পরাজয় শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর [নতুন]

পরাজয় শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর: আমরা আজকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। এরকম পোস্ট আমদের মতো কেউ করতে পারবে না। আমরা হলাম official-result.com. তাই আমাদের ওয়েবসাইটকে কখনো ভুলে জাবেন না। 😉😉

পরাজয় শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর

পরাজয় শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর

বিষয়সংক্ষেপ

জীবনে বেঁচে থাকার জন্য জীবিকার প্রয়ােজন যেমন, ঠিক তেমনই মনের খােরাকের জন্য কোনাে আনন্দের রসদের প্রয়ােজন। গল্পের নায়ক রঞ্জন একজন দক্ষ ফুটবলার। যার নেশা ফুটবল খেলা, আর অন্তরের ভালােবাসার জায়গা তাঁর প্রিয় ক্লাব। গল্পে দেখা গিয়েছে, একটু আগে সবকটি কাগজে ওদের ক্লাবের বারপুজোর অনুষ্ঠানের রিপাের্ট, উপস্থিত ব্যক্তির তালিকা ও ছবিগুলি ভালােভাবে দেখে রঞ্জন রাগে ঘরের মধ্যে চরকির মতাে ঘুরছে। গত পনেরাে বছর যে ক্লাবের জন্য সে রক্ত ঝরিয়েছে, বহু বড়াে ক্লাবের লক্ষ লক্ষ টাকার প্রলােভনকে উপেক্ষা করেছে, তারাই আজ তাকে ডাকার প্রয়ােজন বােধ করল না। অন্যান্য বছর প্রেসিডেন্টসেক্রেটারিরা তাকে ফোন করেন, বারপুজোয় যাওয়ার জন্য বলতে বাড়িতেও কেউ কেউ আসে, গাড়ি পাঠায়। গত পনেরাে বছর এভাবে চলছিল। গতবছর ওকে নিয়ে মাতামাতির কষ্ট, চোখের জল হয়ে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

    বিষয়ে মনে সন্দেহ জাগলেও, ফুটবল সেক্রেটারি ও কোচ দল গঠন নিয়ে রঞ্জনের সঙ্গে কথা বলায় ওর সন্দেহ কেটে গিয়েছিল। এত দুঃখ, এত ব্যথা সে কখনও পায়নি। এরপর দু-দিন সে অপেক্ষা করল, ওর সঙ্গে কারাের যােগাযােগ করার জন্য। না-হলে সে অন্য বড়াে ক্লাবে যােগদান করবে। সে সারাদিন ছটফট করতে লাগল। দু-দিন অফিস ও বাড়ি মিলিয়ে কাটিয়ে দিল। কেউ রঞ্জনকে ফোন পর্যন্ত করল না। গঙ্গার ধারে গিয়ে মনােরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে তার মন কিছুটা শান্ত হল। হঠাৎ তার ভিতরের যন্ত্রণাটা কান্না হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইল। সে সিদ্ধান্ত নিল, অন্য বড়াে ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনদাকে ফোন করে ওর অবস্থা জানাবে। সে তাদের কাছ থেকে অর্থ নয়, একটু সম্মান, ভালােবাসা ও আন্তরিকতা চায়। রঞ্জন একাধিকবার বাংলা ও ভারতীয় দলের অধিনায়ক হয়েছে, অর্জুন পুরস্কার পেয়েছে, তাই স্বপনদার ক্লাব প্রস্তাবটি লুফে নেয় এবং স্ট্রাইকার রঞ্জনকে তারা প্রথম দিনেই সই করিয়ে নেয়। রঞ্জনের দলবদলের খবরে চারিদিকে ব্যস্ততা তৈরি হয়, বিশেষত পুরােনাে ক্লাবকর্তাদের মধ্যে। কিন্তু তাতে লাভ হয় না। রন বেপাত্তা। এরপর যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে দুই বড়াে দলের খেলার প্রতিযােগিতার দিন আসে । রঞ্জনের সামনে নিজেকে প্রমাণ করার সুযােগ তৈরি হয়। সমস্ত লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু রঞ্জন। প্রথমার্ধ গােলশূন্য থাকলেও সে দ্বিতায়ার্ধে ব্যাক ভলির মাধ্যমে গােল করে তার পূর্বের ক্লাবকে পরাজিত করে। সহ-খেলােয়াড়েরা তাকে নিয়ে মাতামাতি করলেও সে নিজে যেন একটি চাপা কষ্ট, বেদনা অনুভব করে। অপমানের বদলা নিলেও সে নিজের অন্তরাত্মার কাছে হেরে যায়। সে নিজেকে সামলাতে না-পেরে কেঁদে ফেলে। খেলােয়াড় রঞ্জন সরকারকে বারপুজোয় না-ডাকার অপমান।

নামকরণ

সাহিত্যে নামকরণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, এই নামের মাধ্যমে বিষয়বস্তুর একটি ধারণা পাঠকের মনে সঞ্চারিত হয়ে যায়। লেখক আলােচ্য পাঠ্যাংশটির নামকরণ করেছেন ‘পরাজয়। নামটি কাহিনির মূল চরিত্রকেন্দ্রিক বা স্থানকেন্দ্রিক নয়, নামটি ব্যঞ্জনাধর্মী। কারণ, গল্পের কাহিনি বিশ্লেষণে দেখা যায়, দীর্ঘ পনেরাে বছর একটি ক্লাবের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িয়ে ছিল গল্পের মূল চরিত্র রঞ্জন। মনপ্রাণ দিয়ে ভালােবেসেছিল ক্লাবকে। বর্তমানে ক্লাবের বারপুজোকে কেন্দ্র করে সেই সম্পর্কে দেখা দিল ফাটল। বারপুজোয় তাকে কোনাে খবর দেওয়া হয়নি। প্রচণ্ড অপমানিত বােধ করল সে। দু-তিনদিন অপেক্ষা করার পর শেষে অন্য একটি ক্লাব-কর্তার সঙ্গে কথা বলে দলবদলের সিদ্ধান্ত পাকা করে নিল সে। অবশেষে দুই বড়াে দলের খেলা পড়ল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। দারুণ খেললও রঞ্জন। একটি অভাবনীয় গােল দিয়ে নতুন দলকে জেতাল সে। তার পুরােনাে ক্লাব অর্থাৎ বিরােধীপক্ষকে বােঝাল, সে এখনও ফুরিয়ে যায়নি। কিন্তু সে উপলব্ধি করল, এমন সাফল্যের দিনে সে অন্যান্যদের ব্যঞ্জনাবাহী ও সার্থক হয়েছে।

    মতাে আনন্দে মেতে উঠতে পারছে না। তার চোখ দিয়ে অঝােরে জল পড়ছে। বােঝা যায়, জেদের বশবর্তী হয়ে ক্লাব পরিত্যাগ করলেও মন থেকে সে পুরনাে ক্লাব থেকে সরে আসতে পারেনি। তাই গােল দিয়ে তাদেরকে যেমন সে পরাজিত করেছে, তেমনই নিজের মনের কাছেই নিজে পরাজিত হয়েছে। তাই গল্পটির নামকরণ ‘পরাজয়’ গল্পের দ্বৈত অর্থকে বিশেষিত করেছে। তাই এই নামকরণটি যথার্থ

হাতে কলমে

১১ শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম বইয়ের নাম লেখাে।

উঃ
 শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম বই হল—‘ফেরারি’ উপন্যাস।

১.২ কলকাতার ফুটবল নিয়ে লেখা তাঁর দুটি বইয়ের নাম লেখাে। 

উঃ কলকাতার ফুটবল নিয়ে লেখা তাঁর দুটি বইয়ের নাম হল-‘ক্লাবের নাম মােহনবাগান’ ও ‘ক্লাবের নাম ইস্টবেঙ্গল।

২ নীচের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর একটি বাক্যে লেখাে :

২.১ ‘এত দুঃখ এত ব্যথা সে কখনও পায়নি’-এখানে কার দুঃখ-বেদনার কথা বলা হয়েছে ?

উঃ
 শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরাজয়’ গল্প থেকে উদ্ধৃত প্রশ্নে ফুটবল খেলােয়াড় রঞ্জন সরকারের দুঃখবেদনার কথা বলা হয়েছে।

২.২ ‘রঞ্জনদা তুমি কাল ক্লাবে যাওনি ?—এই প্রশ্নের উত্তরে রঞ্জন কী বলেছিল ?

উঃ আলােচ্য ‘পরাজয়’ গল্পে উল্লিখিত ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে রঞ্জন জানিয়েছিল যে, কাল সকালেই তাকে কলকাতার বাইরে যেতে হয়েছিল বলে সে যেতে পারেনি।

২.৩ গঙ্গার পাড়ে গিয়ে কোন্ দৃশ্য রঞ্জনের চোখে ভেসে উঠল ?

উঃ
 গঙ্গার পাড়ে গিয়ে রঞ্জনের চোখের সামনে গাছের পাতার ঝিরঝিরে হাওয়া, পাখির কাকলি, জলের ছােটো ছােটো ঢেউ, দূরে নােঙর করা ছােটো-বড়াে জাহাজের সারি, যাত্রী-প্রতীক্ষারত নৌকা প্রভৃতি দৃশ্য ভেসে উঠেছিল।

২.৪ সিদ্ধান্তটা নেওয়ার পর রঞ্জনের মন অনেকটা শান্ত হলাে। এখানে রঞ্জনের কোন্ সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে ?

উঃ
 খেলােয়াড় রঞ্জন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, সে দুদিন অপেক্ষা করবে, ক্লাবের কেউ ওর সঙ্গে যােগাযােগ করে কিনা দেখার জন্য। না-হলে খেলা না-ছেড়ে, ক্লাব বদল করে সে দেখিয়ে দেবে যে সে ফুরিয়ে যায়নি।

২.৫ ‘ঘােষদা একটা বড়াে খবর আছে। — কী সেই ‘বড়াে খবর’ ?

উঃ শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরাজয়’ গল্পের প্রশ্নোধৃত অংশে স্বপনদা-র মতে, বড়াে খবরটি হল রঞ্জন অর্থাৎ, বিপক্ষ ক্লাবের রঞ্জন সরকার তাদের ক্লাবে আসতে চাইছে।

২.৬ রঞ্জনের দলবদল করার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে টনক নড়েছিল ক্লাবকর্তাদের।—কীভাবে ক্লাবকর্তাদের যে টনক নড়েছে, তা বােঝা গেল ?

