আজকের আমরা ”যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা” ভাবসম্প্রসারণটি পড়ব। ভাবসম্প্রসারণ পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপৃর্ণ। বিশেষ করে এই ভাবসম্প্রসারণটি খুবই গুরুত্বপৃর্ণ।
যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা
মূলভাব : সুস্থ সহযোগিতা সমাজবন্ধনের মূল সূত্র। মানুষে মানুষে আত্মিক যোগাযোগের মাধ্যমেই সমাজবন্ধনের ভিত্তি দৃঢ় হয়। এর অভাবে সমাজে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব-সংঘাত, হানাহানি।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকে এক জঘন্য হিংসা প্রবৃত্তি, যা তাকে যুদ্ধাভিমুখী করে তোলে। ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তির, জাতির বিপক্ষে জাতির তথা দেশের বিপরীতে দেশের সংঘাত মানবতার অবমাননাই ঘোষিত করে। যুদ্ধই মানুষের অন্যতম আদিম রিপু- যুদ্ধই মানুষের মাঝে সাময়িক পশুত্ব এনে দেয়। অপরকে পর্যুদস্ত করে, লাঞ্ছিত করে নিজের প্রতিষ্ঠা ঘটানোই যুদ্ধের একমাত্র লক্ষ্য। পেশিশক্তি পশুশক্তির নামান্তর। বলীয়ানের সঙ্গে লড়াইয়ে দুর্বল বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। একদিন পিঠ ঠেকে যায় দেওয়ালে, তখন চরম বিপর্যয় নেমে আসে। এভাবেই যুদ্ধের মাধ্যমে মানবতাবোধের অবক্ষয় হয়। মনুষ্যত্বের অবহেলার সাধনায় কে কত দক্ষ, কত পোক্ত- তাই নির্ণয় করতে জমে ওঠে যুদ্ধের আসর। শান্তিপ্রিয় নিরীহ জাতির ভাগ্যে নেমে আসে বিপর্যয়। প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে না গিয়েও যুদ্ধের বিষময় ফল প্রত্যক্ষভাবে মানুষ লাঞ্ছিত করে।
মন্তব্য : যুদ্ধ মানুষের এমন এক সর্বনাশা খেলা যার অবসান হয় তখনই, যখন চারদিকে নেমে আসে মৃত্যুপুরীর স্তব্ধতা। তাই আজ বিশ্বের প্রতিটি সচেতন মানুষের একান্ত দাবি- ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই’।
অন্য বই থেকে বিকল্প
মূলভাব : যুদ্ধ মানে প্রলয়, যুদ্ধ মানে ধ্বংস। ক্রোধ, লোভ, ক্ষমতার দম্ভ প্রভৃতির বশবর্তী হয়ে মানুষ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠে। বস্তুত যুদ্ধ যেন শত্রুর সাথে শত্রুর খেলা।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষকে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকে মানুষ নানাভাবে টিকে থাকার জন্য যুদ্ধ করে আসছে। কিন্তু টিকে থাকার জন্য আদিকালের সেই যুদ্ধ আর আজকের সুসভ্য মানুষের অসভ্য বর্বরোচিত প্রতিহিংসা, লোভ, ক্ষমতার দম্ভ বহিঃপ্রকাশের যুদ্ধ এক নয়। তখন মানুষ যুদ্ধ করত পশুর সাথে আর এখন মানুষ যুদ্ধ করে মানুষের সাথে। ভাইয়ে-ভাইয়ে, গোষ্ঠীতে-গোষ্ঠীতে, দেশে-দেশে, জাতিতে-জাতিতে আজ অহরহ যুদ্ধ। যুদ্ধ ছাড়া যেন মানুষ স্থির হতে পারছে না। এমন কোন দিন নেই, যেদিনটিতে দু’চার’টি দেশে যুদ্ধ হচ্ছে না, দু চার লাখ মানুষের শোণিতে ধরাতল রঞ্জিত হচ্ছে না। অথচ যারা যুদ্ধের চাবিকাঠি নাড়ে তাদের কাছে যেন সেটা পুতুল খেলার মত। তারা যেন শত্রুতে শত্রুতে খেলা করে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা আমরা জানি। আধুনিক যুদ্ধের ভয়াবহতাও আমরা ভালো করেই বুঝি। কিন্তু তারপরও আমাদের ক্ষমতা লিপ্সুদের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব কাটেনি। অন্যের অধিকার খর্ব করার জন্য আমাদের শাসকগোষ্ঠী সদা সাজোয়ান। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই আমরা যার জ্বলন্ত প্রমাণ পেলাম ইরাকে ইঙ্গ-মার্কিন হামলার মধ্য দিয়ে। এ তো ক’দিন আগে শক্তিধর ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর কাছে হেরে গেল স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেন। স্বাধীনতা হারাল ইরাক পরিণত হল ইঙ্গ-মার্কিনীদের আধুনিক কালোনীতে। প্রাণ হারালো অসংখ্য নিরীহ মানুষ। ইরাকিদের রক্তের দাগ এখনও মাটি সম্পূর্ণ শুষে নিতে পারিনি। আজও রক্ত ঝরছেই সেখানে। অথচ যুদ্ধের হোতা জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং টনি ব্লেয়ার হেসে-খেলেই দেখছেন সে দৃশ্য। শত্রু অজুহাতে সাদ্দামকে তারা শক্তি দিয়ে কব্জা করেছেন। তারা যখন খুশি যাকে খুশি আক্রমণের হুমকি দিচ্ছেন। বস্তুত সারা বিশ্বে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলো যেন তাদের খেলার পাত্র, সারা বিশ্বের নিরীহ মানুষগুলোর রক্তখেলা যেন তাদের প্রমোদের বিষয়। আর সে কারণেই বলা হয়েছে যে, যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা। যুদ্ধ হচ্ছে যোদ্ধাদের খেয়ালীপনা, শত্রু শত্রু খেলা। যার শিকার হয় অধিকাংশ সাধারণ মানুষ।
Also Read: শিক্ষাই শক্তি শিক্ষাই মুক্তি
অন্য বই থেকে বিকল্প 2
মূলভাব: পৃথিবীর ইতিহাস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যুগে যুগে কালে কালে মানুষের মধ্যে নানাবিধ যুদ্ধ-বিগ্রহ ও সংগ্রামের কারণে। কখনো অধিকার কখনো ধর্ম আবার কখনো উচ্চাভিলাষ নানা যুদ্ধের জন্ম দিয়েছে। যুদ্ধ যেমন একদিকে সভ্যতা কে ধ্বংস করেছে তেমনি অন্যদিকে নতুন মতবাদের জন্ম দিয়ে নতুন পথও মানুষকে দেখিয়েছে।
সম্প্রসারিত ভাব: মানুষের মধ্যে যখনই ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টা তৈরি হয়েছে তখন থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত। সংঘর্ষ হয়েছে বেশি শক্তি থেকে আধিপত্য বিস্তার থেকে বা ব্যক্তিগত লোভ লালসা থেকে। প্রাচীন পৃথিবীতে মানুষ একক বা গোষ্ঠীগত যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে এতে কখনো সীমানার আয়তন বেড়েছে আবার কখনো ব্যক্তি ক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর ক্রমোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের ভয়াবহতা ও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা মহাভারতের যুদ্ধের কথা জানি; গ্রিক ও ট্রয় যুদ্ধের কথা জানি। ট্রয়ের সমৃদ্ধ নগরী ধুলোয় পরিণত হয়েছিল এ যুদ্ধে। আমরা বদরের যুদ্ধের কথা জানি; ক্রুসেডের কথা জানি। ধর্ম রক্ষায় সেখানে প্রাণ দিয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। বন্দুক আবিষ্কারের পর যুদ্ধ আরো ভয়াবহ রূপ পায়। বিশেষত প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানুষ তথা মানবতা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পৃথিবীর মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয় এবং তারা একে অপরের আত্মার শত্রুতে পরিণত হয়। বাঙালির জন্মাবধি তার অধিকার অর্জনের যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়েছে বারবার। সর্বশেষ 971 সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা লাভ করেছে। পৃথিবীর বুকে নিজের আত্মপরিচয় কে সমুন্নত করেছে। যদিও প্রতিটি যুদ্ধেই পৃথিবীর কিছু নতুন অবস্থায় পরিবর্তিত হয়েছে তবুও যুদ্ধ মানবতার জন্য সুখকর কিছু নয়। তা মানুষের সঙ্গে মানুষের বিভাজন সৃষ্টি করেছে এবং মানুষকেই মানবতার সবচেয়ে বড় শত্রু তে পরিণত করেছে। মানুষের সুকুমার বৃত্তি কে ধ্বংস করেছে যুদ্ধ। বহু প্রাণ অকালে অপ্রয়োজনে যুদ্ধের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে; মানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।
মন্তব্য: যুদ্ধ শুধু ব্যক্তি ব্যক্তি বা দেশে দেশে হয় না তা প্রাণে প্রাণে ও হয় আর এই প্রাণের যুদ্ধ যখন প্রাণান্তকর হয় তখন আর তার কোন বন্ধন ইয়ার কার্যকর হয় না পরিচিত পৃথিবীর পরিস্থিতি তখন শত্রুতে পরিণত হয় সবচেয়ে বড় শত্রু হয় মানুষ নিজেই তার সৃষ্টি মানবতার।
আশা করি তোমাদের এই ভাবসম্প্রসারণটি ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবে।