হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় হীরেন্দ্রনাথ দত্ত সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর [নতুন]

হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় হীরেন্দ্রনাথ দত্ত সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর: আমরা আজকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। এরকম পোস্ট আমদের মতো কেউ করতে পারবে না। আমরা হলাম official-result.com. তাই আমাদের ওয়েবসাইটকে কখনো ভুলে জাবেন না। 😉😉

হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় হীরেন্দ্রনাথ দত্ত সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর

হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় হীরেন্দ্রনাথ দত্ত সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর

বিষয়সংক্ষেপ

রবীন্দ্রনাথের ডাকে শান্তিনিকেতনে বিদ্যালয়ের কাজে যাঁরা যােগ দিয়েছিলেন, তাঁরা সকলেই অসাধারণ ব্যক্তি ছিলেন এমন নয়। কিন্তু তাঁদের মধ্যে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন অন্যতম ও অসাধারণ। রবীন্দ্রনাথের নির্দেশে তিনি জমিদারি সেরেস্তার কাজ ছেড়ে শান্তিনিকেতনে গিয়ে ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ নামক অভিধান রচনায় প্রবৃত্ত হন। এর আগে বাঙালি সমাজে তিনি ছিলেন অপরিচিত। তখন তাঁর বয়স ছিল কম, কিন্তু তিনি ছিলেন অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশােনা পর্যন্ত নেই। তবু জহুরি রবীন্দ্রনাথের চোখে তিনি ধরা পড়ে যান। পণ্ডিত বিধুশেখর শাস্ত্রী, সংস্কৃতজ্ঞ ক্ষিতিমােহন সেনের মতাে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও দিনের কাজের শেষে, সংস্কৃতচর্চার মধ্যে দিয়ে ক্রমে নিজেকে বিকশিত করেন। এই বিষয়ের একটি পাণ্ডুলিপিও ছিল তাঁর। রবীন্দ্রনাথ এই শুনে, তখন তাঁকে তাঁর অসম্পূর্ণ ‘সংস্কৃত প্রবেশ’ পুস্তকটি রচনার দায়িত্ব দিলেন। কিন্তু তাঁর উল্লেখযােগ্য কাজ অভিধান রচনা। এর সূচনা হয় ১৩১২ বঙ্গাব্দ বা ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে আর কাজটি শেষ হয় ১৩৩০ বঙ্গাব্দ বা ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে।

    এই গ্রন্থরচনার কাজে, মুদ্রণের ব্যাপারে কিংবা প্রকাশের ব্যাপারে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সাহায্য পান মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী, প্রাচ্যবিদ্যামহার্ণব নগেন্দ্রনাথ বসু মহাশয় কিংবা শান্তিনিকেতনের প্রাক্তন ছাত্র, অনুরাগী ও শিক্ষিত ব্যক্তিদের থেকে। অভিধানটির মুদ্রণকাজ শেষ হয় ১৩৫২ বঙ্গাব্দ বা ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে। অর্থাৎ, ১৩১২-১৩৫২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী ৪০টি বছর হরিচরণ অভিধান নিয়ে এত খুঁটিনাটি কাজ করেন, যা তাকে উন্নীত করেছে সম্মানের উচ্চশিখরে । কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পান ‘সরােজিনী ‘স্বর্ণপদক’ এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পান ‘দেশিকোত্তম’ (ডি লিট) উপাধি।

    এমন মানুষ ছিলেন হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি ৭৫ বছর বয়সের পরেও অর্থাৎ, বিশ্বভারতী থেকে অবসর নেওয়ার পরও মাসমাইনের কথা না ভেবে আগের মতাে নিজের কাজে মগ্ন থাকতেন। অভিধান ছাড়াও তিনি রচনা করেন অন্যান্য গ্রন্থ। সকাল-সন্ধে ভ্রমণে বেরােতেন তিনি। চোখে কম দেখতেন তখন, কিন্তু কাউকে চিনতে পারলে কুশলাদি বিনিময় করতেন। ইংরেজ ঐতিহাসিক-সাহিত্যিক গিবনের মতাে তিনি কখনও ভাবেননি যে, তাঁর সব কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। সবসময় তিনি ছিলেন হাসিখুশিতে পূর্ণ। সুখ-দুঃখে ছিলেন অবিচল।

