যৌতুক প্রথা এক সামাজিক ব্যাধি -ভাবসম্প্রসারণ [নতুন]

আজকের আমরা ”যৌতুক প্রথা এক সামাজিক ব্যাধি” ভাবসম্প্রসারণটি পড়ব। ভাবসম্প্রসারণ পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপৃর্ণ। বিশেষ করে এই ভাবসম্প্রসারণটি খুবই গুরুত্বপৃর্ণ।

যৌতুক প্রথা এক সামাজিক ব্যাধি -ভাবসম্প্রসারণ [নতুন]

যৌতুক প্রথা এক সামাজিক ব্যাধি

মূলভাব: মানুষের কল্যাণে সমাজে নানান প্রথা চালু আছে। আর এ সুযােগে কিছু স্বার্থান্বেষী লােক কতিপয় কুপ্রথা চালু করে বসে আছে। সমাজে প্রচলিত প্রথাগুলাের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হচ্ছে যৌতুক। 

সম্প্রসারিত ভাব: যৌতুক ভয়ানক ব্যাধির মতাে সমাজ মানসের পচন ধরিয়ে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে উন্মােচিত করে এবং নারীর মানবিক সত্তাকে অবমূল্যায়িত করে মানব সভ্যতাকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। মানব সভ্যতা বিকাশে নারী-পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। পুরুষের পক্ষে নারীর সাহায্য ছাড়া কোনাে কিছুই করা সম্ভব নয়। কিন্তু তারপরও আমরা মধ্যযুগীয় বর্বর চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারি না। যে নারী ছাড়া আমাদের ঘর গৃহস্থালির সমস্ত কিছু অচল হয়ে পড়ে বিপদে দিশেহারা হয়ে পড়ি, সেই নারীকে আমরা আজত পশুর মতাে কেনাবেচা করি। দাম্পত্য সম্পর্কের মতাে এমন একটা মধুর সম্পর্ক স্থাপন করতে গিয়ে আমরা অর্থবিত্ত চেয়ে বসি রাঘববােয়ালের মতাে। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার টুটি চেপে ধরে কেড়ে নিয়ে আসি যতদূর সম্ভব। বিয়ের নামে প্রচলিত এই কেনাবেচার প্রথাকে বলা হয় পণপ্রথা বা যৌতুক প্রথা, যার বলি হচ্ছে আমাদের সমাজের অধিকাংশ নারী। যৌতুকের দায়বদ্ধতা এড়াতে ভিটেমাটি বিক্রি করতে হয় দরিদ্র পিতাকে। যৌতুক প্রদানের ব্যর্থতায় সংসার ভাঙে নববধূর। মধুর স্বপ্ন বিষিয়ে ওঠে জীবনের শুরুতেই। অত্যাচারিত হয়ে আত্ম-বিসর্জনের পথও বেছে নিতে হয় অনেককে। পত্রিকা খুললেই এসব সংবাদ আর দশটা সাধারণ সংবাদের মতােই চোখে পড়ে। যৌতুক প্রথা আগে হিন্দু সমাজে সীমাবদ্ধ ছিল, ক্রমে তা মুসলিম সমাজকেও কলুষিত করেছে। বর্তমানে এটি হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সব সমাজেই প্রচলিত। এটি একটি পুরানাে কুপ্রথা, কিন্তু আমাদের দেশ, জাতি, সমাজ আজ সভ্যতার চরম শিখরে এসেও এটি পরিত্যাগ করতে পারছে না। সত্যিই এ বড়াে লজ্জার, এ বড়াে অপমানের। মানুষ যেমন ক্যানসারে আক্রান্ত হলে তা ক্রমেই বেড়ে চলে, তাঁর হাত থেকে কোনােক্রমেই পরিত্রাণ লাভ করা যায় না, যৌতুক নামক ভয়ানক এ সামাজিক ব্যাধি থেকেও তেমনই আমরা কেউই রেহাই পাচ্ছি না। একদিকে যেমন আমরা নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, তেমনই অন্যকে ক্ষতি করছি। আসলে এ সামাজিক ব্যাধিটি আমাদের মানসিকতারও পচন ধরিয়েছে। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত, অন্যথায় মানবতার অপমানের পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। এজন্য প্রয়ােজন সর্বাত্ম আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন এবং বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলন। বিশেষ করে নারীদেরকে সচেতন করে তােলা।

মন্তব্য: নারীর মূল্যবােধ জাগ্রত করা, তাদেরকে স্বাবলম্বী করে তােলা এবং অধিকার সচেতন করে তােলার মাধ্যমেই এই ব্যাধির চিকিৎসা করতে হবে, অন্যথায় এর কালাে থাবা থেকে আমরা কেউ মুক্তি পাব না।

অন্য বই থেকে বিকল্প ১

মূলভাব: যৌতুক আধুনিক সমাজজীবনের এক মারাত্মক ব্যাধি। বিয়েতে মেয়ের অভিভাবকের ওপর যৌতুকের চাপ সৃষ্টি করা আমাদের সমাজের একটা স্বীকৃত নির্যাতনপন্থা। এ নির্যাতনের মধ্য দিয়ে নর-নারীর জীবনে যে বন্ধন সৃষ্টি হয় তা জীবনে সুখ বয়ে আনতে পারে না। তাই যৌতুক জীবনধারণের পথে বিরাট অভিশাপ।

ভাবসম্প্রসারণ: আধুনিক যুগ নর-নারীর অধিকারের সমতা বিধানের যুগ। কিন্তু আজও সমাজদেহে যৌতুকের দুষ্ট ক্ষত অনেক নারীর স্বপ্নভঙ্গের কারণ। এ নিষ্ঠুর প্রথা যুগ যুগ ধরে মেয়েদের অধিকারকে অস্বীকার করছে, ক্ষুন্ন করছে তাদের মানবিক মর্যাদাকে। একদিকে যৌতুক দিতে গিয়ে মেয়ের পিতা হন নিঃস্ব, অন্যদিকে মেয়ের জীবনে নেমে আসে লাঞ্ছনার আঘাত। যৌতুকের কারণে দাম্পত্য জীবনের মাধুর্য, পারিবারিক কল্যাণ, সম্পর্কের সৌন্দর্য আর সামাজিক আদর্শবোধ- সবই কলুষিত হয়। পাত্র ও পাত্রপক্ষের মধ্যে যৌতুকের লালসা দেখে কন্যা হারিয়ে ফেলে সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাবােধ । অন্যদিকে যৌতুকের পরিমাণ মনঃপুত না হলে কন্যাকে পাত্রের পরিবারে হতে হয় নিগৃহীত অনেক অক্ষম পিতা পাত্রপক্ষের দাবি মেটাতে না পারলে স্বামী এবং তার পরিবার নববধূর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। এক সময় নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পেতে বধূ বেছে নেয় আত্মহননের পথ । এ যেন অসভ্য যুগের বর্বরতাই প্রকাশ । অনেক সময় সুন্দর জীবনের স্বপ্ন নিয়ে যে মেয়ে প্রবেশ করে শ্বশুরবাড়িতে, মেহেদির রং না মুছতেই সে ফিরে আসে পিতৃগৃহে। অর্থের মূল্যে মেয়েদের এ মূল্য নির্ধারণ আজকের সভ্যসমাজে এক ঘৃণ্য কুপ্রথা। মুখে নারীর অধিকারের বাণী প্রচারিত হলেও আজও মেয়েদের জীবন দরকষাকষির জাতাকলে নিষ্পেষিত, এ লজ্জা গােটা সমাজের। এর হাত থেকে রেহাই পেতে হলে সবাইকে দৃঢ়সংকল্প ও অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে। যৌতুক মানবমনের এক বিকৃত প্রকাশ। যার ফলে প্রতিমুহূর্তে নারী হারাচ্ছে মানুষের মর্যাদা। নর ও নারী— এ দুই সত্তা নিয়েই মানবসমাজ। এক পক্ষকে অমর্যাদা করে আরেক পক্ষ কখনােই মর্যাদার আসন পেতে পারে না। তাই যৌতুকের মতাে কঠোর ব্যাধি থেকে মানবসমাজের মুক্তি লাভ অপরিহার্য।