উঃ রঞ্জনের দলবদলে ক্লাবকর্তাদের যে টনক নড়েছিল তা বােঝা যায়, তাদের রঞ্জনের বাড়িতে ছােটাছুটি, বিভিন্ন ব্যক্তির রঞ্জনকে ফোন করা এবং তার প্রিয়পাত্রদের দিয়ে রঞ্জনের মত পরিবর্তন করানাের চেষ্টা করা প্রভৃতি ঘটনায় ।

২.৭ ব্যাপারটা কী হলাে বুঝতে একটু সময় লাগল সমর্থকদের।’—এখানে কোন ব্যাপারটার কথা বলা হয়েছে ?

উঃ
 স্ট্রাইকার রঞ্জন তার পুরােনাে ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে অসাধারণ ব্যাক ভলিতে গােল করলে সমর্থকেরা কিছুক্ষণের জন্য হতবাক হয়ে যায় এবং এই ব্যাপারটি বুঝতে তাদের একটু সময় লাগে।

২.৮ ‘দুহাতে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ল একটা বেঞ্চিতে। স্ট্রাইকার রঞ্জন সরকারের এমনভাবে শুয়ে পড়ার কারণ কী ?

উঃ স্ট্রাইকার রঞ্জন সরকারের প্রতি হওয়া অপমানের প্রতিশােধ নিতে সে অন্য বড়াে ক্লাবে যােগ দেয়। খেলার প্রতিযােগিতায় পুরােনাে ক্লাবকে নিজে গােল দিয়ে পরাজিত করলেও একটা কষ্ট, চাপা বেদনা সে অনুভব করছিল। তাই অতি প্রিয় ক্লাবের প্রতি সমবেদনায়, মমত্বে, তাঁর অন্তর্দ্বন্দ্ব ও মনােকষ্টকে চাপতে সে দু-হাতে মুখ ঢেকে বেঞ্চিতে শুয়ে পড়েছিল।

৩ নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও : 

৩.১ একটু আগে ও সবকটা কাগজে বারপুজোর রিপাের্ট পড়েছে। এখানে ‘ও’ বলতে কার কথা বােঝাননা হয়েছে ? সে সব কটা কাগজে একই বিষয়ের রিপাের্ট পড়ল কেন ?

উঃ ‘পরাজয়’ গল্পের আলােচ্য প্রশ্নাংশে ‘ও’ বলতে রঞ্জনের কথা বলা হয়েছে।

    ➡️ ‘সে’ অর্থাৎ, খেলােয়াড় রঞ্জন সরকার সব ক-টা কাগজে বারপুজোর রিপাের্ট পড়ল কারণ, তার নিজের ক্লাবের বারপুজোতে সে নিমন্ত্রণ পায়নি। দীর্ঘ পনেরাে বছর সে এই ক্লাবের জন্য রক্ত ঝরালেও বারপুজোর মতাে গুরুত্বপূর্ণ দিনে কেউ তাকে ডাকা তাে দূরের কথা, ফোন পর্যন্ত করেনি। রঞ্জন কাগজের রিপাের্টে ওদের ক্লাবের অনুষ্ঠানে কে কে এসেছিল, তা দেখতে চেয়েছিল। আসলে তার প্রতি ক্লাব কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অপমানের যন্ত্রণা সে কোনােভাবেই ভুলতে পারছিল না।

৩.২ ওকে নিয়ে মাতামাতিটা ঠিক আগের মতাে আর নেই।’-আগে ওকে নিয়ে কী ধরনের মাতামাতি হত ? 

উঃ লেখক শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ গল্পের উদ্ধৃত অংশে স্ট্রাইকার রঞ্জন সরকারকে নিয়ে মাতামাতির কথা বলা হয়েছে। আগে প্রত্যেক বছর ক্লাবের বারপুজোর দিনে তার কাছে ফোনের পর ফোন আসত। প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি, ফুটবল সেক্রেটারিও তাকে ফোন করত। ক্লাবের বারপুজোতে যাওয়ার জন্য বাড়িতেও কেউ কেউ নিমন্ত্রণ করে আসত। এ ছাড়া পয়লা বৈশাখে রঞ্জনকে মাঠে নিয়ে যাওয়ার জন্য সাতসকালে গাড়ি এসে হাজির হত। রঞ্জন স্নান করে তৈরি থাকত এবং গাড়ি এলেই বেরিয়ে পড়ত। এইভাবে গত পনেরাে বছর ধরে ক্লাব থেকে সে অনেক সম্মান পেয়েছিল এবং তাকে নিয়ে ওরা মাতামাতি করত। 

৩.৩ ঠিক এক বছর আগের ঘটনা।’—এক বছর আগে কোন্ ঘটনা ঘটেছিল ?

