আজকের আমরা ”লোভে পাপ পাপে মৃত্যু” ভাবসম্প্রসারণটি পড়ব। ভাবসম্প্রসারণ পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপৃর্ণ। বিশেষ করে এই ভাবসম্প্রসারণটি খুবই গুরুত্বপৃর্ণ।
লোভে পাপ পাপে মৃত্যু
মূলভাব: মানুষের জীবনে যেসব মন্দ প্রবৃত্তি আছে তার একটি হচ্ছে লােভ। লােভ মানুষকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য ও অসৎ উপায় অবলম্বন করতে প্ররােচিত করে। লােভে পড়ে মানুষ পাপ কাজ করতে দ্বিধাবােধ করে না।
সম্প্রসারিত ভাব: লােভ মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় বলে, লােভ মানুষের পরম শত্রু।। ভােগের নিমিত্তে উদ্ভান্ত আবেগ আর দুর্দমনীয় বাসনাই লােভ। জাগতিক যাবতীয় পাপের উৎসভূমি হচ্ছে লােভ। লােভের মায়ামমাহে আচ্ছন্ন থেকে মানুষ সত্য ও সুন্দরকে করে অবজ্ঞা। সে বৈষয়িক বুদ্ধির প্রেরণায় পার্থিব ধন-সম্পদ আহরণে হয় ব্রতী। ন্যায়-অন্যায় বিবেচনা না করেই মানুষ লােভের ফাদে পা দেয়। লােভের তাড়নায় মানুষ অসৎ কাজে নেমে পড়ে। নিজের স্বার্থের জন্য অন্যের সর্বনাশ করতে ছাড়ে না। এভাবে মানুষ পাপের পথে পা বাড়ায় এবং ক্রমে মনুষ্যত্ব হারায়। প্রকৃতপক্ষে জাগতিক যাবতীয় পাপের উৎসভূমি হচ্ছে লােভ। মানুষের ধ্বংসের পথ প্রশস্থ করে লােভ, তাই লােভ পরিহার করা বাঞ্ছনীয়। অপরপক্ষে নির্লোভ ব্যক্তি পাপাচার-মুক্ত সত্য ও সুন্দরজীবন লাভ করে। তার নিরাসক্ত জীবনে ভােগের তাড়না নেই। ফলে তার মাঝে লােভ এবং পাপের অস্তিত্ব নেই।
মন্তব্য: লােভ বর্জন না করলে জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করা যায় না। নির্লোভ জীবন সকলের শ্রদ্ধা ও ভক্তি অর্জন করে।
বিকল্প ১
মূলভাব : লোভ মানব চরিত্রের এক দুর্দমনীয় প্রবৃত্তি। মানুষ যখন লোভের পথে পা বাড়ায়, তখন তার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। সমাজের অধিকাংশ মানুষ লোভের দ্বারা কম বেশি তাড়িত হয়। লোভ মানুষকে পাপ কাজে নিয়োজিত করে। কুপথে ধাবিত করে আর এজন্যই মানব জীবনের পরিণাম অনেক সময় দুঃখময় হয়ে উঠে, কখনও কখনও ঘটে মৃত্যু।
সম্প্রসারিত ভাব : নিজের ভোগ-বিলাসের জন্য দুর্দমনীয় বাসনাই লোভ। আমাদের চারপাশে সর্বত্র লোভের হাতছানি। অর্থ, বিত্ত, খ্যাতি, প্রতিষ্ঠা প্রভৃতির প্রতি মানুষের প্রচণ্ড লোভ। লোভে মানুষ পরিণামের কথা চিন্তা না করে এমন সব কাজ করে যা আইনের চোখে দণ্ডনীয়। ফলস্বরূপ বরণ করে নেয় জীবনের করুণ পরিণতি। লোভের মায়াজালে আচ্ছন্ন হয়ে মানুষ তার মা, বাবা, ভাইবোন সবাইকে অবজ্ঞা করে। স্বীয় বাসনা পূর্ণ করার জন্য সবাইকে ভুলে যেতে দ্বিধাবোধ করে না। টাকার মোহ তাকে পাগল করে তোলে। লোভ মানব জীবনের বড় শত্রু। লোভকে এজন্য পাপের আধার বলা যেতে পারে। তিনটি জিনিস মানুষকে ধ্বংস করে- লোভ, অহংকার এবং হিংসা। লোভ তাদের মধ্যে একটি। মানুষ আল্লাহর প্রিয় বান্দা এবং আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু স্বয়ং আল্লাহও লোভীদের পছন্দ করেন না। লোভ আর স্বার্থবুদ্ধির দ্বারা তাড়িত হয়ে, মানুষ ভাইকে, বন্ধুকে হত্যা করেছে। পরিণামে নিজের আত্মহননের পথ নিজেই তৈরি করেছে। এ কথা সত্য যে লোভের পথে পা দিলে একদিন তার মৃত্যু হবেই। লোভ মানুষকে জঘন্য পথে ক্রমশ তাড়িত করে। বেশি লোভ করা ভালো না। কথায় আছে- ’অতি লোভে তাঁতী নষ্ট’। আর এভাবেই লোভী ব্যক্তি পথভ্রষ্ট হয়। সে অন্যায় অসত্য আর পাপের পথে ধাবিত হয়ে অকাল মৃত্যুর মুখোমুখি হয়। পরিণামে আসে ভয়ংকর মৃত্যু।
মন্তব্য: লোভকে বর্জন করতে হবে। তবেই জীবন সকলের শ্রদ্ধা ও ভক্তি অর্জন করে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত লোভ লালসা পরিহার করা।
বিকল্প ২
মূলভাব : লোভের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। লোভ মানুষের পরম শত্রু। লোভ মানুষকে অন্ধ করে; তার বিবেক বিসর্জন দিয়ে তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
ভাব সম্প্রসারণ : লোভের বশবর্তী হয়েই মানুষ জীবনের সর্বনাশ ডেকে আনে। মানুষ নিজের ভোগের জন্য যখন কোনো কিছু পাওয়ার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করে তাকে লোভ বলে। তখন যা নিজের নয়, যা পাওয়ার অধিকার তার নেই, তা পাওয়ার জন্য মানুষ লোভী হয়ে ওঠে। সে তার ইচ্ছাকে সার্থক করে তুলতে চায়। লোভের মোহে সে সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ সব বিসর্জন দেয়। তার ন্যায়-অন্যায় বোধ লোপ পায়। সে পাপের পথে ধাবিত হয়। নিজের স্বার্থের জন্য অন্যের সর্বনাশ করে। এভাবে লোভ মানুষকে পশুতে পরিণত করে। ডেকে আনে মৃত্যুর মতো ভয়াবহ পরিণাম। লোভের মোহে পড়লে মানুষের ব্যক্তিত্ববোধ লোপ পায়। ফলে লোভ ব্যক্তি তার হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সচেষ্ট থাকে। এতে তার চাহিদা তো পূরণ হয়ই না বরং আরও পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ফলে একসময় লোভের কারণে তার পতন আসন্ন হয়ে ওঠে।
মন্তব্য : লোভের কারণে অন্তরের সুখ হারিয়ে যায়। ফলে এটি ব্যক্তির পতনের কারণ হয়। তাই সার্থক জীবনের জন্য লোভ পরিহার করা প্রয়োজন।
আশা করি তোমাদের এই ভাবসম্প্রসারণটি ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবে।