ছন্নছাড়া অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর: আমরা আজকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। এরকম পোস্ট আমদের মতো কেউ করতে পারবে না। আমরা হলাম official-result.com. তাই আমাদের ওয়েবসাইটকে কখনো ভুলে জাবেন না। 😉😉
ছন্নছাড়া অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর
বিষয়সংক্ষেপ
কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত একটি জরুরি কাজে ট্যাক্সি করে যাচ্ছিলেন। সামনে গলির মােড়ে একটি কঙ্কালসার গাছকে দেখে তিনি ভেবেছিলেন, এটি গাছের প্রেতচ্ছায়া। কারণ, তাতে কোনাে পাতা বা সবুজের চিহ্নমাত্র ছিল না। রাস্তার মােড়ে কতকগুলি ছন্নছাড়া বেকার যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ড্রাইভার সেদিক দিয়ে যেতে চাইলেন না। কারণ, তারা গাড়ি থামিয়ে লিফট চাইবে। তারা নৈরাজ্যের বাসিন্দা। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের কোনাে উপকরণ নেই। কিন্তু শর্টকাট হবে বলে কবি সেদিক দিয়ে ড্রাইভারকে জোর করে নিয়ে গেলেন এবং তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, তাদের ট্যাক্সি লাগবে কিনা। সঙ্গে সঙ্গে তারা আনন্দে চিৎকার করে উঠল এবং গাড়িতে উঠে সামনের ভিড় দেখিয়ে কবিকে বলল, ভিড়টা কোনাে জলসা বা চিত্র তারকার অভ্যর্থনার জন্য নয়। একটি সহায়-সম্বলহীন ভিখিরি গাড়ি চাপা পড়েছে। তারা তাকে পাঁজাকোলা করে গাড়িতে তুলতে তুলতে খুশির সঙ্গে চেঁচিয়ে বলল—“প্রাণ আছে, প্রাণ আছে”। কবি সেই ভিখিরির রক্তের দাগ থেকে নিজের শালীনতা ও ভদ্রতাকে রক্ষা করার জন্য গাড়ি থেকে নেমে গেলেন। কবি ফিরে আসার সময় লক্ষ করলেন, মৃতপ্রায় গাছটিতে আবার হাজার হাজার সােনালি পাতা গজিয়েছে। শীতল ছায়া বিস্তার করছে গাছটি। কবি অবিশ্বাস্য চোখে দেখলেন সেই দৃশ্য।
নামকরণ
কবি আলােচ্য কবিতাটির নামকরণ করেছেন ছন্নছাড়া। কবিতাটির কাহিনি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় রাস্তায় চোঙা প্যান্ট ও চোখা জুতাে পরিহিত, রােখা মেজাজ এবং ঠোকা কপালওয়ালা একদল বেকার যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ির ড্রাইভার তাদেরকে ছন্নছাড়া বলে পরিচয় দেয়। কারণ, তারা নৈরাজ্যের বাসিন্দা, তাদের জন্য কিছুই নেই। তাদের ঘর-বাড়ি, রীতি-নীতি, ভদ্রতা-নম্রতা কিছুই নেই। তাদের জন্য কলেজে সিট নেই, অফিসে চাকরি নেই, কারখানায় কাজ নেই, হাসপাতালে বেড নেই, অনুসরণ করার যােগ্য নেতা নেই, প্রেরণা উদ্রেককারী প্রেম নেই। এককথায় তাদের কিছুই নেই। তাই তাদেরকে গাড়ির ড্রাইভার ছন্নছাড়া’ বলে চিহ্নিত করেছেন। তাদের আছে শুধু উদার আর পরােপকারী মন। আর সেই বৈশিষ্ট্যের প্রতি লক্ষ রেখেই কবি কবিতাটির নাম দিয়েছেন ছন্নছাড়া। সুতরাং, নামকরণটি যথার্থ ও খুবই সংগতিপূর্ণ হয়েছে।
হাতে কলমে
১.১ অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা দুটি বইয়ের নাম লেখাে।
উঃ অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা দুটি বইয়ের নাম হল—‘বেদে’ এবং ‘সারেঙ।
১.২ তিনি কোন্ পত্রিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন ?
