঠনকারী খনিজগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সূক্ষ্ম শিথিল শিলাচূর্ণের সৃষ্টি হয়। এই শিথিল শিলাচূর্ণকে রেগােলিথ বলে। এই রেগােলিথ হল মাটি সৃষ্টির প্রথম পর্যায়।

১. শিলা বলতে কী বােঝ? শিলার প্রধান শ্রেণিবিভাগগুলি আলােচনা করাে।

উঃ প্রকৃতিতে প্রাপ্ত এক বা একাধিক খনিজের সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণকে শিলা (Rock) বলে।

শিলার বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

1. উপাদান:নুড়ি, পাথর, মাটি,কাঁকর,বালি প্রভৃতি সবই শিলার অন্তর্গত। 2. শিলা গঠনকারী খনিজ:শিলা গঠনকারী কয়েকটি খনিজ পদার্থ হল—কোয়ার্টজ, ফেল্ডসপার, অভ্র, অলিভিন, পাইরক্সিন প্রভৃতি। 

শ্রেণিবিভাগ:

উৎপত্তি অনুসারে শিলাকে প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যথা—1. আগ্নেয়শিলা, 2. পাললিক শিলা এবং 3. রূপান্তরিত শিলা।

1. আগ্নেয়শিলা: ভূ-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত আগ্নেয় পদার্থ, যেমন ম্যাগমা এবং ভূপৃষ্ঠে নির্গত লাভা জমাট বেঁধে যে শিলার সৃষ্টি হয়, তাকে বলে আগ্নেয়শিলা (Igneous Rock)। পৃথিবী সৃষ্টির আদি পর্যায়ে গলিত আগ্নেয় পদার্থ বা ম্যাগমা ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়ে এবং জমাট বেঁধে ভূত্বকের সৃষ্টি করে। পরবর্তীকালে ভূত্বকের ছােটোবড়াে বিভিন্ন ফাটল ও আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ দিয়ে উত্তপ্ত তরল ম্যাগমা বেরিয়ে এসে ভূপৃষ্ঠে জমা হয় এবং কালক্রমে তা ঠান্ডা ও শক্ত হয়ে আগ্নেয়শিলায় পরিণত হয়। উদাহরণ—গ্রানাইট, ব্যাসল্ট প্রভৃতি।

2. পাললিক শিলা: বৃষ্টি, তুষারপাত, নদী, বায়ু, হিমবাহ ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কার্যের ফলে পাহাড়, পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ক্ষয়কার্যের ফলে উৎপন্ন পলি সাগরমহাসাগর, নদী বা হ্রদে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় এবং পরবর্তীকালে ওই পলি জমাট বেঁধে যে শিলা গঠিত হয় তাকে পাললিক শিলা (Sedimentary Rock) বলে। উদাহরণ—বেলেপাথর, চুনাপাথর, কাদাপাথর প্রভৃতি।

3. রূপান্তরিত শিলা: দীর্ঘ সময় ধরে ভূত্বকে প্রচণ্ড চাপ ও তাপের প্রভাবে আগ্নেয়শিলা ও পাললিক শিলা পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ নতুন ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মবিশিষ্ট শিলায় পরিণত হয়। পূর্বের রূপ বা অবস্থার পরিবর্তন হয় বলে, এই শিলাকে পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rock) বলে। উদাহরণ—নিস, মারবেল, কোয়ার্টজাইট, স্লেট প্রভৃতি।

২. উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে আগ্নেয়শিলার শ্রেণিবিভাগ করাে ও বিভাগগুলির পরিচয় দাও।

উঃ উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে আগ্নেয়শিলাকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—নিঃসারী আগ্নেয়শিলা এবং উদবেধী আগ্নেয়শিলা। উদবেধী শিলাকে আবার দু-ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—পাতালিক শিলা উপপাতালিক শিলা।

1. নিঃসারী আগ্নেয়শিলা: ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত গলিত পদার্থ বা ম্যাগমা ভূ-অভ্যন্তরের অত্যধিক চাপে ভূত্বকের দুর্বল ফাটল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে তরল লাভারূপে ভূপৃষ্ঠে প্রবাহিত হয়। এই লাভা বাতাসের সংস্পর্শে ঠান্ডা ও কঠিন হয়ে যে শিলার সৃষ্টি করে, তাকে বলে নিঃসারী আগ্নেয়শিলা।