নামকরণ

সাহিত্যে নামকরণ হয় বিভিন্ন প্রকরণের ওপর ভিত্তি করে। কখনও তা হয় বিষয়কেন্দ্রিক, কখন তা হয় চরিত্রকেন্দ্রিক, কখনও বা উপমাবাচক। আলােচ্য পাঠ্যে সাহিত্যিক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত মহাত্মা হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনকর্ম নিয়ে আলােচনা করেছেন। পাশাপাশি উঠে এসেছে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাঙালির বিদ্যাচর্চার সুনিবিড় যােগাযােগ ব্যবস্থা। আলােচ্য গদ্যের নামকরণ হয়েছে ‘হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়’ যা থেকে সহজেই বােধগম্য হয় গদ্যটি হয়েছে চরিত্রকেন্দ্রিক। প্রবন্ধটির শুরুতে মনে হয়েছে এটি নিছকই জীবনী গদ্য, কিন্তু আনুষঙ্গিক ব্যক্তিচরিত্র, সুবৃহৎ অভিধান রচনার নেপথ্যে তাঁর প্রজ্ঞা, নিষ্ঠা, শ্রম, অধ্যবসায়ের কথা বারবার উঠে আসায় নিছক গদ্যজীবনী হয়ে উঠেছে আরও অনেক কিছু। এ রচনায় শুরুতে একটি ভূমিকা বা প্রস্তাবনা থাকলেও বাকি পুরােটা একটি মানুষের সৃষ্টিশীল প্রতিভাকে কেন্দ্র করেই লেখা। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন নিছক জমিদারি সেরেস্তার কর্মচারী। তিনি আবিষ্কৃত হলেন রবীন্দ্রনাথের মতাে রত্ন জহুরির চোখে। তিনি লিখলেন ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ। অভিধানের জন্য কাজ করলেন চল্লিশ বছর। অভিধানের কাজে এগিয়ে এলেন নানা গুণীজন অনুরাগী। কাজ থেকে অবসরের পরেও কাজ করলেন বেতনের কথা না-ভেবে—এমন অনেক তথ্যই আমরা জানতে পারি হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে। এ ছাড়া তাঁর স্বাস্থ্যচিন্তা, সামাজিকতা, সৌজন্যবােধ ইত্যাদির কথাও বিবৃত হয়েছে আলােচ্য রচনায়। সমগ্র রচনাটির কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনকথা। সুতরাং, এই রচনার নামকরণ যে যথাযথ হয়েছে সে-বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই।

হাতে কলমে

১.১ হীরেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত দুটি বই-এর নাম লেখাে। 

উঃ হীরেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত দুটি বইয়ের নাম ‘অচেনা রবীন্দ্রনাথ’ ও ‘খেলা ভাঙার খেলা।

১.২ কোন্ নামে তিনি সমধিক পরিচিত ?

উঃ লেখক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত “ইন্দ্রজিৎ’ ছদ্মনামে সমধিক পরিচিত।

২ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে :

২.১ শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ে প্রথম যুগে যাঁরা রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে বিদ্যালয়ের কাজে এসে যােগ দিয়েছিলেন, এমন কয়েকজনের কথা আলােচনা করাে।

উঃ
 শান্তিনিকেতনের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম যুগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আহ্বানে যাঁরা বিদ্যালয়ের কাজে এসে যােগ দেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য কয়েকজন হলেন— হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধুশেখর শাস্ত্রী, ক্ষিতিমােহন সেন, বিদ্যোৎসাহী মহারাজ মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী প্রমুখ। প্রাবন্ধিক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘শান্তিনিকেতনের একযুগ’ গ্রন্থে এইসব মনীষীদের প্রসঙ্গে বলেছেন— “শান্তিনিকেতনকে এঁরা কী দিয়েছেন আর শান্তিনিকেতন এঁদেরকে কী দিয়েছে। এইটুকুই শুধু বলতে চেয়েছি।” উপরােক্ত মনীষীদের সম্পর্কে সংক্ষেপে বলা হল—

হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আগ্রহে তিনি শান্তিনিকেতনে আসেন। তাঁরই নির্দেশে তিনি ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ গ্রন্থ রচনায় হাত দেন। ১৩১২ বঙ্গাব্দ থেকে শুরু করে ১৩৩০ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত তিনি একনাগাড়ে একাজ করে গিয়েছেন। রচনা শেষ হওয়ার পরপরই তা গ্রন্থাকারে মুদ্রিত হয়নি। তার জন্য আরও দশ বছর অপেক্ষা করতে হয়। বিশ্বভারতী এটিকে গ্রন্থাকারে মুদ্রিত করতে অসমর্থ হওয়ায় নিজের ও তাঁর অনুগত ছাত্রদের অর্থানুকূল্যে খণ্ডকারে গ্রন্থটি মুদ্রন করেন। ১০৫ খন্ডে গ্রন্থটির মুদ্রণ শেষ হয় ১৩৫২ বঙ্গাব্দে। অবশ্য গ্রন্থের প্রেরণাদাতা রবীন্দ্রনাথ সম্পূর্ণ মুদ্রিত গ্রন্থ দেখে যেতে পারেননি। হরিচরণ তাঁর জীবনের চল্লিশটা বছর এই গ্রন্থ রচনায় ব্যয় করেছেন। একক প্রচেষ্টায় এত বড়াে কাজ সম্পন্ন করার অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আর নেই। তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্বভারতী তাঁকে ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে সম্মানিত করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে ‘সংস্কৃত প্রবেশ’ নামে যে-গ্রন্থ রচনা করছিলেন, তা শেষ করার দায়িত্বও হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর দিয়েছিলেন। এবং পরম যত্নে ও শ্রদ্ধায় তিনি সেই কাজটি শেষ করেন। বাঙালি জাতির সম্মুখে এক অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্তস্বরূপ হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিরানব্বই বছর বয়সে পরলােকে গমন করেন।

বিধুশেখর শাস্ত্রী: মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে জন্ম। পিতা ত্রৈলােক্যনাথ ভট্টাচার্য। টোলের ছাত্র হিসেবে শিক্ষাজীবন শুরু করে মাত্র ১৭ বছর বয়সে কাব্যতীর্থ হন এবং দুটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। কাশীতে দর্শনশাস্ত্রের পাঠ নেন। বেদান্ত শাস্ত্র অধ্যয়ন করে শাস্ত্রী উপাধি লাভ করেন। ১৩১১ বঙ্গাব্দে তিনি শান্তিনিকেতনে আসেন এবং দীর্ঘ ৩০ বছর অধ্যপনা করেন। এরপর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের অধ্যক্ষ তথা ‘আশুতােষ অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। রবীন্দ্রনাথের প্রেরণায় তিনি বৌদ্ধ শাস্ত্র ও পালি ভাষার চর্চা করেন। বৌদ্ধ শাস্ত্রে অধিক অবগত ও পর্যালােচনার জন্য তিনি ফরাসি, জার্মান, তিব্বতি, চিনা ও ইংরেজি ভাষার চর্চাও করেন। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৭টি। তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হল— ‘ন্যায়প্রবেশ’, ‘মিলিন্দ পহ’, ‘উপনিষদ’, ‘পালি প্রবেশ, ‘ভােটপ্রকাশ’, ‘নাগানন্দ নাটক’ প্রভৃতি।১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি মহামহােপাধ্যায়’ উপাধি পান। তা ছাড়া কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিলিট এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করেন। । পিতা