উঃ তিনি কল্লোল পত্রিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।
২ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর একটি বাক্যে লেখাে :
২.১ কবি প্রথমে গাছটিকে কেমন অবস্থায় দেখেছিলেন ?
উঃ কবি প্রথমে গাছটিকে শূন্যের দিকে এলােমেলােভাবে কতকগুলি শুকনাে কাঠির কঙ্কাল ওঠানাে গাছের প্রেতচ্ছায়া রূপে দেখেছিলেন।
২.২ ড্রাইভার বললে, ওদিকে যাব না। ওদিকে না যেতে চাওয়ার কারণ কী ?
উঃ ওদিক দিয়ে গেলেই রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেওয়া কতকগুলি বেকার ছােকরা গাড়ি থামিয়ে লিফট চাইবে। তাই ডাইভার ওদিক দিয়ে যেতে চায়নি।
২.৩ তাই এখন পথে এসে দাঁড়িয়েছে সড়কের মাঝখানে। —সড়কের মাঝখানে, পথে এসে দাঁড়ানাের কারণ কী ?
উঃ বেকার যুবকদের আড্ডা দেওয়ার জন্য থাকা মধ্যবিত্ত বাড়ির এক চিলতে ফালতু রকটি লােপাট হয়ে যাওয়ায় তারা পথে এসে দাঁড়িয়েছে।
২.৪ আমি বললুম, না ওখান দিয়েই যাব, কবির ‘ওখান দিয়েই যেতে চাওয়ার কারণ কী ?
উঃ কবির ‘খান’ দিয়ে যাওয়ার কারণ হল—ওখান দিয়ে গেলে তাঁর শর্টকাট হয়।
২.৫ ‘ওই দেখতে পাচ্ছেন না ভিড় ? ওখানে কীসের ভিড় ?
উঃ এক বেওয়ারিশ ভিখারি গাড়ি চাপা পড়ায় ওখানে মানুষের ভিড় জমেছে।
২.৬ কে সে লােক ? –‘লােক’-টির পরিচয় দাও।
উঃ লােকটি সহায়সম্বলহীন এক বেওয়ারিশ ভিখিরি। সে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে।
২.৭। চেঁচিয়ে উঠল সমস্বরে…’—কী বলে তারা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল ?
উঃ দুর্ঘটনাগ্রস্ত ভিখিরিটির দেহে প্রাণ আছে, প্রাণ আছে বলে তারা সমস্বরে চিৎকার করে উঠেছিল।
২.৮ ‘আমি নেমে পড়লুম তাড়াতাড়ি’—কবি তাড়াতাড়ি নেমে পড়লেন কেন ?
উঃ কবি ভিখিরির দেহের রক্তের দাগ থেকে ভদ্রতা ও শালীনতাকে বাঁচানাের জন্য তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন।
২.৯ ‘ফিরে আসতেই দেখি…’ ফেরার পথে কবি কী দেখতে পেলেন ?
উঃ ফেরার পথে কবি দেখলেন, গলির মােড়ে শুকনাে গাছটি সােনালি কচি পাতায়, গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলে, ফুলের সুবাসে-গন্ধে আর রং-বেরঙের পাখিতে ভরে গিয়েছে।
২.১০ ‘অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে দেখলুম’ -কবির চোখে অবিশ্বাসের ঘাের কেন ?
উঃ আপাত প্রাণহীন, শুষ্ক, নীরস, রুক্ষ গাছের মধ্যে লুকোনাে অন্তহীন সজীব প্রাণের প্রকাশ আর কঠোরতার বিপরীতে মাধুর্যের ব্যাপক আয়ােজন দেখে কবির চোখে অবিশ্বাসের ঘাের লেগে যায়।
৩ নির্দেশ অনুসারে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
৩.১, ওই পথ দিয়ে/জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে।কবির যাত্রাপথের অভিজ্ঞতার বিবরণ দাও।
উঃ কবি তাঁর এক বিশেষ প্রয়ােজনে ট্যাক্সি করে যাচ্ছিলেন। সামনে কয়েকজন ছন্নছাড়া বেকার যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, গাড়ির চালক সে দিক দিয়ে যেতে চাইলেন না। কারণ, তাদের সামনে গেলেই তারা গাড়ি থামিয়ে লিফট চাইবে। কিন্তু ওদিক দিয়ে গেলে কবির শর্টকাট হয় বলে, তিনি ড্রাইভারকে জোর করে নিয়ে গেলেন। তাদের সামনে হাজির হতেই জিজ্ঞাসা করলেন, তাদের ট্যাক্সি লাগবে কি না। সঙ্গে সঙ্গে তারা আনন্দের সঙ্গে চিৎকার করে বলে ওঠে “পেয়ে গেছি, পেয়ে গেছি। তাদের গন্তব্যস্থলের কথা জানতে চাইলে, তারা জানায় বেশি দূরে নয়—কাছেই। এরপর তারা সামনে জমে থাকা মানুষের ভিড় দেখিয়ে বলে, তা কোনাে জলসার জন্য বা কোনাে চিত্রতারকার অভ্যর্থনার জন্য নয়। এক অসহায় বেওয়ারিশ ভিখিরিকে চাপা দিয়ে একটি গাড়ি উধাও হয়ে গিয়েছে। এই বলে তারা রক্তে-মাংসে দলা পাকিয়ে যাওয়া ভিখিরিটিকে পাঁজাকোলা করে ট্যাক্সিতে তুলতে তুলতে সমস্বরে চেঁচিয়ে বলে ওঠে “প্রাণ আছে, প্রাণ আছে”। কবি রক্তের দাগ থেকে নিজের ভদ্রতা ও শালীনতাকে রক্ষা করতে গিয়ে কবি গাড়ি থেকে নেমে গেলেন।
৩.২ গলির মােড়ে একটা গাছ দাঁড়িয়ে গাছ না গাছের প্রেতচ্ছায়া— —একটি গাছ দাঁড়িয়ে আছে বলেও কেন পরের পঙক্তিতে তাকে ‘গাছের প্রেতচ্ছায়া’ বলা হয়েছে তা বুঝিয়ে দাও।
উঃ গলির মােড়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছটিকে দেখে কবির প্রথমে গাছ বলে মনে হলেও পরবর্তীকালে তাঁর মনে হয়েছে, সেটি গাছের প্রেতচ্ছায়া। কারণ, গাছের ডালপালাগুলি এদিকে-ওদিকে বাঁকানাে কতকগুলি শুষ্ক কাঠির কঙ্কালের মতাে শূন্যের দিকে তােলা ছিল। সেগুলি এতটাই রুক্ষ-রিক্ত-জীর্ণ যে, তার শরীরের কোথাও কোনাে লতাপাতা, ছাল-বাকলের চিহ্ন নেই। নেই কোথাও এক বিন্দু সবুজের প্রতিশ্রুতি বা আভাস এবং সামান্যতম রসের সম্ভাবনা। তাই গাছটিকে কবি ‘গাছের প্রেতচ্ছায়া’ বলে অভিহিত করেছেন।
৩.৩ ওই পথ দিয়ে/জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে।—এভাবে কবিতায় উত্তমপুরুষের রীতি কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, অন্তত পাঁচটি পঙক্তি উদ্ধৃত করে বুঝিয়ে দাও।
উঃ আলােচ্য কবিতাটিতে বেশ কয়েকটি চরণে উত্তম পুরুষের রীতি ব্যবহার করা হয়েছে। কবি তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়েই উত্তম পুরুষের রীতি ব্যবহার করেছেন। যেমন- (১) “আমি বললুম, না ওখান দিয়েই যাব”, (২) “জিজ্ঞেস করলুম, তােমাদের ট্যাক্সি লাগবে?” (৩) “ওখান দিয়েই আমার শর্টকাট”, (৪) “ফিরে আসতেই দেখি”, (৫) “অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে দেখলুম”—উল্লিখিত প্রতিটি চরণই উত্তম পুরুষের রীতিতে প্রযুক্ত। কবি তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাকে নিজের মুখে বলার জন্যই এই রীতি অবলম্বন করেছেন।