উঃ
 গতবছর থেকে রঞ্জন উপলব্ধি করে যে, তাকে নিয়ে ক্লাবের মাতামাতি উন্মাদনা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। তবুও গুরুত্ব দেয়নি রঞ্জন। ঠিক এক বছর আগে ফুটবল সেক্রেটারি ও কোচ এসে ওর সঙ্গে দল গড়া নিয়ে আলােচনা করেছিল। কাকে কাকে দলে রাখা যায়, তা নিয়ে ওরা রঞ্জনের পরামর্শ চেয়েছিলেন। ওদের সঙ্গে কথা বলার পর রঞ্জনের মনের মধ্যে জমে-ওঠা মেঘটা কেটে গিয়েছিল। আলােচ্য প্রশ্নাংশে এক বছর আগের এই ঘটনার কথাই বলা হয়েছে। 

৩.৪ রঞ্জন সারাটা দিন আর বাড়ি থেকে বেরােয়নি। “কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে ?

উঃ
 আলােচ্য প্রশ্নটি শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ নামাঙ্কিত গল্প থেকে সংকলিত হয়েছে। ক্লাবের বারপুজোর দিন অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত দলের নির্ভরযােগ্য খেলােয়াড় রঞ্জনকে তার ক্লাব নিমন্ত্রণ না-করায় সে প্রচণ্ড মর্মাহত হয়। এমনকি তারা ফোনেও তাকে আমন্ত্রণ জানায়নি। এইজন্য অপমানিত রঞ্জন সারাটি দিন আর বাড়ি থেকে বেরােয়নি।

৩.৫ রঞ্জন নামগুলাে পড়ার চেষ্টা করে।’-রঞ্জন কোন্ নামগুলি পড়ার চেষ্টা করে ?

উঃ
 ‘পরাজয়’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র খেলােয়াড় রঞ্জন সরকার তার অতি প্রিয় ক্লাবের অপমানজনক আচরণে অশান্ত মন নিয়ে গঙ্গার ধারে গিয়ে বসেছিল। সেখানে গঙ্গার অপরূপ, মনােরম সৌন্দর্যময় দৃশ্য দেখতে দেখতে দূরে নােঙর করা কয়েকটি ছােটো-বড়াে জাহাজকে সে প্রত্যক্ষ করে। এই জাহাজে লিপিবদ্ধ নামগুলিই রঞ্জন পড়ার চেষ্টা করে।

৩.৬ রঞ্জন টেলিফোনটা রেখে দিল।—কোন্ কথা শুনে রঞ্জন টেলিফোনটা রেখে দিল ?

উঃ আলােচ্য প্রশ্নটিতে রঞ্জন প্রতিপক্ষ বড়াে ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনদাকে ফোন করে। তার আগের ক্লাবের অপমানজনক আচরণের কথা জানালে তিনি মুহূর্তের মধ্যে রঞ্জনের মানসিক অবস্থা বুঝে নেন এবং রঞ্জনের বাড়িতে আধঘণ্টার মধ্যে পৌঁছােনাের কথা জানান। সে-কথা শােনার পরই রঞ্জন টেলিফোনটা রেখে দেয়।

৩.৭ ‘সত্যি ওরা তােমার সঙ্গে উচিত কাজ করেনি। কোন্ অনুচিত কাজের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে ?

উঃ স্ট্রাইকার রঞ্জন সরকারের অতি প্রিয় ক্লাব তার সঙ্গে যে অপমানজনক আচরণ করে সে-কথা, রঞ্জন প্রতিপক্ষ ক্লাবের সেক্রেটারিকে জানায় ও সঙ্গে এও বলে যে, বারপুজো হয়েছে, তার দু-দিন কেটেও গিয়েছে। অথচ, তারা ওর সঙ্গে যােগাযােগ করেনি এবং একটা ফোন পর্যন্ত করেনি। উল্লিখিত কথাগুলি শুনে অন্য বড়াে ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনদা আলােচ্য মন্তব্যটি করেন। আসলে রঞ্জনের আগের ক্লাব এ বছর তার প্রতি যে চরম উদাসীনতা ও অপমানজনক কাজ করেছে। সেই অন্যায় ও অপমানজনক কাজের প্রতিই এখানে নির্দেশ করা হয়েছে।

৩.৮ ‘মন স্থির করে ফেলেছ তাে ?’—উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কোন বিষয়ে মনস্থির করে ফেলেছে ?

উঃ ওপরে উল্লিখিত প্রশ্নটিতে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি অর্থাৎ, খেলােয়াড় রঞ্জন সরকার তার পূর্বের ক্লাব ছেড়ে অন্য বড়াে ক্লাবে যােগদান করতে চায় এবং সে যে ফুরিয়ে যায়নি তা দেখিয়ে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। রঞ্জন খেলা না-ছেড়ে তার দীর্ঘ খেলােয়াড় জীবনের একমাত্র ক্লাবের করা চরম অপমানের যােগ্য জবাব দেওয়ার আশায় অন্য বড়াে ক্লাবের হয়ে খেলার বিষয়ে মনস্থির করে ফেলে।

৩.৯ আপনি সব ব্যবস্থা করুন। কোন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরােধ জানানাে হয়েছে ?

উঃ শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যয়ের ‘পরাজয়’ গল্পে খেলােয়ার রঞ্জন পূর্বের ক্লাব ত্যাগ করে বিপক্ষ এক বড়াে ক্লাবে যােগদান করতে চায়। সে-ব্যাপারে ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনদাকে সমস্ত অফিসিয়াল কাজকর্ম বা ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য রঞ্জন অনুরােধ জানায়।

৪ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে : 

৪.১ রাগে ফুঁসছিল রঞ্জন।’—তার এই রাগের কারণ কী ?