ক্ষিতিমােহন সেন: এঁনার জন্মস্থান কাশীতে ভুবনমােহন সেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ঢাকা। কাশী কুইন্স কলেজ থেকে তিনি সংস্কৃতে এমএ পাস করেন।১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে তিনি শান্তিনিকেতনে আসেন। এরপর তিনি বিশ্বভারতীর ব্ৰত্মচর্যাশ্রমে যােগ দেন এবং তিনি বিশ্বভারতী বিদ্যাভবনের অধ্যক্ষ পদ থেকে অবসর নেন। কিছুকাল তিনি বিশ্বভারতীর অস্থায়ী উপাচার্যের দায়িত্বও পালন করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উৎসাহে তিনি সন্তদের বাণী, বাউল সংগীত ও সাধনতত্ত্ব সংগ্রহে ব্রতী হন। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের গবেষণালব্ধ জ্ঞানকে তিনি কয়েকটি গ্রন্থে রূপ দেন। তাঁর সংগ্রহের উপর ভিত্তি করেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদনা করেন—“One Hundred Poems of Kaber’ গ্রন্থটি। তাঁর লেখা কয়েকটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল—‘কবীর’, ‘দাদু’, ‘ভারতের সংস্কৃতি’, ‘বাংলার সাধনা’, ‘ভারতে হিন্দু মুসলমানের যুক্ত সাধনা’, ‘প্রাচীন ভারতে নারী’, ‘বলাকা কাব্য পরিক্রমা’, ‘বাংলার বাউল’, ‘Medieval Mysticism of India’ ইত্যাদি। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী তাকে ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে।


মহারাজ মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দী: হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ নামক সুবৃহৎ অভিধান গ্রন্থ রচনায় মহারাজ মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। রবীন্দ্রনাথের অনুরােধে বিদ্যোৎসাহী এই মহারাজ, হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাসিক পাশ টাকা বৃত্তি দিতেন। একাজ শুধুমাত্র তাঁর মহানুভবতার পরিচয় দেয় না। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর অবদানের কথাও জানিয়ে দেয়। তাঁর অকৃপণ দানে সাহিত্যের ইতিহাসে এই অমূল্য গ্রন্থটি সংযােজিত হয়েছে। । এর কৃতিত্ব অনেকাংশে শান্তিনিকেতনের প্রাপ্য

২.২ ‘এর কৃতিত্ব অনেকাংশে শান্তিনিকেতনের প্রাপ্য। …..’—কোন্ কৃতিত্বের কথা বলা হয়েছে ? তার বহুলাংশ ‘শান্তিনিকেতনের প্রাপ্য বলে লেখক মনে করছেন কেন ?

উঃ হীরেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়’ প্রবন্ধ থেকে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি নেওয়া হয়েছে। লেখক মনে করেন, যে-কোনাে বৃহৎ কাজের জন্য দরকার ঐকান্তিক নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও পরিশ্রম করার সদিচ্ছা। বিশেষ করে নিষ্ঠা ও অভিনিবেশ মহৎ কার্যের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। রবীন্দ্রনাথের সাদর আহ্বানে যে-সমস্ত মানুষ শান্তিনিকেতন আসেন, তাঁরা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুমহান কীর্তি রেখে গিয়েছেন। শান্তিনিকেতনে এসে সাধারণ মানুষের অসাধারণ হয়ে ওঠার প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক কথাটি বলেছেন।

    ➡️  লেখক মনে করেন, শান্তিনিকেতনের জল-মাটিআবহাওয়ার এমনই গুণ আছে যে, এখানে আসার পর সবাই পরিপুষ্টি লাভ করেন। শান্তিনিকেতন তৈরি করেছে বহু গুণী মানুষ। শুধু হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় নয়। বিধুশেখর শাস্ত্রী, ক্ষিতিমােহন সেন প্রমুখ এই গােত্রের মধ্যে পড়েন। আসলে শান্তিনিকেতন স্নেহ, ভালােবাসা ও ঔদার্যে সবাইকে আপন করে নিয়ে তাদের কাছে যা দাবী করে, তা সসম্মানে আদায়ও করে নিতে পারে। লেখক তা সম্যক উপলব্ধি করতে পারেন। বলেই শান্তিনিকেতন সম্পর্কে এ কথা বলেছেন।

২.৩ ‘আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে শান্তিনিকেতনের দান অপরিসীম।’ লেখক এ প্রসঙ্গে শান্তিনিকেতনের কোন্ কোন্ গুরুত্বপূর্ণ অবদানের উল্লেখ করেছেন ?

উঃ আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে শান্তিনিকেতনের গুরুত্বপূর্ণ অবদানগুলি হল— শান্তিনিকেতন শুধু বিদ্যাদানের স্থান নয়, বিদ্যাচর্চা ও বিদ্যা বিকিরণেরও স্থান। এমনকি বিদ্যার্জনের পথ সুগম করে দেওয়ার ক্ষেত্রেও শান্তিনিকেতনের মতাে বিদ্যাকেন্দ্রের অবদান ছিল। বিদ্যাকেন্দ্রের প্রধান কাজ হল— শিক্ষার পথকে সহজ করা। কিন্তু সেই সময় কোনাে বিদ্যালয়— এমনকি কোনাে বিশ্ববিদ্যালয়ই সবার মধ্যে শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করেনি। এমনকি ভাবেওনি। কিন্তু শান্তিনিকেতন কিন্তু তার জন্মলগ্ন থেকেই তা ভেবেছে। আর শুধু ভাবা নয়, তাকে কার্যকর করে বিশ্বের কাছে অভূতপূর্ব উদাহরণ রেখেছে। এই কারণেই শিক্ষার ভিত্তিভূমি হয়ে ওঠে এই শান্তিনিকেতন।

২.৪ ‘আপাতদৃষ্টিতে যে মানুষ সাধারণ তাঁরও প্রচ্ছন্ন সম্ভাবনা রবীন্দ্রনাথের সর্বদর্শী দৃষ্টি এড়াতে পারেনি —লেখক এ প্রসঙ্গে কাদের কথা স্মরণ করেছেন ? জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় তাঁদের অবদান সম্পর্কে আলােচনা করাে। 

উঃ ‘হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়’ শীর্ষনামের প্রবন্ধ থেকে নেওয়া প্রশ্নোক্ত কথাটির প্রসঙ্গে লেখক জমিদারি সেরেস্তার কর্মচারী, অনভিজ্ঞ টোলের পণ্ডিত, সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত প্রমুখের কথা স্মরণ করেছেন। এঁদের মধ্যে আছেন হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধুশেখর শাস্ত্রী, ক্ষিতিমােহন সেন-সহ অন্যান্য মানুষজন।

    ➡️  জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় তাদের অবদান অসামান্য। যেমন—জমিদারি সেরেস্তার কর্মচারী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় অধ্যাপনার কাজে যােগ দিয়ে লিখেছেন ছেলেমেয়েদের উপযােগী বাংলা ভাষার প্রথম বিজ্ঞান গ্রন্থমালা। লিখেছেন বাংলা ভাষার বৃহত্তম অভিধান। টোলের পণ্ডিত বিধুশেখর শাস্ত্রী দিয়েছেন বহু ভাষায় পাণ্ডিত্যের পরিচয়। মধ্যযুগের সাধুসন্তদের বাণী সংগ্রহ করে সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত ক্ষিতিমােহন সেন লিখেছেন অসাধারণ এক রচনা। রবীন্দ্রনাথের নিরন্তর দাবিতে তিনি ভারতীয় জীবনসাধনার হারিয়ে যাওয়া একটি অধ্যায়কে নতুনভাবে বাঁচিয়ে তােলেন।

২.৫ এঁরা প্রাণপণে সেই দাবি পূরণ করেছেন।’-কাদের কথা বলা হয়েছে ? কী-ই বা সেই দাবি ? সেই দাবিপূরণে প্রাণপণে তাঁদের নিয়ােজিত হওয়ারই বা কারণ কী বলে তােমার মনে হয় ? 

উঃ রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে শান্তিনিকেতনে যেসব গুণী ব্যক্তি এসেছিলেন, বিশেষত অধ্যাপনা ও জ্ঞানবিজ্ঞানমূলক নানা গ্রন্থ প্রণয়নের কাজে, তাঁদের কথা বলা হয়েছে।

    ➡️  দাবি বলতে শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের ছােটো ছেলেমেয়েদের উপযােগী করে বিজ্ঞান গ্রন্থমালা, বাংলা অভিধান, সাধুসন্তের জীবনী প্রভৃতি নানা গুণীজনের দ্বারা রচনা করিয়ে নেওয়াকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

