ভাইরাস কাকে বলে | ভাইরাসের অবস্থান,উৎপত্তি,প্রকৃতি,আকার

ভাইরাস কাকে বলে: আজকে আমরা জানবো ভাইরাস কাকে বলে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আশা করি আপনারা এই প্রশ্নের উত্তর ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন।

ভাইরাস কাকে বলে,ভাইরাসের অবস্থান,ভাইরাস উৎপত্তি,ভাইরাস প্রকৃতি,ভাইরাস আকার

ভাইরাস কাকে বলে,ভাইরাসের অবস্থান,ভাইরাস উৎপত্তি,ভাইরাস প্রকৃতি,ভাইরাস আকার
ভাইরাস কাকে বলে

ভাইরাস কাকে বলে?

ভাইরাস এর সংজ্ঞা: নিউক্লীয় প্রােটিন নির্মিত , অতি ক্ষুদ্র , অকোশীয় , রােগ সৃষ্টিকারী , বাধ্যতামূলক পরজীবী , কেবলমাত্র পােষক কোশে প্রজননক্ষম , ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দৃশ্যমান জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের বস্তুকে ভাইরাস বলা হয়।

OR: (Virus) ভাইরাস একপ্রকার অতিক্ষুদ্র জৈব কণা বা অণুজীব যারা জীবিত কোষের ভিতরেই মাত্র বংশবৃদ্ধি করতে পারে এদের কে ভাইরাস বলা হয়। এরা অতি- আণুবীক্ষণিক এবং অকোষীয়। ভাইরাসকে জীব হিসেবে বিবেচিত হবে কিনা, এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে দ্বিমত আছে। ভাইরাস মানুষ,পশু-পাখি, উদ্ভিদের বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী। এমনকি, কিছু ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়ার মধ্যে বংশবৃদ্ধি করে- এদের ব্যাক্টেরিওফাজ (Bacteriophage) বলা হয়।

ভাইরাস ( virus ) একটি ল্যাটিন শব্দ , যার অর্থ ‘ বিষ ’ ( poison ) । ভাইরাস একপ্রকার জীবকণা যা কেবল সজীব কোশেই নিজেদের অস্তিত্ব প্রকাশ করতে পারে ।

সজীব কোশের বাইরে এরা জড়ের মতাে আচরণ করে । তাই ভাইরাসকে জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের বস্তু বলা হয় । ভাইরাসের একককে ভিরিয়ন ( virion ) বলা হয় ।

ভাইরাস এত ক্ষুদ্র যে কেবলমাত্র 2Å রেজলুশন ( resolution ) ক্ষমতা সম্পন্ন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে এরা দৃশ্যমান ।

1892 খ্রিস্টাব্দে রুশ বিজ্ঞানী দিমিত্রি এ. আইভানােস্কি ( Dimitri A. Ivanowaski ) তামাক পাতার মােজেইক রােগের কারণ হিসেবে এমন এক সংক্রমণ বস্তুর কথা উল্লেখ করেছিলেন যা ব্যাকটেরিয়ার থেকেও ছােটো এবং ব্যাকটেরিয়া-ফিলটার দ্বারা ছাঁকা তরল পদার্থের মধ্যে থেকে ওই রােগ সৃষ্টি করতে সক্ষম।

1898 সালে ডাচ বিজ্ঞানী বেইজেরিঙ্ক ( M. W. Beijerinck ) প্রথম ‘ ভাইরাস ‘ নামটি প্রবর্তন করেন ।

ভাইরাসের অবস্থান ( Occurrence of Virus )

ভাইরাস জল , মাটি , বায়ু সর্বত্রই অবস্থান করে । এরা বিভিন্ন গােষ্ঠীভুক্ত উদ্ভিদ ( শৈবাল , ছত্রাক , ফার্ন , ব্যক্তবীজী ও গুপ্তবীজী ) ও প্রাণীদেহে ( আদ্যপ্রাণী , পতঙ্গ , মাছ , উভচর , পক্ষী , স্তন্যপায়ী ও মানুষ ) পূর্ণ পরজীবীরূপে বাস করে এবং মারাত্মক রােগ সৃষ্টি করে ।

