শিক্ষাক্রম কাকে বলে? বিস্তারিত….

শিক্ষাক্রম কাকে বলে: আজকে আমরা জানবো শিক্ষাক্রম কাকে বলে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আশা করি আপনারা এই প্রশ্নের উত্তর ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন।

শিক্ষাক্রম কাকে বলে
শিক্ষাক্রম কাকে বলে

শিক্ষাক্রম কাকে বলে?

কোনো একটি শিক্ষা কার্যক্রম কী উদ্দেশ্যে পরিচালিত হবে, কী বিষয়বস্তুর মাধ্যমে উদ্দেশ্য অর্জিত হবে; কখন, কীভাবে, কার সহায়তায় এবং কী উপকরণের সাহায্যে তা বাস্তবায়িত হবে, শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে এসবের যাবতীয় পরিকল্পনার রূপরেখাকে শিক্ষাক্রম বলে।

শিক্ষাক্রম একটি নির্দিষ্ট কোর্স বা প্রোগ্রামের মধ্যবর্তী সময়ে একটি শিক্ষাব্যবস্থার দ্বারা আচ্ছাদিত অধ্যায় এবং একাডেমিক সামগ্রীর গাইডলাইন হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

ইংরেজি কারিকুলাম শব্দটির বাংলা পরিভাষা হিসেবে শিক্ষাক্রম, পাঠ্যক্রম, পাঠক্রম ইত্যাদি শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

শিক্ষাক্রমকে পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু, কোর্স সীমারেখা, শিক্ষক নির্দেশিকা বা উৎপাদিত সামগ্রী হিসেবে দেখা হতো। শিক্ষাক্রমের এই প্রাচীন ধারণা ১৯৩০ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় প্রচলিত ছিল। প্রাচীনকালে জ্ঞান আহরণ করাই ছিল শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য।

তাত্ত্বিক অর্থে, পাঠ্যক্রমটি স্কুল বা কলেজ কর্তৃক প্রদত্ত যা বোঝায় তাকে বোঝায়। যাইহোক, কার্যত এটির একটি বিস্তৃত সুযোগ রয়েছে যা জ্ঞান, মনোভাব, আচরণ, পদ্ধতি, কর্মক্ষমতা এবং দক্ষতাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে যা একটি ছাত্রকে দেওয়া বা প্ররোচিত করা হয়।

এটিতে শিক্ষার পদ্ধতি, পাঠ, অ্যাসাইনমেন্ট, শারীরিক ও মানসিক অনুশীলন, ক্রিয়াকলাপ, প্রকল্প, অধ্যয়নের উপাদান, টিউটোরিয়ালস, উপস্থাপনা, মূল্যায়ন, পরীক্ষার সিরিজ, শেখার উদ্দেশ্য এবং আরও রয়েছে।

পাঠ্যক্রমটি সরকার বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দ্বারা সুপরিকল্পিত, পরিচালিত এবং নকশাকৃত। এটি একটি শিক্ষার্থীর শারীরিক এবং মানসিক উভয় বিকাশের লক্ষ্য। এটি সামগ্রিক শেখার অভিজ্ঞতা যা একজন শিক্ষার্থী বিশেষ অধ্যয়নের সময় চলতে থাকে।

Also Read: সিস্ট কাকে বলে

শিক্ষাক্রমের প্রাচীন ধারণা

শিক্ষাক্রমের প্রাচীন ধারণা: শিক্ষাক্রম শব্দটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে এবং যুগের পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় শিক্ষাক্রমের ধারণা ক্রমাগত বিবর্তিত হচ্ছে। তাই শিক্ষাক্রমের সর্বজনস্বীকৃত কোনও একক ও নির্দিষ্ট সংজ্ঞা বা ধারণার উদ্ভব হয়নি।

প্রাচীনকালে মানুষের বেঁচে থাকার দক্ষতা অর্জনই ছিল শিক্ষার প্রতিপাদ্য বিষয়। ফলে তখনকার অনানুষ্ঠানিক শিক্ষায় এ দিকটি গুরুত্ব পেয়েছে। পরবর্তীতে ক্রমাগত শিক্ষা সম্পর্কিত মানুষের চিন্তার ফসল হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাক্রমের ধারণা বাস্তব রূপ পেতে থাকে।

শিক্ষাক্রমের প্রাচীন ধারণামতে কোনো শ্রেণি বা স্তর বা কোর্সের অন্তর্ভুক্ত বেশ কয়েকটি পাঠ্যবিষয়ের সমষ্টি হলো শিক্ষাক্রম।

আমেরিকায় শিক্ষাক্রমের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করা যায় ১৮২০ সাল থেকে। সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাক্রম বলতে কোনো একটি কোর্সের অন্তর্ভুক্ত পাঠ্যবিষয়কে বুঝাত, যা অনুসরণ করে শিক্ষক শ্রেণিতে পাঠদান করা হতো।

সে সময় আমেরিকার শিক্ষাক্রমের মূল লক্ষ্য ছিল শিশুর মানসিক এবং জ্ঞানের বিকাশ। এজন্য শিক্ষাক্রমে বংশানুক্রমিক সুসংবদ্ধ জ্ঞান ও মানসিক শৃঙ্খলা অর্জনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হত।

প্রাচীনপন্থী শিক্ষাবিদদের ধারণা ছিল যে, শিশুর সুষ্ঠু মানসিক বিকাশ ঘটাতে হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমে কতগুলো অপরিহার্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এগুলো হলো মাতৃভাষা, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন ও পশ্চিমা দেশের ভাবধারা।

ফলে সে সময় শিক্ষাক্রমে এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হতো।

Also Read: শক্তি কাকে বলে

শিক্ষাক্রম আধুনিক ধারণা

শিক্ষাক্রম আধুনিক ধারণা: মোটামুটিভাবে, ১৯৩০ সালের পর থেকে শিক্ষাক্রমের প্রাচীন ও সংকীর্ণ ধারণার পরিবর্তন হয়। বেশিরভাগ শিক্ষাবদই মনে করেন যে, শিক্ষাক্রমের ধারণার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে ১৯৩০ সালের পরে। তখন শিক্ষাক্রম বলতে স্কুল কর্তৃক পরিচালিত সকল শিখন অভিজ্ঞতার সমষ্টিকে বুঝানো হতো।

১৯৩৫ সালে ক্যাসওয়েল ও কম্পবেল শিক্ষাক্রমের পুরাতন ধারণার অবসান ঘটিয়ে একটি নতুন সংজ্ঞা প্রস্তাব করেন, “শিক্ষাক্রম হল শিক্ষকের পরিচালনায় শিক্ষার্থীর অর্জিত সকল অভিজ্ঞতা”।

শিক্ষাক্রম তার সংকীর্ণ ধারণার গণ্ডি পার হয়ে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হতে শুরু করে এবং শিক্ষাক্রম কেবলমাত্র পাঠ্যবিষয়ের পরিবর্তে স্কুলের নিয়ন্ত্রিত সকল শিখন-অভিজ্ঞতার সমষ্টিরূপে পরিগণিত হতে থাকে।

কিন্তু শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞগণ শিক্ষাক্রমের আরও সুস্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য ধারণার অনুসন্ধান করতে থাকেন।

১৯৪৯ সালে শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ রাফ টাইলার কর্তৃক প্রদত্ত ধারণায় শিক্ষাক্রম সম্পর্কিত এ সমস্যার কিছুটা সমাধান পাওয়া যায়।

রাফ টাইলার সর্বপ্রথম বলেন- “শিক্ষাক্রম হলো শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্কুল কর্তৃক পরিকল্পিত ও পরিচালিত এবং শিক্ষার্থীর অর্জিত সকল শিখন অভিজ্ঞতা”।

রাফ টাইলারের সংজ্ঞায় দেখা যায় যে, রাফ টাইলার শিক্ষাক্রমকে স্কুল পরিচালিত সকল কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্যভিত্তিক ও পরিকল্পিত শিখন অভিজ্ঞতা নির্ভর করার উপর জোর দিয়েছেন।

১৯৫০ সালের মাঝামাঝি শিক্ষার্থীর জীবনে স্কুলের প্রভাব প্রকটরূপে দেখা যায়। তখন শিক্ষাক্রমের ধারণা পরিমার্জন ও পরিবর্তনের ব্যাপারে আমেরিকায় বেশ কিছু শিক্ষামূলক প্রকল্প (Educational Projects) গ্রহণ করা হয়।

আমেরিকার শিক্ষামূলক প্রকল্পে যেসব শিক্ষাবিদ কাজ করতেন তারা শিক্ষাক্রমকে পাঠদানের নির্দেশনামূলক পরিকল্পনা (Instructional Plan) হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন।

ষাটের দশকের শেষে এবং সত্তরের দশকের প্রথমে অনেকে স্কুলের কাজকে শিল্প কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করেন।

শিল্প কারখানায় যেমন কাঁচামাল প্রক্রিয়াজাত করে নানারকম দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করা হয়, তেমনি স্কুলের কাজ হবে নিরক্ষর ও অনভিজ্ঞ শিক্ষার্থীদের দক্ষ, অভিজ্ঞ ও অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।

এর ফলে শিক্ষাক্রম প্রণয়নে শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা ও কৃতিত্ব মূল্যায়ন এবং স্কুলের জবাবদিহিতার প্রশ্ন গুরুত্ব পেতে থাকে।

শিক্ষাক্রমের বিষয়বস্তু নির্বাচন ও মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে বিজ্ঞানসম্মত করার লক্ষ্যে এ সময় শিক্ষাক্রমে আচরণিক উদ্দেশ্য লেখার ওপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এ সময় থেকে শুরু করে পরবর্তীতে বিভিন্ন মনীষী কর্তৃক প্রদত্ত শিক্ষাক্রমের ধারণায় শিক্ষাক্রমের এই পরিবর্তিত ও সুনির্দিষ্ট রূপ গুরুত্ব পেতে থাকে।

এভাবে সময়ের পরিক্রমায় শিক্ষাক্রমের ধারণায় নতুন নতুন মাত্রা সংযোজিত হয় ও পুরাতন ধারণার পরিবর্তন ঘটতে থাকে।

তো আজকে আমরা দেখলাম যে শিক্ষাক্রম কাকে বলে এবং আরো অনেক বিস্তারিত বিষয় । যদি পোস্ট ভালো লাগে তাহলে অব্যশয়, আমাদের বাকি পোস্ট গুলো ভিসিট করতে ভুলবেন না!

Leave a Comment