কোষ বিভাজন কাকে বলে? | Kos Bivajon Kake Bole Bangla | কোষ বিভাজন কত প্রকার কি কি? | কোষের আবিষ্কার

আজকে আমরা জানবো কোষ বিভাজন কাকে বলে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আশা করি আপনারা এই প্রশ্নের উত্তর ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন।

কোষ বিভাজন কাকে বলে
কোষ বিভাজন কাকে বলে

কোষ বিভাজন কাকে বলে?

যে পদ্ধতিতে একটি কোষ হইতে দুই বা অধিক অপত্য কোষের সৃষ্টি হয় তাহাকে কোষ বিভাজন বলে।

অথবা: যে পদ্ধতিতে মাতৃকোশ হতে অপত্য কোশের সৃষ্টি হয় তাকে কোষ বিভাজন বলে।

মনে রাখার সহজ কৌশল: উপরের যেকোনো একটি সংজ্ঞা ১০ বার পড়ুন। তাহলে দেখবেন এমনিতে মনে থাকছে। ❤️

কোষ বিভাজন একটি মৌলিক ও অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমেই জীবের দৈহিক বৃদ্ধি ও বংশবৃদ্ধি ঘটে। অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ায় জীবকোষের বিভক্তির মাধ্যমে একটি থেকে দুইটি বা চারটি কোষের সৃষ্টি হয় তাকে কোষ বিভাজন বলে।

কোষ বিভাজন কত প্রকার কি কি?

কোষ বিভাজন প্রধানত তিন প্রকার। যেমন:

  1. অ্যামাইটোসিস
  2. মাইটোসিস
  3. মিয়োসিস

অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোষ-বিভাজন কাকে বলে?

যে কোষ বিভাজনে পিণ্ডিল গঠিত না হইয়া নিউক্লিয়াসটি সরাসরি মধ্যাংশ বরাবর খাঁজ সৃষ্টির দ্বারা দুইটি অপত্য খণ্ডাংশে বিভক্ত হয় তাহাকে অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলে।

এই প্রক্রিয়ায় মাইটোসিসের ন্যায় নিউক্লিয়াসের ভাঙ্গন, ক্রোমােজোম সষ্টি এবং নিউক্লিয়াসের পুনর্গঠন প্রভৃতি ঘটনা ঘটে না।

নিউক্লীয়াসের বিভাজন সরাসরি খাঁজ সৃষ্টির মাধ্যমে ঘটে বলিয়া এই বিভাজনকে প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলে।

উদাহরণ—অ্যামিবা, ব্যাকটিরিয়া, কারা (শৈবাল), ঈস্ট (ছত্রাক)।

অ্যামাইটোসিস এর বৈশিষ্ট্যঃ

  • একে প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলা হয়ে থাকে। 
  • এ  বিভাজনে নিউক্লিয়াসটি ডাম্বেল ন্যায় আকার ধারণ করে।
  • এতে একটি কোষ বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি করে। 
  • এ বিভাজন পদ্ধতিটি জটিলতা বিহীন একটি পদ্ধতি।
  • এটি ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট, ছত্রাক প্রভৃতি এককোষী জীবে সম্পন্ন হয়।

মাইটোসিস বা পরোক্ষ বিভাজন কাকে বলে?

যে কোষ বিভাজনের মাধ্যমে কোন কোষের নিউক্লিয়াসটি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি করে এবং প্রতিটি নিউক্লিয়ামের ক্রোমোসোমের সংখ্যা ও গুণাগুণ হুবহু মাতৃনিউক্লিয়াসের সমান থাকে, তাকে মাইটোসিস বলে।

অথবা: যে বিশেষ পদ্ধতিতে নিউক্লিয়াসের নানাবিধ পরিবর্তনের মাধ্যমে মাতৃ নিউক্লিয়াস সম-গুণসম্পন্ন দুইটি অপত্য নিউক্লিয়াসের জন্ম দেয় তাহাকে মাইটোসিস বলে।

মাইটোসিস বিভাজনের অপর নাম সমান বিভাজন।

মাইটোসিসের নিউক্লিয়াসের বিভাজন প্রক্রিয়াকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। যথাঃ

  1. প্রোফেজ
  2. মেটাফেজ
  3. অ্যানাফেজ
  4. টেলোফেজ

প্রোফেজ কী?

প্রোফেজ দশায় ক্রোমোজোমের স্থুলী করন, আকৃতি হ্রাস, কুণ্ডলীকরণ ঘটে। এইসময় ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিডদ্বয় সেন্ট্রোমিয়ার এর সঙ্গে যুক্ত থেকে পাশাপাশি অবস্থান করেন।

মেটাফেজ কী?

মেটাফেজ দশার শুরুতে নিউক্লিয় পর্দা এবং নিউক্লিওলাসের বিলুপ্ত হয় এবং বেম তন্তু গঠিত হয়। ক্রোমোজোম গুলি বেম তন্তুর বিষুব অঞ্চলে অবস্থান করে। এই দশায় ক্রোমোজোম গুলি সর্বাপেক্ষা স্থূল ও স্পষ্ট হয়।

অ্যানাফেজ কী?

অ্যানাফেজ দশায় সেন্ট্রোমিয়ার বিভাজিত হয় এবং ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিডদ্বয় বিচ্ছিন্ন হয়ে অপত্য ক্রোমোজোম গঠন করে এবং বেমের বিপরীত মেরুর দিকে সরে যেতে থাকে। কোষ বিভাজনের এই দশা সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে ক্রোমোজোম গুলি V, L, I, J আকৃতির হয়।

টেলোফেজ কী?