৩.৪ ‘কারা ওরা ?’—কবিতা অনুসরণে ওদের পরিচয় দাও।
উঃ ওরা হচ্ছে, এক বিরাট নৈরাজ্যের অধিবাসী। ওদের বাস্তুভিটে রীতি-নীতি, আইন-কানুন, বিনয়-ভদ্রতা, শ্লীলতা-শালীনতা কিছুই নেই। ওদের জন্য কলেজে সিট নেই, অফিসে চাকরি নেই, কারখানায় কাজ নেই, ট্রামে-বাসে বসার জায়গা নেই, হাসপাতালে শয্যা নেই। এমনকি তাদের জন্য খেলার মাঠ, অনুসরণ করার মতাে যােগ্য নেতা নেই, কর্মে প্রেরণা সৃষ্টিকারী ভালােবাসাও নেই। ওদের প্রতি সম্ভাষণে কারও সহানুভূতি নেই। ওরা একদল ছন্নছাড়া, বেকার যুবক। ওরা পরােপকারী কিন্তু, যাদের কেউ নেই, কিছু নেই—ওরা তাদের কথা ভাবে। তাদের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে। আসলে ওরা হল আমাদের দেশের লক্ষ কোটি বেকার যুব-সম্প্রদায়।
৩.৫ ‘ঘেঁষবেন না ওদের কাছে। এই সাবধানবাণী কে উচ্চারণ করেছেন ? ‘ওদের’ বলতে কাদের কথা বােঝানাে হয়েছে ? ওদের কাছে না-ঘেঁষার পরামর্শ দেওয়া হল কেন ?
উঃ প্রশ্নোপ্ত সাবধান বাণীটি উচ্চারণ করেছেন গাড়ির অর্থাৎ, ট্যাক্সির চালক।
➡️‘ওদের’ বলতে তথাকথিত ভদ্রসমাজ থেকে বহির্ভূত নৈরাজ্যের বাসিন্দা একদল ছন্নছাড়া বেকার যুবকদের বােঝানাে হয়েছে।
➡️‘ছন্নছাড়া কবিতার উদ্দিষ্ট ‘ওরা সমাজের ভদ্রতাহীন নৈরাজ্যের মানুষ। ড্রাইভারের ভাবনায় ওদের নীতিবােধ নেই, ব্যস্ততা নেই, এমনকি অন্য মানুষের প্রতি তাদের কোনাে দরদ, সহানুভূতিও নেই। ওরা কেবল অকারণ সময় নষ্ট করে অন্যের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। তাই ওদিক দিয়ে গেলে গাড়ির যাত্রীদের অহেতুক হেনস্তা করে তারা লিফট চাইতে পারে, আর তাতে সেই চাওয়াকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না। তাতে তাদের অকারণ দেরি হবার সম্ভাবনা থাকে। সেকারণেই বক্তা ওদের কাছে না-ঘেঁষার পরামর্শ দিয়েছেন।
৩.৬। তাই এখন এসে দাঁড়িয়েছে সড়কের মাঝখানে। —এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে ? তাদের জীবনের এমন পরিণতির কারণ কবিতায় কীভাবে ধরা পড়েছে তা নির্দেশ করাে।
উঃ এখানে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেওয়া চোঙা প্যান্ট পরিহিত রােখা মেজাজ ও ঠোকা কপালওয়ালা একদল ছন্ন ছাড়া বেকার যুবকদের কথা বলা হয়েছে।
➡️ তাদের জীবনে এমন পরিস্থিতির কারণ হল, ওদের জন্য কিছু না-থাকা। ওদের জন্য কলেজে সিট নেই, অফিসে চাকরি নেই, কারখানায় কাজ নেই, ট্রামেবাসে বসার জায়গা নেই। এক কথায় ভদ্রসমাজের কোনাে সুযােগ-সুবিধাই নেই। মেলায় বা খেলায় টিকিট নেই, হাসপাতালে শয্যা নেই, খেলার জন্য মাঠ নেই, অনুসরণ করার মতাে যােগ্য নেতা নেই। সর্বোপরি তাদের জীবনে প্রেরণা জাগানাের মতাে প্রেমও নেই। ওদের প্রতি কারও কোনাে সহানুভূতি নেই। তাই, এক মধ্যবিত্ত বাড়ির এক চিলতে অপ্রয়ােজনীয় রােয়াক ছিল তাদের আড্ডা দেওয়ার জায়গা। তাও চলে যাওয়ায় তারা অবশেষে সড়কের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছে।
৩.৭ ‘জিজ্ঞেস করলুম, তােমাদের ট্যাক্সি লাগবে ? প্রশ্নবাক্যটিতে প্রশ্নকর্তার কোন অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে ? তাঁর এই প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়ার পর কীরূপ পরিস্থিতি তৈরি হল ?
উঃ আলােচ্য প্রশ্নবাক্যটিতে প্রশ্নকর্তার সহানুভূতিশীল দরদি মনােভাবের প্রকাশ ঘটেছে। » প্রশ্নকর্তার প্রশ্নটি ছুড়ে দেওয়ার পরই সেই ছন্নছাড়া বেকার যুবকগুলি একসঙ্গে অতিশয় উৎসাহে চিৎকার করে ওঠে “পেয়ে গেছি পেয়ে গেছি” বলে। সঙ্গে সঙ্গে তিন তিনটি যুবক উঠে পড়ে ট্যাক্সিতে। সামনের ভিড় দেখিয়ে একজন বলে, ভিড়টি কোনাে জলসা চিত্রতারকার জন্য নয়। একটি গাড়ি এক বেওয়ারিশ ভিখিরিকে চাপা দিয়ে চলে গিয়েছে। তাদের কয়েকজন গাড়িটিকে ধাওয়া করেছে আর তারা ফাঁকা ট্যাক্সি খুঁজছিল। ভিড়ের কাছে যাওয়াতে রাস্তার মাঝখানে রক্তে-মাংসে দলা পাকানাে ভিখিরির শরীরটিকে তারা পাঁজাকোলা করে তুলে নেয় ট্যাক্সিতে। তারপর প্রশ্নকর্তা অর্থাৎ, কবিতার কথক রক্তের দাগ থেকে নিজের ভব্যতা ও শালীনতাকে রক্ষা করার জন্য গাড়ি থেকে নেমে যান।
৩.৮। প্রাণ আছে, এখনাে প্রাণ আছে। এই দুর্মর আশাবাদের ‘তপ্ত শঙ্খধ্বনি’ কবিতায় কীভাবে বিঘােষিত হয়েছে তা আলােচনা করাে।
উঃ একটি বেওয়ারিশ ভিখিরি গাড়ি চাপা পড়ায় একদল ছন্নছাড়া বেকার যুবক ফাঁকা ট্যাক্সি খুঁজছিল এবং সেটি পেয়ে যাওয়ায় গাড়িটিকে নিয়ে তাড়াতাড়ি তারা ঘটনাস্থলে যায়। রক্তে-মাংসে দলা পাকিয়ে যাওয়া ভিখিরির শরীরটিকে তারা পাঁজাকোলা করে তুলে। নেয় ট্যাক্সিতে। শরীরটি তােলার সময়ই তারা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে চেঁচিয়ে ওঠে—শরীরটিতে এখনও প্রাণ আছে বুঝতে পেরে। এইভাবেই শহরের ইট-কাঠ পাথরে পরিবেষ্টিত দয়া-মায়াহীন পরিবেশের মধ্যে থেকে একটি মায়া-মমতাপূর্ণ বিশ্বাসের উয় শঙ্খধ্বনি ধ্বনিত হয়ে উঠে—“প্রাণ আছে, প্রাণ আছে” কথাগুলির মাধ্যমে। কারণ, প্রাণ থাকলেই মর্যাদা থাকে এবং সমস্ত বাধা প্রতিবন্ধকতার বাইরেও থাকে অস্তিত্বের অধিকার—আলােচ্য কবিতায় সেটিই ঘােষিত হয়েছে।
৩.৯ কবিতায় নিজের ভব্যতা ও শালীনতাকে বাঁচাতে চাওয়া মানুষটির ছন্নছাড়া’-দের প্রতি যে অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে তা বুঝিয়ে দাও।
উঃ কবিতায় নিজের ভব্যতা ও শালীনতাকে বাঁচাতে চাওয়া মানুষটি হলেন কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তিনি একটি বিশেষ প্রয়ােজনে ট্যাক্সি করে যাচ্ছিলেন। গলির মােড়ে কয়েকজন ছন্নছাড়া বেকার যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ির ড্রাইভার জানায়— সে সেদিক দিয়ে যাবে না। কারণ, তাদের সামনে গেলেই তারা গাড়ি থামিয়ে