বৈশিষ্ট্য: এই শিলার দানাগুলি খুব সূক্ষ্ম বা মিহি হয়। উদাহরণ: ব্যাসল্ট, অবসিডিয়ান প্রভৃতি।

2. উদবেধী আগ্নেয়শিলা: অনেকসময় ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত তরল ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে পৌছােতে না পেরে ভূগর্ভের ভিতরেই দীর্ঘকাল ধরে ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে কঠিন শিলায় পরিণত হয়। এই ধরনের শিলাকে উদবেধী আগ্নেয়শিলা বলে। বৈশিষ্ট্য: এই শিলার দানাগুলি কিছুটা স্থূল হয়। উদাহরণ: গ্রানাইট, ডােলেরাইট।

উদবেধী শিলাকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা— 1. উপপাতালিক শিলা এবং 2. পাতালিক শিলা –

1. উপপাতালিক শিলা: ভূ-অভ্যন্তরের কোনাে ফাটল বা ছিদ্রপথের মধ্যে ম্যাগমা যখন ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে জমাট বেঁধে শিলার সৃষ্টি করে, তখন তাকে উপপাতালিক শিলা। বৈশিষ্ট্য: এর দানাগুলি নিঃসারী শিলার মতাে যেমন সূক্ষ্ম হয় না, তেমনি পাতালিক, শিলার মতাে অত বড়ােও হয় না, অর্থাৎ মাঝারি ধরনের হয়। উদাহরণ: ডােলেরাইট প্রভৃতি।

2. পাতালিক শিলা: ভূ-অভ্যন্তরের একেবারে তলদেশে অবস্থিত ম্যাগমা ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে যে শিলার সৃষ্টি করে তাকে পাতালিক শিলা বলে। বৈশিষ্ট্য: এদের কেলাসিত শিলাও বলা হয়। উদাহরণ: গ্রানাইট প্রভৃতি।

৩. গ্রানাইট ও ব্যাসল্ট শিলার মধ্যে পার্থক্য লেখা:

শিলা সহায়িকা প্রশ্ন ও উত্তর অষ্টম শ্রেণী ভূগোল

৪. পাললিক শিলা কাকে বলে? পলির উৎপত্তি অনুসারে পাললিক শিলার শ্রেণিবিভাগগুলি আলােচনা করাে।

উঃ
 বৃষ্টি, তুষারপাত, নদী, বায়ু, হিমবাহ ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কার্যের ফলে পাহাড়, পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ক্ষয়কার্যের ফলে উৎপন্ন পলি সাগর-মহাসাগর, নদী বা হ্রদে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় এবং পরবর্তীকালে ওই পলি জমাট বেঁধে যে শিলা গঠিত হয় তাকে পাললিক শিলা (Sedimentary Rock) বলে। 

বৈশিষ্ট্য: এই শিলায় বালি, পলি ও কাদার ভাগ বেশি থাকে। উদাহরণ: বেলেপাথর, কাদাপাথর, চুনাপাথর প্রভৃতি। 

    পলির উৎপত্তি অনুসারে পাললিক শিলার শ্রেণিবিভাগ পলির উৎপত্তি অনুসারে পাললিক শিলার শ্রেণিবিভাগ দু-ভাবে করা যায়। যথা- 1. সংঘাত শিলা এবং 2. অসংঘাত শিলা।

1. সংঘাত শিলা: প্রাচীন শিলা চূর্ণবিচূর্ণ ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বহুদিন ধরে জমাট বেঁধে যে শিলার সৃষ্টি হয় তাকে সংঘাত শিলা বলে। উদাহরণ: কংগ্লোমারেট, ব্রেসিয়া প্রভৃতি।

2. অসংঘাত শিলা : রাসায়নিক বা জৈবিক উপায়ে যে শিলা সৃষ্টি হয় তাকে অসংঘাত শিলা বলে। উদাহরণ: চুনাপাথর, লবণ শিলা প্রভৃতি।

৫. রূপান্তরিত শিলা কাকে বলে? রূপান্তরের পদ্ধতিগুলি আলােচনা করাে।

উঃ দীর্ঘ সময় ধরে ভূত্বকে প্রচণ্ড চাপ ও তাপের প্রভাবে আগ্নেয়শিলা ও পাললিক শিলা পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ নতুন ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মবিশিষ্ট শিলায় পরিণত হয়। পূর্বের রূপ বা অবস্থার পরিবর্তন হয় বলে, এই শিলাকে পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rock) বলা হয়।
উদাহরণ: গ্রানাইট (আগ্নেয়শিলা) থেকে নিস, চুনাপাথর (পাললিক শিলা) থেকে মারবেল, ফিলাইট (রূপান্তরিত শিলা) থেকে সিস্ট প্রভৃতি হল এই ধরনের শিলার উদাহরণ।