উঃ শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ গল্পে বাংলা ও ভারতীয় দলের হয়ে ফুটবল খেলা স্ট্রাইকার রঞ্জনকে তার ক্লাব বারপুজোয় নিমন্ত্রণ করেনি, এমনকি ক্লাবের কোনাে সদস্য তাকে ফোনও করেনি। অথচ রঞ্জন এই ক্লাবের হয়ে খেলেছে দীর্ঘ পনেরাে বছর, ঝরিয়েছে ঘাম-রক্ত, ত্যাগ করেছে বিরাট অর্থের প্রলােভন, চাকরির প্রলােভন। অতি প্রিয় ক্লাবের কাছ থেকে বিনিময়ে একটু ভালােবাসা, সম্মানই সে চেয়েছিল। কিন্তু, বদলে সে পেয়েছিল অপমান ও অবহেলা। তাই সে রাগে ফুঁসছিল।

৪.২ ‘এত দুঃখ, এত ব্যথা সে কখনও পায়নি’—এই দুঃখ-যন্ত্রণার দিনে কীভাবে অতীতের সুন্দর দিন গুলির কথা রঞ্জনের মনে এসেছে ? 

উঃ আলােচ্য উক্তিটি শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরাজয় গল্প থেকে গৃহীত হয়েছে। গল্পের মুখ্য চরিত্র রঞ্জন একজন বিখ্যাত ফুটবলার। ক্লাবই ছিল তার ধ্যান জ্ঞান। কিন্তু ক্লাবের বারপুজোর মতাে গুরুত্বপূর্ণ দিনে সে নিমন্ত্রণ পায়নি, এমনকি কেউ তাকে ফোনও করেনি। আশাহত রঞ্জন প্রচণ্ড রাগে সমস্ত কাগজে একই বিষয় সম্পর্কে প্রতিবেদনগুলি পড়েছে এবং কারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল, তাও দেখেছে। রাগে, ক্ষোভে, দুঃখে সে ঘরের মধ্যে চরকির মতাে ঘুরছিল। বিগত পনেরাে বছর ধরে ক্লাবের প্রতি তার অবদানের কথা স্মরণ করতে করতে প্রসঙ্গক্রমে, ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারির তাকে ফোন করা, তার বাড়িতে গাড়ি পাঠানাে এমনকি বাড়িতে এসে তাকে নিমন্ত্রণ করে যাওয়া প্রভৃতি অতীতের সুন্দর দিনগুলির কথা রঞ্জনের মনে এসেছে।

৪.৩ রঞ্জনের ক্লাবের সঙ্গে তার পনেরাে বছরের সম্পর্ক কীভাবে ছিন্ন হল ? এই বিচ্ছেদের জন্য কাকে তােমার দায়ী বলে মনে হয় ? 

উঃ ‘পরাজয়’ গল্পের প্রধান চরিত্র ফুটবলার রঞ্জন সরকার খিদিরপুর থেকে দীর্ঘ পনেরাে বছর আগে কলকাতায় এসেছিল এবং তারপর থেকে কোনােদিন সে ক্লাব ছাড়েনি। কিন্তু ক্লাবকর্তারা ক্লাবের বারপুজোর মতাে গুরুত্বপূর্ণ দিনে তাকে নিমন্ত্রণ করেনি বা অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার দু-দিনের মধ্যে তার সঙ্গে যােগাযােগও করেননি। তাই রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে রঞ্জন নিজের ফুটবল প্রতিভার অমলিনতা প্রমাণ করতে চেয়েছিল। সেইজন্য সে অন্য বিপক্ষ বড়াে ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনদার সঙ্গে যােগাযােগ করে এবং সেই ক্লাবেই তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার জন্য যােগদান করে। এইভাবে রঞ্জনের পুরনাে ক্লাবের সঙ্গে তার দীর্ঘ পনেরাে বছরের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।

    ➡️ যে রঞ্জন তার ক্লাবপ্রীতির অনন্য নজির তৈরি করেছিল, সেই রঞ্জনকেই নিমন্ত্রণ না করে, ফোন নাকরে, ক্লাবকর্তারা তাকে অপমান করেছে। নান্টুদাকে জিজ্ঞাসা করাতে সে-ও রঞ্জনের না-আসার কারণ তার অজানা বলে জানিয়েছে। আসলে ক্লাবে রঞ্জনের প্রয়ােজন ফুরিয়ে গিয়েছে বা তাকে দরকার নেই, তা জানানাের জন্যই সচেতনভাবে এমন আচরণ করা হয়েছে। রঞ্জন তার ক্লাবের প্রতি আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্থ নয়, একটু সম্মান, ভালােবাসা ও আন্তরিকতাই চেয়েছিল। কিন্তু তা সে পায়নি। এক্ষেত্রে রঞ্জনের হয়তাে ক্লাবের সঙ্গে একবার যােগাযােগ করে প্রত্যক্ষভাবে তাদের মানসিকতাকে বােঝা উচিত ছিল। কিন্তু ক্লাব কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, অসম্মানের জবাব হিসেবে সম্পর্ক ত্যাগই বাতি ছিল। সে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছিল যে, ক্লাবের সঙ্গে তার সম্পর্কচ্ছেদের জন্য ক্লাবই দায়ী। 

৪.৪ কী করবে ও ঠিক করে ফেলেছে।’—এখানে কার কথা বলা হয়েছে ? সে কী ঠিক করে ফেলেছে ? তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সে পরবর্তী সময়ে চলতে পারল কি ?

উঃ
 শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ নামাঙ্কিত গল্পের উদ্ধৃত প্রশ্নটিতে বিখ্যাত ফুটবলার রঞ্জন সরকারের কথা বলা হয়েছে। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দুটো দিন অপেক্ষা করবে। এর মধ্যে ওর সঙ্গে যদি ক্লাবের কেউ যােগাযােগ নাকরে তাহলে ও ক্লাব ছেড়ে দেবে। কিন্তু খেলা ছাড়বে না, পরিবর্তে দেখিয়ে দেবে যে, সে ফুরিয়ে যায়নি।

    ➡️ রঞ্জন চেয়েছিল তার প্রতি তার ক্লাবের উপেক্ষার জবাব সে তার খেলার মধ্যে দিয়ে দেবে। অন্য বড়াে ক্লাবে যােগদান করার পর যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে দুই বড়াে দলের প্রথম লড়াইয়ে সে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করল। অসাধারণ ব্যাকভলিতে বিপক্ষের (পুরােনাে ক্লাব) জাল কাঁপিয়ে দিয়ে একাই ম্যাচ জিতিয়েছিল রঞ্জন। সুতরাং, সে যা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পরবর্তীকালে অত্যন্ত সফলভাবে তাই করেছিল।

৪.৫ তৃতীয় দিন রাত্তিরে টেলিফোন করল অন্য বড়াে ক্লাবের সেক্রেটারিকে। কোন্ দিন থেকে তৃতীয় দিন’-এর কথা বলা হয়েছে ? এই দিন-তিনেক সময় তার কীভাবে কেটেছে ? টেলিফোনটি করায় কোন পরিস্থিতি তৈরি হল ?

উঃ
 শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পরাজয়’ গল্প থেকে সংকলিত আলােচ্য প্রশ্নে ক্লাবের বারপুজোর পরের দিন থেকে বা রঞ্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিন থেকে ‘তৃতীয় দিন’-এর কথা বলা হয়েছে। 

     ➡️ ক্লাবের বারপুজোর পরেরদিন রঞ্জন চরম অপমানিত বােধ করেছিল, তাকে সেখানে না-ডাকায়। প্রচণ্ড অস্থিরতা ও মনখারাপ নিয়ে সে কোথায় যাবে স্থির করতে পারছিল না। অফিস থেকে বেরিয়ে সে গঙ্গার ধারে গিয়ে বসেছিল। গঙ্গার মনােরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, বৈচিত্রময় সৌন্দর্য তার রাগ, অভিমানকে কিছুটা প্রশমিত করেছিল। এইভাবে একটি দিন কেটে যাওয়ার পর পরের দ্বিতীয় দিনও সে ছটফট করে বেড়িয়েছিল। কারাের সঙ্গে ভালাে করে কথা না-বলে দু-দিন পুরাে সময় সে অফিসেই কাটিয়েছিল। বাড়িতে গিয়েও টেলিফোনের কাছাকাছি ছিল। এইভাবে প্রচণ্ড মানসিক টানাপােড়েনে তার দু-দিনব্যাপী প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছিল।

    ➡️ নিজের সঙ্গে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত রঞ্জন তৃতীয় দিন রাত্রে অন্য বড়াে বিপক্ষ ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনদাকে ফোন করায় তার প্রতি ক্লাবকৃত উপেক্ষা ও অপমানের প্রতিশােধ নেওয়ার এবং সর্বোপরি নিজেকে প্রমাণ করার একটি আদর্শ মঞ সে পায়। অর্থাৎ, টেলিফোনটি করায় তার প্রিয় ক্লাবের সঙ্গে সুদীর্ঘ পনেরাে বছরের সম্পর্ক ছেদের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।

৪.৬ দুই প্রধানের লড়াইকে কেন্দ্র করে অনেক বছর পরে কলকাতা আবার মেতে উঠেছে’ গল্প অনুসরণে সেই লড়াইয়ের উত্তেজনাপূর্ণ ফুটবল ম্যাচের বিবরণ দাও। 

উঃ ‘পরাজয়’ গল্পের উদ্ধৃত উক্তি অনুযায়ী সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে দুই বড়াে দলের প্রথম লড়াইকে কেন্দ্র করে শহরে এক টানটান উত্তেজনা ও উৎসাহ তৈরি হয়েছে। অনেকদিন পর সত্যিকারের একটি ভালাে খেলা দেখার জন্য টিকিটের হাহাকার পড়ে গিয়েছে। রেডিয়াে, টিভি, সংবাদপত্রের সাংবাদিকরাও ভীষণ ব্যস্ত। রঞ্জন যে ফুরিয়ে যায়নি, তা প্রমাণ করার জন্য প্রচণ্ড উত্তেজনায় সে খেলার মাঠে পৌঁছেছে। যুবভারতীর লক্ষাধিক দর্শকের সামনে দুই প্রধানের খেলা শুরু হয়। রঞ্জনকে সামলাতে তার পুরােনাে দলের খেলােয়াড়দের হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাত্র একজনকে সামনে রেখে বাকি দশ জনকেই ওরা নীচে নামিয়ে এনেছে। রঞ্জন একা লড়াই করলেও ওর সহ-খেলােয়াড়দের কাছ থেকে প্রয়ােজনীয় সাহায্য পায় না। এইভাবে গােলহীনভাবে শেষ হয় প্রথম পর্বের খেলা। দ্বিতীয়ার্ধে রঞ্জনের পুরােনাে ক্লাবের খেলােয়াড়রা রক্ষণাত্মক মনােভাব ছেড়ে আক্রমণে ঝাঁপিড়ে পড়ে। এতে রঞ্জনের কিছুটা লাভ হয়। পায়ে পায়ে ঘােরা খেলােয়াড়েরা খানিকটা সরে যায়। আক্রমণে ও প্রতি-আক্রমণে খেলাটি রীতিমতাে জমে ওঠে। রঞ্জন যেভাবে জ্বলে উঠতে চাইছে, তা সে পারছে না, অথচ এই সুযােগ নষ্ট করলে চলবে না। সে নিজেদের হাফলাইনের নীচে নেমে এলে ওদের গােলরক্ষক একটি বল পেয়ে ওর দিকে ছুড়ে দেয়। বলটি এগিয়ে নিয়ে যেতে যেতে সমরকে বলটা দিয়ে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায় দাঁড়ালে সমর ওকে বলটি কোনাকুনি বাড়িয়ে দেয়। রঞ্জন বলটি ধরে দুজনকে কাটিয়ে পেনাল্টি সীমানার কাছাকাছি এসেই সমরের মাথা লক্ষ করে লক্ করে। সমর হেড দিয়ে বলটি গােলের দিকে ভাসিয়ে দিতেই রঞ্জন চকিতে ঘুরে ব্যাক ভলি করে এবং বল বিপক্ষের জালে আটকে যায়। সমর্থকেরা উল্লাসে ফেটে পড়ে এবং দলের খেলােয়াড়রা রঞ্জনকে নিয়ে মেতে ওঠে। এইভাবে রঞ্জনের গােলে তার প্রতিপক্ষ পুরনাে দলের পরাজয় ঘটে। 

৪.৭ “বলটা বুলেটের মতাে ছুটে গিয়ে ঢুকে গেল গােলে’’ –এরপর সমর্থক আর সহ-খেলােয়াড়দের উল্লাসের বিপ্রতীপে রঞ্জনের বিষণ্ণতার কোন রূপ ফুটে উঠেছে ?

উঃ শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরাজয়’ গল্পে খেলােয়াড় রঞ্জন সরকার তার আগের ক্লাবের সব অপমান, অবহেলার মধুর প্রতিশােধ নিয়েছে খেলার মাঠে তাদেরকে পরাজিত করে। সে গােল করার সঙ্গে সঙ্গে সমর্থক আর সহ-খেলােয়াড়রা উল্লাসে মেতে উঠল। যুবভারতীর গ্যালারি বাজি আর পটকার শব্দে মুখরিত হলেও রঞ্জন যেন মন থেকে খুশি হতে পারেনি। একটা চাপা বেদনা ওকে ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করে ফেলল। সাজঘরে তাকে নিয়ে হইচই, উল্লাস, বিভিন্ন ব্যক্তির অভিনন্দন—কিছুই ওর ভালাে লাগছিল না। আসলে যে-ক্লাবের হাসি-কান্না-সুখ-দুঃখের সঙ্গে সে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিল, আজ সে নিজেই তার (ক্লাবের) পরাজয়ের কারণ হয়েছে। এই যন্ত্রণাটাকেই উপলদ্ধি করে রঞ্জন ম্যাচের পরে মাথা নীচু করে সাজঘরে ঢুকে একটি চেয়ারে বসে পড়ল। সাংবাদিকরা রঞ্জনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও রঞ্জন কথা বলতে চায়নি, কারণ সে তাদেরকে প্রকৃত সত্য কথা বলতে পারবে না। তাই সেক্রেটারি স্বপনদাকে বলে পাশের ঘরের একটি বেঞ্চিতে দু-হাতে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ল। রঞ্জন অবাক হয়ে অনুভব করল, ওর দু-চোখ। দিয়ে জল ঝরছে। যে-ক্লাব তাকে সম্মান, খ্যাতি, অর্থ সব দিয়েছে, সেই ক্লাবের সঙ্গে তার বিচ্ছেদে সে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। রাগে-দুঃখে-অভিমানে সে ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে এলেও সব i অপমান, সব অবহেলার বদলা নেওয়ার মুহূর্তে রঞ্জন নিজের কাছেই নিজে হেরে গেল। আসলে সে তার ক্লাবের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ও নিবেদিতপ্রাণ। তাই পয়লা বৈশাখের বারপুজোয় তাকে না-ডাকার অপমান ও কষ্টটা আজ কান্না হয়ে বেরিয়ে পড়ল। এ যেন চেনা মানুষের মধ্যে দেখা এক অন্য রঞ্জন। গল্পের ঘটনা বিশ্লেষণ করে ‘পরাজয়’ গল্পের নামকরণের সার্থকতা প্রতিপন্ন করাে।

৫ নীচের শব্দগুলির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিচার করাে : চরকি, সক্কাল, নেমন্তন্ন, নম্বর, ছুটোছুটি।

➡️ চরকি = চক্র > চক্কোর > চরকি (বর্ণ বিপর্যয়)।

➡️ সক্কাল = সকাল > সক্কাল (ব্যঞ্জনাগম)।

➡️ নেমন্তন্ন = নিমন্ত্রণ > নেমন্তন্ন (সমীভবন )।

➡️ নম্বর = নাম্বার > নম্বর (স্বরলােপ)।

➡️ ছুটোছুটি = ছােটাছুটি > ছুটোছুটি (স্বরসংগতি)।

৬ নীচের বাক্যগুলি থেকে সন্ধিবদ্ধপদ খুঁজে নিয়ে সন্ধি বিচ্ছেদ করাে :

৬.১ ওর মনের মধ্যে জমে ওঠা দুঃখ আর অভিমান রূপান্তরিত হয়েছিল রাগে। উঃ রূপান্তরিত = রূপ + অন্তরিত।

৬.২ ক্লাবের কর্তাদের হাবভাব দেখে সে পরিষ্কার বুঝতে পেরেছে। উঃ পরিষ্কার = পরিঃ + কার।

৬.৩ কেউ একটা টেলিফোন পর্যন্ত করল না। উঃ  পর্যন্ত = পরি + অন্ত।

৬.৪ তার পুরস্কার এতদিনে পেলাম স্বপনদা।  উঃ পুরস্কার = পুরঃ + কার।
 
৬.৫ ওরা যা দিয়েছে তাতেই সন্তুষ্ট ছিলাম।  উঃ সন্তুষ্ট = সম্ + তুষ্ট।

৭ নিম্নরেখাঙ্কিত অংশের কারক বিভক্তি নির্দেশ করাে :

৭.১ রঞ্জন ঘরের মধ্যে চরকির মতাে ঘুরছে।

উঃ রঞ্জন = কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি। 

৭.২ গাড়ি পাঠানাে তত দূরের কথা। 

উঃ গাড়ি = কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।

৭.৩ সারাটা সকাল ও ছটফট করে বেড়িয়েছে।

উঃ
 সকাল = অধিকরণ কারকে শূন্য বিভক্তি। 

৭.৪ কানে ভেসে আসে পাখির ডাক।

উঃ
 পাখির = সম্বন্ধপদে ‘র’ বিভক্তি। 

৭.৫ রঞ্জন টেলিফোনটা রেখে দিল।

উঃ টেলিফোনটা = কর্মকারকে ‘টা’ নির্দেশক।

৮ নীচের বাক্যগুলির ক্রিয়ার কাল নির্দেশ করাে :

৮.১ গুরুত্ব দেয়নি।

উঃ
 সাধারণ অতীত কাল।

৮.২ তুই চলে আয়।

উঃ
 বর্তমান অনুজ্ঞা।

৮.৩ কাল সকালে আমায় কলকাতার বাইরে যেতে হয়েছিল।

উঃ
 পুরাঘটিত অতীত কাল।

৮.৪ আমি রঞ্জন সরকার বলছি

উঃ ঘটমান বর্তমান কাল।

৮.৫ রঞ্জনের মুখে খেলে গেল ম্লান হাসি।

উঃ পুরাঘটিত অতীত কাল। 

৯ নির্দেশ অনুসারে বাক্য পরিবর্তন করাে :

৯.১ এত দুঃখ, এত ব্যথা সে কখনও পায়নি। (হা-সূচক বাক্যে) 

উঃ এত দুঃখ, এত ব্যথা সে এবারই পেল।

৯.২ সিদ্ধান্তটা নেওয়ার পর রঞ্জনের মন অনেকটা শান্ত হল। (জটিল বাক্যে)

উঃ যখন রঞ্জন সিদ্ধান্তটা নিল তখন তার মন অনেকটা শান্ত হল।

৯.৩ সেই মুহূর্তে কলিংবেলটা বেজে উঠল। (যৌগিক বাক্যে)

উঃ সেই মুহূর্তটি এল এবং কলিংবেলটা বেজে উঠল। 

৯.৪ রঞ্জনের গলাটা একটু কেঁপে উঠল।(না-সূচক বাক্যে)

উঃ রঞ্জনের গলাটা একটু না-কেঁপে থাকল না।

৯.৫ যারা এতক্ষণ দেয়ালে পিঠ দিয়ে লড়ছিল তারাই এখন রুখে দাঁড়াল। (সরল বাক্যে)

উঃ এতক্ষণ দেয়ালে পিঠ দিয়ে লড়তে থাকা খেলােয়াড়রাই এখন রুখে দাঁড়াল। 

আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। “.পরাজয় শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর” এরকম আরো অনেক বিষয় জানতে হলে অব্যশয় আমাদের অন্যান্য পোস্ট পড়তে ভুলবেন না। ধন্যবাদ ❤

Leave a Comment