লিফট চাইতে পারে । তাদের সম্পর্কে ড্রাইভারের কাছ থেকে সবকিছু শুনে কবি ড্রাইভারকে সেদিক দিয়েই যেতে বললেন। তাদের কাছে গিয়ে কবি জিজ্ঞাসা করেন তাদের ট্যাক্সি লাগবে কি না। কবি হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন তাদের দুর্দশাকে। যদিও পরবর্তীকালে তাদের পরােপকারী সুলভ মানসিকতা দেখে তিনি তফাতে সরে গিয়েছেন। তবু এই কর্কশ-নীরস ইট-কাঠপাথর পরিবেষ্টিত পরিবেশের মধ্যেও তাদের এই আচরণ, সহমর্মিতা বােধ কবিকে মুগ্ধ করেছে। তাই ‘ছন্নছাড়া’ বলে পরিচিতদের প্রতি কবির আন্তরিক সহানুভূতিপূর্ণ অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে।
৩.১০ কবিতায় ‘গাছটি কীভাবে প্রাণের প্রতীক হয়ে উঠেছে তা আলােচনা করাে।
উঃ আলােচ্য কবিতায় গলির মােড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাছকে দেখে কবির মনে হয়েছিল, সেটি গাছের প্রেতচ্ছায়া। কারণ, আঁকা-বাঁকা শুকনাে কতকগুলি কাঠির কঙ্কালের মতাে গাছটির ডাল-পালাগুলি শূন্যে তােলা ছিল। গাছের সারা শরীর ছিল রুক্ষ, রুষ্ট-রিক্ত ও জীর্ণ, তাতে লতা-পাতার কোনাে চিহ্ন নেই। নেই কোনাে সবুজের একবিন্দু প্রতিশ্রুতি। রাস্তায় চাপা পড়া বেওয়ারিশ ভিখিরিটিও যেভাবে রক্তে-মাংসে দলা পাকিয়ে পড়েছিল তাতে তার শরীরে প্রাণের উপস্থিতি নিয়ে সংশয় ছিল। তা ছাড়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দেওয়া ছন্নছাড়া যুবকদের দেখেও বােঝার উপায় ছিল না তাদের মধ্যেও দয়া-মায়া এবং পরােপকারী সুলভ মন লুকিয়ে আছে। ঘটনাক্রমে ভিখিরির দলা পাকানাে শরীরে প্রাণের উপস্থিতি এবং রকবাজদের মনে দয়া-মায়ার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করে কবি যখন ফিরছেন, তখন তিনি দেখতে পান—গলির মােড়ে দাঁড়িয়ে থাকা কঙ্কালসার গাছটির মধ্যেও কচি-কচি পাতার চিহ্ন দেখা দিয়েছে। বাতাসের প্রভাবে তারা মর্মরিত হচ্ছে। এভাবেই গাছটি প্রাণের প্রতীক হয়ে উঠেছে কবিতায় ।
৩.১১‘এক ক্ষয়হীন আশা। এক মৃত্যুহীন মর্যাদা।’—প্রাণকে কবির এমন অভিধায় অভিহিত করার সংগত কারণ নিজের ভাষায় বিশ্লেষণ করাে।