শিলা রূপান্তরের পদ্ধতি:

শিলা তিনটি পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হয়। যথা—1. অত্যধিক তাপে, 2. প্রচণ্ড চাপে এবং 3. রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে।

1. অত্যধিক তাপেরুপান্তর : উত্তপ্ত তরল ম্যাগমা বা লাভার সংস্পর্শে রূপান্তরিত শিলার সৃষ্টি হয়। উদাহরণ: পিট কয়লা থেকে গ্রাফাইট। এই অত্যধিক তাপের ফলে শিলার স্থানীয় বা স্পর্শ রূপান্তর হয়ে থাকে।

স্থানীয় রূপান্তর বা স্পর্শ রূপান্তর: ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত লাভার সংস্পর্শে এসে স্থানীয়ভাবে শিলার রূপান্তর ঘটে। উদাহরণ: এই প্রক্রিয়ায় মারবেলের সৃষ্টি হয়।

2. প্রচণ্ড চাপে: ভূ-আন্দোলনের ফলে উৎপন্ন প্রবল চাপে রূপান্তরিত শিলা গঠিত হয়। উদাহরণ: শেল থেকে স্লেট। এই অত্যধিক চাপের ফলে শিলার আঞ্চলিক রূপান্তর হয়ে থাকে। 

আঞ্চলিক রূপান্তর: প্রবল ভূ-আলােড়নের ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে শিলার এই জাতীয় রূপান্তর ঘটে। উদাহরণ: এই প্রক্রিয়ায় স্লেট গঠিত হয়।

3. রাসায়নিক বিক্রিয়ায় : ভূবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভূগর্ভস্থ জল বা গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়ার মাধ্যমেও শিলা রূপান্তরিত হয় অর্থাৎ রাসায়নিক বিক্রিয়া শিলার রূপান্তরে সাহায্য করে। উদাহরণ: অ্যান্ডালুসাইট থেকে সিলিমেনাইট।

৬. চিত্র-সহ শিলাচক্র বুঝিয়ে লেখাে। 

উঃ আগ্নেয়, পাললিক ও রূপান্তরিত—এই তিন প্রকার শিলার উৎপত্তি পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং শিলা সৃষ্টির এই প্রক্রিয়া চক্রাকারে আবর্তিত হয়। শিলাচক্রের বিভিন্ন পর্যায়গুলি হল1=

1. আগ্নেয়শিলার সৃষ্টি: ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত ম্যাগমা ভূত্বকের বিভিন্ন দুর্বল অংশ দিয়ে নির্গত হয়ে ভূপৃষ্ঠে লাভারূপে প্রবাহিত হয়। অথবা, ভূ-অভ্যন্তরেই সঞ্চিত হয় এবং কালক্রমে উভয় স্থানেই শীতল ও কঠিন হয়ে আগ্নেয়শিলার সৃষ্টি হয়।

2. পাললিক শিলার সৃষ্টি: এই আগ্নেয়শিলাই ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি, যেমন—নদী, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ প্রভৃতির মাধ্যমে ক্ষয়প্রাপ্ত ও পরিবাহিত হয়। এই ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থ সমুদ্র, নদী বা হ্রদের তলদেশে বহু বছর ধরে স্তরে স্তরে পলিরূপে সঞ্ছিত হয়ে কঠিন পাললিক শিলায় পরিণত হয়।

3. রূপান্তরিত শিলার সৃষ্টি: আবার আগ্নেয় ও পাললিক এই দুধরনের শিলাই তাপ ও চাপ বা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সুদীর্ঘ সময় ধরে পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয়।

4. রূপান্তরিত থেকে পাললিক শিলার সৃষ্টি: এই রূপান্তরিত শিলাও দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে ক্ষয়প্রাপ্ত ও অপসারিত বা পরিবাহিত হয়ে সমুদ্র, নদী বা হ্রদের তলদেশে সঞ্চিত হয় এবং সেখানে জমাট বেঁধে আবার পাললিক শিলার সৃষ্টি হয়।

