আজকে আমরা জানবো কোষ বিভাজন কাকে বলে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আশা করি আপনারা এই প্রশ্নের উত্তর ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন।

কোষ বিভাজন কাকে বলে?
যে পদ্ধতিতে একটি কোষ হইতে দুই বা অধিক অপত্য কোষের সষ্টি হয় তাহাকে কোষ বিভাজন বলে।
অথবা: যে পদ্ধতিতে মাতৃকোশ হতে অপত্য কোশের সৃষ্টি হয় তাকে কোষ বিভাজন বলে।
কোষ বিভাজন একটি মৌলিক ও অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমেই জীবের দৈহিক বৃদ্ধি ও বংশবৃদ্ধি ঘটে। অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ায় জীবকোষের বিভক্তির মাধ্যমে একটি থেকে দুইটি বা চারটি কোষের সৃষ্টি হয় তাকে কোষ বিভাজন বলে।
কোষ বিভাজন কত প্রকার কি কি?
কোষ বিভাজন প্রধানত তিন প্রকার। যেমন:
- অ্যামাইটোসিস
- মাইটোসিস
- মিয়োসিস
অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোষ-বিভাজন কাকে বলে?
যে কোষ বিভাজনে পিণ্ডিল গঠিত না হইয়া নিউক্লিয়াসটি সরাসরি মধ্যাংশ বরাবর খাঁজ সৃষ্টির দ্বারা দুইটি অপত্য খণ্ডাংশে বিভক্ত হয় তাহাকে অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলে।
এই প্রক্রিয়ায় মাইটোসিসের ন্যায় নিউক্লিয়াসের ভাঙ্গন, ক্রোমােজোম সষ্টি এবং নিউক্লিয়াসের পুনর্গঠন প্রভৃতি ঘটনা ঘটে না।
নিউক্লীয়াসের বিভাজন সরাসরি খাঁজ সৃষ্টির মাধ্যমে ঘটে বলিয়া এই বিভাজনকে প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলে।
উদাহরণ—অ্যামিবা, ব্যাকটিরিয়া, কারা (শৈবাল), ঈস্ট (ছত্রাক)।
মাইটোসিস বা পরোক্ষ বিভাজন কাকে বলে?
যে কোষ বিভাজনের মাধ্যমে কোন কোষের নিউক্লিয়াসটি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি করে এবং প্রতিটি নিউক্লিয়ামের ক্রোমোসোমের সংখ্যা ও গুণাগুণ হুবহু মাতৃনিউক্লিয়াসের সমান থাকে, তাকে মাইটোসিস বলে।
অথবা: যে বিশেষ পদ্ধতিতে নিউক্লিয়াসের নানাবিধ পরিবর্তনের মাধ্যমে মাতৃ নিউক্লিয়াস সম-গুণসম্পন্ন দুইটি অপত্য নিউক্লিয়াসের জন্ম দেয় তাহাকে মাইটোসিস বলে।
মাইটোসিস বিভাজনের অপর নাম সমান বিভাজন।
মাইটোসিসের নিউক্লিয়াসের বিভাজন প্রক্রিয়াকে পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। যথাঃ
- প্রোফেজ
- প্রো-মেটাফেজ
- মেটাফেজ
- অ্যানাফেজ
- টেলোফেজ
মিয়োসিস কাকে বলে?
মাইটোসিস পদ্ধতিতে দেহজ কোষের নিউক্লীয় বিভাজন হয় এবং একটি নিউক্লীয়াস হইতে দুইটি সমগণ সম্পন্ন অপত্য নিউক্লীয়াস উৎপন্ন হয়। জননকোষ উৎপন্ন করতে শুক্রাশয়ে বা ডিম্বাশয়ে বা রেণুস্থলীতে মাতৃকোষে যে বিভাজন দেখা যায় এবং যে বিভাজনের দ্বারা চারটি জননকোষ বা রেণু উৎপন্ন হয় তাহাকে মিয়োসিস বলে।
মিয়োসিস কোষ বিভাজনের গুরুত্ব
- জননকোষঃ এর মাধ্যমে জনন কোষ উৎপন্ন হয়, তাই যৌ*ন প্রজননক্ষম জীবে মিয়োসিস না ঘটলে বংশবৃদ্ধি অসম্ভব।
- প্রজাতির স্বকীয়তা ঠিক রাখাঃ ক্রোমোজোম সংখ্যা সঠিক রাখার মাধ্যমে বংশানুক্রমে প্রতিটি প্রজাতির স্বকীয়তা ঠিক থাকে।
- বৈচিত্রের সৃষ্টিঃ যৌ*ন প্রজনন সম্পন্ন কোন দুটি জীবই হুবুহু একই রকম হয়না। মিয়োসিসের ফলে এ বৈচিত্রের সৃষ্টি হয়।
- ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুব রাখাঃ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রজাতিতে বংশানুক্রমে ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুব থাকে।
Also Read: সিলভার কাকে বলে?
কোষের আবিষ্কার
বিজ্ঞানী রবার্ট হুক সর্বপ্রথম ১৬৬৫ সালে কোষ নামটি ব্যবহার করে ছিলেন। রবার্ট হোক তার প্রকাশিত একটি গ্রন্থে ১৬৬৫ সালে কোষের কথা উল্লখ করেন যেই গ্রন্থটির নাম হল মাইক্রোগ্রাফিয়া(Micrographia) । কোষটি একটি কর্ক কোষ ছিল।
এটি মূলত একটি মৃত কোষ ছিল। রবার্ট হুক একটি গাছের কাঠের অংশকে পাতলা করে কেটে পরিক্ষা করার সময় দেখতে পেলেন, এই কাঠের অংশটির মধ্যে অসংখ্য ছোট ছোট কুঠুরি বা প্রকোষ্ঠ যা দেখতে মৌমাছির চাকের ন্যায় ছিল। আর এই কারণেই তিনি এটিকে নাম দেন সেল বা প্রকোষ্ঠ। পরবর্তিতে ১৬৭৮ সালে অ্যান্টনি ভ্যান লিউয়েনহুক জীবীত কোষ পর্যবেক্ষণ করেন।
এরো কিছু সময় পর চূরান্ত কোষ তত্ত্ব আবিষ্কার হওয়ার পূর্বে চেক বিজ্ঞানী Jan Evangelista Purkyne অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে উদ্ভীত কোষ পর্যবেক্ষণ করেন ১৮৩৭ সালে। এসময় তিনি খুবই ছোট ছোট কিছু দানা লক্ষ করেন। বিজ্ঞানী Matthias Jakob Schleiden এবং Theodor Schwann ১৮৩৯ সালে কোষ তত্ত্ব আবিষ্কার করেন এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রধান করেন।
SOME FAQ:
কোষের আবিষ্কারক কে?
রবার্ট হুক কোষের অস্তিত্ব সর্বপ্রথম পর্যবেক্ষণ করেন, তাই রবার্ট হুককে কোষের আবিষ্কারক বলা হয়।