টেলোফেজ দশায় অপত্য ক্রোমোজোমগুলি বেম এর বিপরীত মেরুতে পৌঁছায় এবং তাদের ঘিরে নিউক্লিয় পর্দার আবির্ভাব ঘটে, নিউক্লিওলাস এর পুনার্বি ভাব হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয়।

মিয়োসিস কাকে বলে?

মাইটোসিস পদ্ধতিতে দেহজ কোষের নিউক্লীয় বিভাজন হয় এবং একটি নিউক্লীয়াস হইতে দুইটি সমগণ সম্পন্ন অপত্য নিউক্লীয়াস উৎপন্ন হয়। জননকোষ উৎপন্ন করতে শুক্রাশয়ে বা ডিম্বাশয়ে বা রেণুস্থলীতে মাতৃকোষে যে বিভাজন দেখা যায় এবং যে বিভাজনের দ্বারা চারটি জননকোষ বা রেণু উৎপন্ন হয় তাহাকে মিয়োসিস বলে।

মিয়োসিস কোষ বিভাজনের গুরুত্ব

  1. জননকোষঃ এর মাধ্যমে জনন কোষ উৎপন্ন হয়, তাই যৌ*ন প্রজননক্ষম জীবে মিয়োসিস না ঘটলে বংশবৃদ্ধি অসম্ভব।
  2. প্রজাতির স্বকীয়তা ঠিক রাখাঃ ক্রোমোজোম সংখ্যা সঠিক রাখার মাধ্যমে বংশানুক্রমে প্রতিটি প্রজাতির স্বকীয়তা ঠিক থাকে।
  3. বৈচিত্রের সৃষ্টিঃ যৌ*ন প্রজনন সম্পন্ন কোন দুটি জীবই হুবুহু একই রকম হয়না। মিয়োসিসের ফলে এ বৈচিত্রের সৃষ্টি হয়।
  4. ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুব রাখাঃ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রজাতিতে বংশানুক্রমে ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুব থাকে।

Also Read: সিলভার কাকে বলে?

কোষের আবিষ্কার

বিজ্ঞানী রবার্ট হুক সর্বপ্রথম ১৬৬৫ সালে কোষ নামটি ব্যবহার করে ছিলেন। রবার্ট হোক তার প্রকাশিত একটি গ্রন্থে ১৬৬৫ সালে কোষের কথা উল্লখ করেন যেই গ্রন্থটির নাম হল মাইক্রোগ্রাফিয়া(Micrographia) । কোষটি একটি কর্ক কোষ ছিল।

এটি মূলত একটি মৃত কোষ ছিল। রবার্ট হুক একটি গাছের কাঠের অংশকে পাতলা করে কেটে পরিক্ষা করার সময় দেখতে পেলেন, এই কাঠের অংশটির মধ্যে অসংখ্য ছোট ছোট কুঠুরি বা প্রকোষ্ঠ যা দেখতে মৌমাছির চাকের ন্যায় ছিল। আর এই কারণেই তিনি এটিকে নাম দেন সেল বা প্রকোষ্ঠ। পরবর্তিতে ১৬৭৮ সালে অ্যান্টনি ভ্যান লিউয়েনহুক জীবীত কোষ পর্যবেক্ষণ করেন।

এরো কিছু সময় পর চূরান্ত কোষ তত্ত্ব আবিষ্কার হওয়ার পূর্বে চেক বিজ্ঞানী Jan Evangelista Purkyne অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে উদ্ভীত কোষ পর্যবেক্ষণ করেন ১৮৩৭ সালে। এসময় তিনি খুবই ছোট ছোট কিছু দানা লক্ষ করেন। বিজ্ঞানী Matthias Jakob Schleiden এবং Theodor Schwann ১৮৩৯ সালে কোষ তত্ত্ব আবিষ্কার করেন এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রধান করেন।

কোষ বিভাজনের গুরুত্ব

  1. কোশ বিভাজনের মাধ্যমে এককোশযুক্ত জাইগোট হতে বহুকোশী পূর্ণাঙ্গ জীবের আবির্ভাব ঘটে ।
  2. এককোশী জীব কোশ বিভাজনের মাধ্যমে অপত্য জীব সৃষ্টি করে , ফলে বংশবিস্তার অব্যাহত থাকে ।
  3. কোশ বিভাজনের মাধ্যমে গ্যামেট ( জনন কোশ ) উৎপাদিত হয় । যৌন জননকারী জীবে স্ত্রী ও পুং গ্যামেটের মিলনে নতুন জীব সৃষ্টি হয় ।
  4. পরিণত জীবদেহের ক্ষয়ক্ষতি পূরণে কোশ বিভাজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

SOME FAQ:

কোষের আবিষ্কারক কে?

রবার্ট হুক কোষের অস্তিত্ব সর্বপ্রথম পর্যবেক্ষণ করেন, তাই রবার্ট হুককে কোষের আবিষ্কারক বলা হয়।

তো আজকে আমরা দেখলাম যে কোষ বিভাজন কাকে বলে এবং আরো অনেক বিস্তারিত বিষয় । যদি পোস্ট ভালো লাগে তাহলে অব্যশয়, আমাদের বাকি পোস্ট গুলো ভিসিট করতে ভুলবেন না!

Leave a Comment