5. পুনরায় আগ্নেয়শিলার সৃষ্টি: আবার বহু বছর পর আগে, পাললিক ও রূপান্তরিত তিন ধরনের শিলাই ভূ-আলােড়নের ফলে বা পাত সঞ্চালনের মাধ্যমে উত্তপ্ত ভূগর্ভে প্রবেশ করে, গলে ম্যাগমায় পরিণত হয় এবং কালক্রমে অগ্নগমের মাধ্যমে পুনরা। নির্গত হয়ে আগ্নেয়শিলা সৃষ্টি করে।

এইভাবে প্রকৃতিতে শিলার উৎপত্তি ও পর্যায়ক্রমে এক শিলা থেকে অন্য শিলায় রূপান্তর একটি নির্দিষ্ট নিয়মে চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে চলেছে। তিন প্রকার শিলার এই অবিরাম চক্রাকারে আবর্তনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিই হল শিলাচক্র।

৭. ভূমিরূপ গঠনে শিলার প্রভাব আলােচনা করাে। অথবা, শিলা ও ভূমিরূপের সম্পর্ক আলােচনা করাে।

উঃ ভূমিরূপ গঠনে শিলার প্রভাব অনেকখানি। বিভিন্ন শিলাগঠিত অঞলের ভূমিরূপের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য লক্ষ করা যায়। যেমন—

1. গ্রানাইট শিগঠিত গােলাকার ভূমিরূপ: গ্রানাইট শিলা দিয়ে গঠিত ভূমিরূপের ওপর উয়তার তারতম্যে শিলা পেঁয়াজের খােসার মতো খুলে যায়। এভাবে শিলার উপরিভাগ প্রায় গােলাকার দেখতে হয়। উদাহরণ: রাঁচি-সহ সমগ্র ছােটোনাগপুর মালভূমির গ্রানাইট গঠিত অঞ্চল গােলাকার ভূমিরূপ সৃষ্টি করেছে।

2. ব্যাসল্ট শিলাগঠিত চ্যাপটা আকৃতির ভূমিরূপ: ব্যাসল্ট শিলাগঠিত অঞল ভূ-অভ্যন্তর ভাগ থেকে বেরিয়ে আসা পাতলা ক্ষারধর্মী লাভা দ্বারা গঠিত হয়। লাভার সান্দ্রতা অত্যন্ত কম হওয়ার জন্য লাভা দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে শীতল ও কঠিন হয়। এর ফলে ব্যাসল্ট শিলাগঠিত ভূমিরূপ চ্যাপটা আকৃতির হয়। উদাহরণ: দাক্ষিণাত্য মালভূমির ডেকানট্র্যাপ অঞ্চল।

3. চুনাপাথর গঠিত অঞ্চল এবং গুহা সমন্বিত ভূমিরূপ: চুনাপাথর মৃদু অ্যাসিডযুক্ত জলে দ্রবীভূত হয়। এই কারণে, চুনাপাথরযুক্ত অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদীর জলে চুনাপাথর দ্রবীভূত হয়ে জলের সঙ্গে মিশে অপরিত হয়। ফলে চুনাপাথরযুক্ত অঞ্চলে গুহা সৃষ্টি হয়। এইসব চুনাপাথরের গুহার ছাদ থেকে দণ্ডের আকারে ঝুলতে থাকা ভূমিরূপকে স্ট্যালাকটাইট বলে। আবার, গুহার মেঝের উপরে দণ্ডের আকারে গঠিত ভূমিরূপকে স্ট্যালাগমাইট বলে। স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট অনেকসময় জুড়ে গিয়ে চুনাপাথরের স্তম্ভ তৈরি করে। উদাহরণ: ভারতের চেরাপুঞ্জি-মৌসিনরামে এইরুপ ভূমিরূপ দেখতে পাওয়া যায়।

4. বেলেপাথর গঠিত খাড়া ঢালবিশিষ্ট ভূমিরূপ: বেলেপাথর গঠিত অঞলের পার্শ্বদেশে ক্ষয়ের ফলে খাড়া ঢালবিশিষ্ট ভূমিরূপ তৈরি হয়। 

আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। “.শিলা সহায়িকা প্রশ্ন ও উত্তর অষ্টম শ্রেণী ভূগোল” এরকম আরো অনেক বিষয় জানতে হলে অব্যশয় আমাদের অন্যান্য পোস্ট পড়তে ভুলবেন না। ধন্যবাদ ❤

Leave a Comment