পােষক কোশের বাইরে নিষ্ক্রিয় জড় বস্তু রূপে অবস্থান করে এবং ভিতরে সক্রিয় ও সজীব হয়ে ওঠে ।

ভাইরাসের উৎপত্তি ( Origin of Virus )

ভাইরাসের গঠনগত দুটি মুখ্য উপাদান হল প্রােটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিড ।

এ থেকে অনুমান করা যায় যে ভাইরাসের উৎপত্তি জৈব অভিব্যক্তির পথেই ঘটেছে ।

বিজ্ঞানীদের মধ্যে ভাইরাসের উৎপত্তি সম্পর্কিত তিনটি মতবাদ প্রচলিত আছে।

ভাইরাসের প্রকৃতি ( Nature of Virus )

  1. ভাইরাসের জীবনচক্রে দুটি দশা প্রধান — অন্তঃকোশীয় ও বহিঃকোশীয় । অন্তঃকোশীয় দশায় সজীব বস্তুর মতাে আচরণ করে । বহিঃকোশীয় দশায় সংক্রমণযােগ্য নিষ্ক্রিয় জড় বস্তুর মতাে আচরণ করে ।
  2. প্রতিটি ভিরিয়ন কণার সংক্রমণ ক্ষমতা বহিঃকোশীয় দশায় বিদ্যমান ।
  3. ভাইরাসে সাইটোপ্লাজম , রাইবােজোম , প্রােটিন সংশ্লেষ , বিপাক ক্রিয়া অনুপস্থিত ।
  4. ভাইরাসের মধ্যে স্বল্প দু-একটি উৎসেচক এর উপস্থিতি লক্ষণীয় ।
  5. ভাইরাসের আয়তন বৃদ্ধি ঘটে না , উত্তেজনায় সাড়া দেয় না এবং চলন ক্ষমতা নেই ।
  6. বিশুদ্ধ ভাইরাস কণাকে কেলাসিত করা যায় ।
  7. বহু বছর সংরক্ষণ করার পরেও ভাইরাসের সক্রিয়তা বজায় থাকে
  8. ভাইরাসের দেহে যে-কোনাে একপ্রকার নিউক্লিক অ্যাসিড থাকে । ভাইরাসের ক্ষেত্রে DNA দ্বিতন্ত্রী বা একতন্ত্রী হতে পারে , আবার RNA একতন্ত্রী বা দ্বিতন্ত্রী হতে পারে ।
  9. ভাইরাস পােষক কোশে প্রবেশের পর নিজেদের বংশ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে নিউক্লিক অ্যাসিডের সাহায্যে ।
  10. ভাইরাস পােষক কোশ ছাড়া বংশ বিস্তার করতে পারে না , তাই ভাইরাসকে বাধ্যতামূলক পরজীবী বলে ।

Also Read: লেনদেন কাকে বলে

ভাইরাসের আকার ( Shape of Virus )

দন্ডাকার ( Rod shaped )

টোবাকো মোজাইক ভাইরাস , আলুর ব্লাইট , আলফালফা , মোজাইক ভাইরাস প্রভৃতি দন্ডাকার ভাইরাস । এদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে 300nm এবং 18nm এর মধ্যে ।

গােলাকার ( Spherical )

এই প্রকার ভাইরাস প্রধানত গােলাকার হলেও পরস্পরের মধ্যে স্বল্প আকৃতিগত তারতম্য দেখা যায় । রাইনোভাইরাস , ইনফ্লুয়েঞ্জা , পােলিয়াে , টিউমার , এনকেফালাইটিস , মাম্পস প্রভৃতি রােগের ভাইরাস গােলাকার । এদের ব্যাস 10nm-250nm পর্যন্ত হয় ।

ঘনকাকার ( Cuboidal )

ভ্যাকসিনিয়া , ভ্যারিওলা প্রভৃতি বসন্ত রােগের ভাইরাস , হারপিস ভাইরাস এই আকৃতি বিশিষ্ট । এদের আয়তন সাধারণত 100nm-300nm হয় ।

শুক্রাণু বা ব্যাঙাচি আকার ( Spermatozoid or Tadpole like ) :

ব্যাকটেরিয়া আক্রমণকারী ফাজ ভাইরাস T2 , বা T4 , এই আকৃতি বিশিষ্ট । এদের দেহ মস্তক ও পুচ্ছ অংশ নিয়ে গঠিত । মস্তক সাধারণত 95nm x 65nm এবং পুচ্ছ 110nm x 25nm আয়তনের হয় ।

## বৃহত্তম উদ্ভিদ ভাইরাস : বিট ইয়েলো ভাইরাস –1250nm x 40nm ।

## সবচেয়ে ছােটো আয়তনের ভাইরাস : রাইনোভাইরাস —10nm ব্যাস যুক্ত ।

##সবচেয়ে বড়াে প্রাণী ভাইরাস : বসন্ত ভাইরাস ( ভ্যাকসিনিয়া , ভ্যারিওলা ) –300nm – 350nm ।

Also Read: ই কমার্স কাকে বলে

ভাইরাসের প্রতিসাম্য ( Symmetry of Virus )

ভাইরাস ক্যাপসিডে ক্যাপসসামিয়ারের বিন্যাস ( প্রতিসাম্য ) অনুযায়ী ভাইরাসকে প্রধানত দু ভাগে ভাগ করা হয়—

ঘনকাকার ( Cuboidal icosahedral )

এক্ষেত্রে ক্যাপসিড অংশ অনেকগুলি বহুভুজাকার খণ্ডক জুড়ে তৈরি হয় । যথা অ্যাডিনাে ভাইরাস , ভ্যাকসিনিয়া , হারপিস ভাইরাসে ক্যাপসিড 20 টি ত্রিভুজাকৃতি তল দিয়ে তৈরি , একে বিংশতি তলক ( Icosahedral ) বলে ।

সর্পিলাকার ( Helical )

এক্ষেত্রে ক্যাপসিডে ক্যাপসসামিয়ার গুলি নিউক্লিক অ্যাসিডের সাথে সর্পিলাকারে বিন্যস্ত থাকে । যথা TMV , ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ।

অনেক সময় ভাইরাসের দেহে দুরকম গঠন বিন্যাস দেখা যায় , যেমন — ব্যাকটেরিওফাজ T2 , T5 ভাইরাসের মস্তক ঘনকাকার এবং পুচ্ছ সর্পিলাকার । এরকম ভাইরাসকে ডুয়াল ভাইরাস ( dual virus ) বলে।

পরজীবী মতবাদ

এই মতবাদ অনুসারে ভাইরাস প্রথমে কোশীয় জীব ছিল কিন্তু দীর্ঘকাল পরজীবী হিসেবে বাস করে তাদের মধ্যে পরিবর্তন ও সরলীকরণ ঘটায় বর্তমানের ভাইরাসের উৎপত্তি ঘটেছে ।

অকোশীয় মতবাদ

জৈব বিবর্তনের পথে কোশ উৎপত্তির সমসাময়িক কালে ভিন্ন পথ ধরে অকোশীয় কোনাে বস্তু থেকে ভাইরাসের উৎপত্তি ঘটেছে।

প্রজনন বস্তু মতবাদ

কোশের প্রজনন বস্তুর খণ্ডাংশ থেকে উৎপত্তি হয়ে ভাইরাস দ্রুত বংশবিস্তার করে এবং সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটায় । ফলে কোশের মৃত্যু ঘটে এবং ভাইরাস বাইরে চলে আসে ।

আধুনিক বিজ্ঞানীদের মতে জৈব বিবর্তনের শেষ পর্যায়ে নিউক্লীয়-প্রােটিন কণা থেকে প্রোটোভাইরাস এর উৎপত্তি ঘটে , পরবর্তী পর্যায়ে ভাইরাসের উদ্ভব ঘটে । নিউক্লীয় প্রোটিন → প্রােটোভাইরাস → ভাইরাস ।

তো আজকে আমরা দেখলাম যে ভাইরাস কাকে বলে এবং আরো অনেক বিস্তারিত বিষয় । যদি পোস্ট ভালো লাগে তাহলে অব্যশয়, আমাদের বাকি পোস্ট গুলো ভিসিট করতে ভুলবেন না!

Leave a Comment