    ➡️  সেই দাবি পূরণে তাঁদের নিয়ােজিত হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলরবীন্দ্রনাথের মতাে মানুষের আহ্বানকে উপেক্ষা করতে না-পারা। দ্বিতীয়ত, নিজেদের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার সুযােগলাভ।

২.৬ শান্তিনিকেতনের সঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক কীভাবে গড়ে উঠেছিল ? প্রবন্ধ অনুসরণে তাঁর সারাজীবনব্যাপী সারস্বত-সাধনার পরিচয় দাও।

উঃ শান্তিনিকেতনের সঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে । কারণ, হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ঠাকুর পরিবারের জমিদারি সেরেস্তার কর্মচারী। রবীন্দ্রনাথ সেই সেরেস্তা থেকে তাঁকে আবিষ্কার করেন এবং শান্তিনিকেতনে নিয়ে গিয়ে বাংলা ভাষার অভিধান ও অন্যান্য গ্রন্থ রচনা করিয়ে নেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন এবং ব্রম্মচর্যাশ্রমে সংস্কৃতের অধ্যপক হিসেবে নিযুক্ত করেন। অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে তিনি অভিধান রচনার কাজও সুসম্পন্ন করেন। এভাবেই হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় দিনের বেলা জমিদারির কাজকর্ম করার পর সন্ধেবেলায় সংস্কৃতির চর্চা করতেন। তাঁর বইয়ের পাণ্ডুলিপিও ছিল একখানা। অধ্যাপনা কাজের অবসরে রবীন্দ্রনাথের ‘সংস্কৃত প্রবেশ’ নামক একটি অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপিও তিনি সমাপ্ত করেন। তাঁর সবচেয়ে বড়াে কাজ হল বাংলা ভাষার সুবৃহৎ অভিধান রচনা। ১৩১২ বঙ্গাব্দ থেকে ১৩৫২ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত তিনি ওই অভিধানের জন্য জীবনের চল্লিশটি বছর মগ্ন থেকেছেন।

২.৭ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যের পরিচয় প্রবন্ধটিতে কীভাবে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে আলােচনা করাে।

উঃ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যের পরিচয় পাঠ্য প্রবন্ধে সুন্দরভাবে উদ্ভাসিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের মতাে একজন মহান ব্যক্তি, যিনি একইসঙ্গে লেখক, কবি এবং জমিদার, তিনি যখন হরিচরণের সান্ধ্যকাজ নিয়ে প্রশ্ন তােলেন আর হরিচরণও সসংকোচে তাঁর সংস্কৃতচর্চাদির কথা বলেন, তখন তা এক নাটকীয় মুহূর্তের সূচনা করে। এ ছাড়া, রবীন্দ্রনাথের অসমাপ্ত গ্রন্থ ‘সংস্কৃত প্রবেশ’ তাঁর দ্বারা সম্পন্ন হলে প্রবন্ধের এই বিশেষ অংশই পাঠককে মুগ্ধ করে। উভয়ের মধ্যে মনিব-কর্মচারী সম্পর্কও যেন মুছে গিয়ে শ্রদ্ধার সম্পর্ককে উদ্ভাসিত করে তােলে, আলােচ্য প্রবন্ধে এই কথাই বর্ণিত হয়েছে বলে প্রবন্ধটি সেই কারণেই চিত্তাকর্ষক হয়ে ওঠে। ২.৮ একক প্রচেষ্টায় এরূপ বিরাট কাজের দৃষ্টান্ত বিরল।—কোন কাজের কথা বলা হয়েছে ? একে ‘বিরাট কাজ’ বলার কারণ কী ?

উঃ হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত বাংলা ভাষার প্রথম বৃহত্তম অভিধান ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’-এর কথা বলা হয়েছে।