অন্য বই থেকে বিকল্প ২

মূলভাব : সমাজে প্রচলিত প্রথাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হচ্ছে যৌতুক প্রথা। এটা ভয়ানক ব্যাধির মত সমাজের মানুষকে পচন ধরিয়ে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে উন্মোচিত করে। নারীর মানবিক সত্তাকে অবমূল্যায়িত করে মানব সভ্যতাকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। তারা ভুলে যায়- 

‘এ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর 

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ 

সম্প্রসারিত ভাব : মানব সভ্যতা বিকাশে নারী-পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। পুরুষের পক্ষে নারীর সাহায্য ছাড়া কোন কিছুই করা সম্ভব নয়। কিন্তু তারপরও আমরা মধ্যযুগীয় বর্বর চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পরি না। যে নারী ছাড়া আমাদের ঘর গেরস্থালীর সমস্ত কিছু অচল হয়ে পড়ে। বিপদে দিশেহারা হয়ে পড়ি। সেই নারীকে আমরা আজো পশুর মত কেনা-বেচা করি। দাম্পত্য সম্পর্কের মত এমন একটা মধুর সম্পর্ক স্থাপন করতে গিয়ে আমরা অর্থ-বৃত্ত চেয়ে বেসি রাঘব-বোয়ালের মত। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার টুটি চেপে ধরে কেড়ে নিয়ে আসি যতদূর সম্ভব। বিয়ের নামে প্রচলিত এ কেনা-বেচার প্রথাকেই বলা হয় পণপ্রথা বা যৌতুক প্রথা। যার বলি হচ্ছে আমাদের সমাজের অধিকাংশ নারী। যৌতুকের দায়বদ্ধতা এড়ানো ভিটেমাটি বিক্রি করতে হয় দরিদ্র পিতাকে। যৌতুক প্রদানের ব্যর্থতায় সংসার ভাঙ্গে নব বধূর। মধুর স্বপ্ন বিষিয়ে উঠে জীবনের শুরুতেই অত্যাচারিত হয়ে আত্ম-বিসর্জনের পথও বেছে নিতে হয় অনেককে। পত্রিকা খুললেই যার প্রমাণ আমাদের দেশে দৈনিক আর দশটা সাধারণ সংবাদের মতোই পাওয়া যায়। কবে কে, কোথায়, কিভাবে এ ভয়ানক ব্যাধিরূপী সামাজিক প্রথা সৃষ্টি করেছিল যা আমাদের দেশ, জাতি, সমাজ আজ সভ্যতার চরম শিখরে এসেও পরিত্যাগ করতে পারেনি। সত্যিই এ বড় লজ্জার ব্যাপার। মানুষ যেমন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তা ক্রমেই বেড়ে চলে, তার হাত থেকে কোনক্রমেই পরিত্রাণ লাভ করা যায় না, যৌতুক নামক ভয়ানক এ সামাজিক ব্যাধি থেকেও তেমনি আমরা কেউই রেহাই পাচ্ছি না। একবার যেমন নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, তেমনি অন্যকে অত্যাচারিত করছি। আসলে এ সামাজিক ব্যাধিটি আমাদের মানসিকতায়ও পচন ধরিয়েছে। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত। তা না হলে মানবতার অপমানের পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। এ জন্য প্রয়োজন সর্বাগ্রে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন এবং বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলন। বিশেষ করে নারীদেরকে সচেতন করে তোলা। 

মন্তব্য: নারীর মূল্যবোধ জাগ্রত করা, তাদেরকে স্বাবলম্বী করে তোলা এবং অধিকার সচেতন করে তোলার মাধ্যমেই এ ব্যাধির চিকিৎসা করতে হবে। তা না হলে এর কালো থাবা থেকে আমরা কেউই মুক্তি পাব না। কারণ এটা সত্যিই এক ভয়ানক ব্যাধি।

Also Read: যে নৌকা হালের শাসন মানে না

আশা করি তোমাদের এই ভাবসম্প্রসারণটি ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবে।

Leave a Comment