উঃ ‘ছন্নছাড়া কবিতায় কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত প্রাণকে’ দুটি বিশেষণে বিশেষায়িত করেছেন। প্রথমত, এক ক্ষয়হীন আশা’—যে আশা বা আকাঙ্ক্ষার কখনও ক্ষয় হয়। বা সমাপ্তি হয় না। দ্বিতীয়ত, এক মৃত্যুহীন মর্যাদা’ অর্থাৎ, যে মর্যাদার কোনাে বিনাশ নেই। কবিতায় এই দুটি বিষয়কে বােঝাতে গিয়ে, কবি একটি কঙ্কালসার গাছ এবং ছন্নছাড়া বেকার যুবকদের অবলম্বন করেছেন। কঙ্কালসার গাছটিকে দেখে কবির মনে হয়েছিল, তাতে প্রাণের কোনাে চিহ্ন নেই। কিন্তু তার পরেই তাতে হাজার হাজার সােনালি কচি পাতা দেখা দিয়েছে। ফুলে ফুলে ভরে গিয়েছে গাছ। তেমনই ছন্নছাড়া বেকার যুবকদের দেখেও বােঝার উপায় ছিল যে, তাদের মধ্যে পরােপকারী মন-মানসিকতা লুকিয়ে আছে। সুতরাং, ‘ক্ষয়হীন আশা’ ও ‘মৃত্যুহীন মর্যাদা’ অভিধা দুটিকে আলােচ্য কবিতায় প্রাণের’ ওপর আরােপ করা যথাযথ হয়েছে বলে আমার মনে হয়।
8 নীচের প্রতিটি শব্দের দল বিভাজন করে দেখাও : এলােমেলাে, ছন্নছাড়া, নৈরাজ্যে, বাসিন্দে, শালীনতা, আত্মীয়তা, শঙ্খধ্বনি, পত্রপুঞ্জে।
➡️ এলােমেলাে = এ -লাে – মে – লাে (মুক্তদল—এ, লাে, মে, লাে (৪টি), রুদ্ধদল—শূন্য]।
➡️ ছন্নছাড়া = ছন্ – ন – ছা – ড়া (মুক্তদল-ন, ছা, ড়া (৩টি), রুদ্ধদল-ছন্ (১টি)] ।
➡️ নৈরাজ্যে = নৈ – রাজ্ – জে [মুকদল — নৈ, জে (২ টি), রুদ্ধদল -রাজ্ (১টি)]।
➡️ বাসিন্দে = বা – সিন্ – দে [মুক্তদল-বা, দে (২ টি), রুদ্ধদল-সি (১টি)]।
➡️ শালীনতা = শা- লী – ন – তা [মুক্তদল– শা, লী, ন, তা (৪টি), রুদ্ধদল—শূন্য] ।
➡️ আত্মীয়তা = আত্ – তী – য় – তা (মুক্তদল—তী, য়, তা (৩টি), রুদ্ধদল—আত (১টি)] ।
➡️ শঙ্খধ্বনি = শঙ্ – খ- ধ্ব – নি (মুক্তদল—খ, ধ্ব, নি (৩টি), রুদ্ধদল—শঙ্ (১টি)]।
➡️ পত্রপুঞ্জে = পত্ -ত্র -পুন্- জে (মুক্তদল -ত্র , জে (২ টি), রুদ্ধদল – পত, পুন্ (২ টি)]।
৫ নীচের প্রতিটি শব্দের ব্যুৎপত্তি নির্ণয় করাে : বর্তমান, ভদ্রতা, সম্ভাষণ, গতি, ভিখিরি, ভব্যতা, রুষ্ট, জিজ্ঞেস, পিছে।
➡️ বর্তমান =বৃৎ + শানচ (মান)।
➡️ ভদ্রতা =ভদ্র + তা।
➡️ সম্ভাষণ = সম্ – ভাস্ + অনট।
➡️ গতি =গম্+ক্তি।
➡️ ভিখিরি = ভিখ + আরি (ইরি)।
➡️ ভব্যতা = ভূ + য (র্তৃ)+ তা।
➡️ রুষ্ট = রুষ্ + ত (র্তৃ )।
➡️ জিজ্ঞেস = জ্ঞা-সন্ + এ + অ ।
➡️ পিছে = পিছ্ + এ ।
৬ নীচের শব্দগুলিতে ধ্বনি পরিবর্তনের কোন্ কোন্ নিয়ম কাজ করেছে তা দেখাও : জুতাে, বাসিন্দে, ক্ষেত, চোখ, কদ্দুর , ভিখিরি।
➡️ জুতাে = জুতা > জুতাে (স্বরসংগতি)।
➡️ বাসিন্দে = বাসিন্দা > বাসিন্দে (স্বরসংগতি)।
➡️ ক্ষেত = ক্ষেত্র > ক্ষেত (ধ্বনিলােপ)।
➡️ চোখ = চক্ষু > চোখ (সমীভবন)।
➡️ কদ্দুর =কত দূর >কদ্দুর (পরাগত সমীভবন)।
➡️ ভিখিরি = ভিখারি > ভিখিরি (স্বরসংগতি)।