    ➡️ একে ‘বিরাট কাজ’ বলার কারণ হল, এই অভিধানটির রচনা থেকে শুরু করে মুদ্রণ কাজ পর্যন্ত সময় লেগেছিল চল্লিশ বছর। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আয়ুষ্কালের বিরানব্বই বছরের প্রায় অর্ধেক সময় ব্যয় হয়েছিল এই অভিধান রচনায়। তা ছাড়া অন্যান্য দেশে এমন কাজ সাধারণত কোনাে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কোনাে বিদ্বান পরিষদের পণ্ডিতগােষ্ঠীর দ্বারা সম্পন্ন হয়। কিন্তু হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রন্থটি শুধু তাঁরই একক প্রচেষ্টায় সম্পন্ন হয়েছিল। এই গ্রন্থের বৈশিষ্ট্য ও বিরাটত্বের লক্ষণ হল বাংলা এবং সংস্কৃত সাহিত্য থেকে প্রত্যেক শব্দের বহুবিধ প্রয়ােগের দৃষ্টান্ত। এ ছাড়াও এ কাজের জন্য প্রয়ােজন হয়েছে লেখকের বিপুল শ্রম এবং জ্ঞান। 

২.৯ ‘হরিচরণবাবুকে দেখে তাঁর সম্পর্কিত শ্লোকটি আমার মনে পড়ে যেত’-শ্লোকটি কার লেখা ? শ্লোকটি উদ্ধৃত করাে।

উঃ
 হরিচরণবাবু সম্পর্কিত শ্লোকটি দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা।

    ➡️ শ্লোকটি এইরূপ “কোথা গাে ডুব মেরে রয়েছ তলে হরিচরণ! কোন গরতে? বুঝেছি! শব্দ-অবধি-জলে মুঠাচ্ছ খুব অরথে !”

২.১০ হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সংকলিত অভিধানটির নাম কী ? গ্রন্থটির রচনা, মুদ্রণ ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে নানাবিধ ঘটনার প্রসঙ্গ প্রাবন্ধিক কীভাবে স্মরণ করেছেন ?

উঃ
 হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সংকলিত অভিধানটির নাম ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ।

    ➡️ গ্রন্থটি রচনার সূত্রপাত ঘটে ১৩১২ বঙ্গাব্দে আর শেষ হয় ১৩৩০ বঙ্গাব্দে। মুদ্রণের ব্যাপারে গ্রন্থকার সহায়তা পান মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর। কিন্তু মুদ্রণ কাজ শুরু হওয়ার আগেই মহারাজা মারা যান। এজন্য হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় আজীবন দুঃখিত ছিলেন, কারণ, কৃতজ্ঞতার অর্ঘ্যস্বরূপ তিনি এ গ্রন্থের একটি খণ্ডও তাঁর হাতে তুলে দিতে পারেননি। একইভাবে প্রেরণাদাতা রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কেও তিনি বলেছেন যে, এ গ্রন্থের শেষ খণ্ড তিনি অর্পণ করার সুযােগ পাননি, কারণ মুদ্রণ শেষ হওয়ার আগেই রবীন্দ্রনাথ প্রয়াত হন। প্রকাশের ব্যাপারে বিশ্বভারতীর তেমন সামর্থ্য ছিল না। তবে গ্রন্থকার সামান্য সম্বল নিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডে তা ক্রমশ প্রকাশের আয়ােজন করেন। পরে নগেন্দ্রনাথ বসু মহাশয় এবং শান্তিনিকেতনের প্রাক্তন ছাত্র ও অনুরাগীদের সহায়তায় বা আর্থিক আনুকূল্যে এই অভিধানটি প্রকাশিত হয়।

২.১১ প্রাবন্ধিকের সঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত স্মৃতির প্রসঙ্গ প্রবন্ধে কীরূপ অনন্যতার তা আলােচনা করাে।