৭ নিম্নলিখিত পদগুলির ব্যাসবাক্য-সহ সমাসের নাম লেখাে : প্রেতচ্ছায়া, ছাল-বাকল, ক্ষুধাহরণ, সােল্লাসে, স্নেহার্ড, শঙ্খধ্বনি।
➡️ প্রেতচ্ছায়া = প্রেতের ছায়া। (সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস)
➡️ ছাল-বাকল = ছাল ও বাকল। (সমার্থক দ্বন্দ্ব সমাস)
➡️ ক্ষুধাহরণ = ক্ষুধাকে হরণ। (কর্ম তৎপুরুষ সমাস)
➡️ সােল্লাসে = উল্লাসের সহিত বর্তমান। (সহাৰ্থক বহুব্রীহি সমাস)
➡️ স্নেহার্জ = স্নেহ দ্বারা আর্দ্র। (করণ তৎপুরুষ সমাস)
➡️ শঙ্খধ্বনি = শঙ্খের ধ্বনি। (সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস)
৮ কোন শব্দে কী উপসর্গ আছে আলাদা করে দেখাও : প্রতিশ্রুতি, বেওয়ারিশ, অনুসরণ, প্রচ্ছন্ন, অভ্যর্থনা, অধিকার।
➡️ প্রতিশ্রুতি = প্রতি-উপসর্গ।
➡️ বেওয়ারিশ = বে-উপসর্গ (বিদেশি উপসর্গ)।
➡️ অনুসরণ = অনু-উপসর্গ।
➡️ প্রচ্ছন্ন = প্র-উপসর্গ।
➡️ অভ্যর্থনা = অভি-উপসর্গ।
➡️ অধিকার = অধি-উপসর্গ।
৯ নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করাে :
৯.১ ওই পথ দিয়ে জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে। (জটিল বাক্যে)
➡️ ওই যে পথ সেখান দিয়ে জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে।
৯.২ দেখছেন না ছন্নছাড়া কটা বেকার ছােকরা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। যৌগিক বাক্যে)
➡️ দেখছেন না ছন্নছাড়া কটা বেকার যুবক রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে এবং আড্ডা দিচ্ছে।
৯.৩ কারা ওরা ? (প্রশ্ন পরিহার করাে)
➡️ ওদের পরিচয় জানতে চাইছি।
৯.৪ ঘেষবেন না ওদের কাছে। (ইতিবাচক বাক্য)
➡️ ওদের কাছে ঘেঁষা থেকে বিরত থাকুন।
৯.৫ একটা স্ফুলিঙ্গ-হীন ভিজে বারুদের স্থূপ। (না-সূচক বাক্যে)
➡️ একটা স্ফুলিঙ্গ-হীন ভিজে বারুদের স্কুপ ছাড়া আর কিছুই নয়।
৯.৬ জিজ্ঞেস করলুম, তােমাদের ট্যাক্সি লাগবে ? (পরােক্ষ উক্তিতে)
➡️ তাদের ট্যাক্সি লাগবে কি না জিজ্ঞাসা করা হল।
৯.৭ আমরা খালি ট্যাক্সি খুঁজছি।(জটিল বাক্যে)
➡️ আমরা এমন ট্যাক্সি খুঁজছি যা খালি।
৯.৮ দেখতে দেখতে গুচ্ছে গুচ্ছে উথলে উঠেছে ফুল। (ক্রিয়ার কাল নির্দেশ করাে)
➡️ পুরাঘটিত বর্তমান কাল।
আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। “.ছন্নছাড়া অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর” এরকম আরো অনেক বিষয় জানতে হলে অব্যশয় আমাদের অন্যান্য পোস্ট পড়তে ভুলবেন না। ধন্যবাদ ❤