উঃ
 স্বাদ এনে দিয়েছে প্রাবন্ধিকের সঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত স্মৃতির প্রসঙ্গ প্রবন্ধে যে অনন্যতার স্বাদ এনে দিয়েছে তা এককথায় অনবদ্য। কারণ, প্রবন্ধ বললেই নীরস কটি রচনাকে বােঝায়, যে রচনায় কোনাে তথ্য, তত্ত্ব, সমস্যা, সমাধান যুক্তি ইত্যাদির পারস্পরিক বন্ধন থাকে। এই রচনাতেও তার কিছু নমুনা বিদ্যমান। কিন্তু প্রাবন্ধিক হরিচরণের অভিধান কিংবা অন্যান্য জ্ঞানীগুণীর কাজকর্ম সম্বন্ধে বলার পরেই যখন জ্ঞানতাপস কর্মবীর মহৎচিত্ত হরিচরণের অন্যান্য দিক তুলে ধরেন, তখন বােঝা যায়, প্রবন্ধের মধ্যে এই সরসতা ভিন্ন স্বাদ এনে দিয়েছে। যেমন, লাইব্রেরিতে বসে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আপনমনে কাজে মগ্ন দেখে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চৌপদী স্মরণ করা, হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাতঃভ্রমণ, সান্ধ্যভ্রমণ, প্রাবন্ধিকের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় ইত্যাদি ব্যক্তিগত স্মৃতির প্রসঙ্গ প্রাবন্ধিক এ প্রবন্ধে যেভাবে এনেছেন, তাতে প্রবন্ধটি হয়ে উঠেছে একটি স্মৃতিচিহ্নের দলিল, যা অত্যন্ত সুখপাঠ্যও হয়ে উঠেছে।

২.১২ “তিনি অভিধান ছাড়াও কয়েকখানা গ্রন্থ রচনা করে গিয়েছেন।”—হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত অন্যান্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম ও বিষয়বস্তুর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উঃ
 হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত অভিধান ছাড়াও অন্যান্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম ও বিষয়বস্তু হল—‘শােরাব-রুস্তম’, ‘বশিষ্ঠ বিশ্বামিত্র’, ‘কবিকথা’, ‘মঞ্জুষা’ প্রভৃতি। এগুলি অমিত্রাক্ষর ছন্দে অনূদিত। তবে ‘শােরাব-রুস্তম’ রচনাটি ম্যাথু আর্নল্ডের লেখা। ছাত্রদের জন্য রচিত গ্রন্থগুলি হল তিনখণ্ডের ‘সংস্কৃত প্রবেশ’ । এটি মূলত রবীন্দ্রনাথের অসম্পূর্ণ রচনা এবং পরবর্তীকালে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এটিকে সম্পূর্ণ করেন। এটি সংস্কৃত শিক্ষার সহস্র প্রণালী উদ্ভাবনের উদ্দেশ্যে রচিত। ‘পালি প্রবেশ’, ‘ব্যাকরণ কৌমুদী’, ‘Hints on Sanskrit Translation and composition: ‘কবির কথা’, ‘রবীন্দ্রনাথের কথা প্রভৃতি গ্রন্থও তিনি রচনা করেন।

২.১৩ হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি প্রাবন্ধিক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর অনুরাগ কীভাবে ব্যক্ত করেছেন, তা বিশদভাবে আলােচনা করাে। 

উঃ হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রাবন্ধিক যে ভালােবাসতেন, সেই ভালােবাসার সঙ্গে তাঁর শ্রদ্ধা ছিল। শান্তিনিকেতনে কাজে যােগ দেওয়ার সময় প্রাবন্ধিক তাঁকে দেখেন, তিনি লাইব্রেরির একটি মাঝারি কক্ষে আপনমনে কাজ করছেন, যেন এক জ্ঞানতাপস। তাঁকে দেখে প্রাবন্ধিকের মনে পড়ত দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি চৌপদী। যার অর্থ কোনাে গর্তে বসে শব্দসমুদ্র থেকে মুঠো মুঠো অর্থ, কুড়ােচ্ছেন। শুধু তাই নয়, পঁচাত্তর বছর বয়সের পরে বিশ্বভারতী থেকে অবসর নেওয়ার পরেও, মাইনের কথা না-ভেবে আপনমনে কাজ করতেন তিনি। সকাল-সন্ধে ভ্রমণে বেরােতেন। চোখে কম দেখতেন তখন, কিন্তু চিনতে পারলে কুশল বিনিময় করতেন। এইসব থেকেই প্রমাণিত হয় যে, প্রাবন্ধিক তাঁর প্রতি কতটা অনুরক্ত ছিলেন।

আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। “.হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় হীরেন্দ্রনাথ দত্ত সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর” এরকম আরো অনেক বিষয় জানতে হলে অব্যশয় আমাদের অন্যান্য পোস্ট পড়তে ভুলবেন না। ধন্যবাদ ❤

Leave a Comment