রাষ্ট্র কাকে বলে? | রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি?

রাষ্ট্র কাকে বলে: আজকে আমরা জানবো রাষ্ট্র কাকে বলে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আশা করি আপনারা এই প্রশ্নের উত্তর ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন।

রাষ্ট্র কাকে বলে,রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি

রাষ্ট্র কাকে বলে,রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি
রাষ্ট্র কাকে বলে

রাষ্ট্র কাকে বলে?

রাষ্ট্র বলতে রাজনৈতিক ভাবে সংগঠিত এবং একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসকারী জনসমষ্টিকে বোঝায়।

রাষ্ট্রের সঠিক সংজ্ঞা সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি:

[1] রাষ্ট্রের সাবেকি সংজ্ঞা:

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটলের মতে, রাষ্ট্র হল স্বাবলম্বী ও পূর্ণাঙ্গ জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে সংগঠিত কয়েকটি পরিবার ও গ্রামের সমষ্টি। প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রের পটভূমিকায় অ্যারিস্টটলের দেওয়া এই সংজ্ঞা বর্তমান যুগের আধুনিক রাষ্ট্রের পক্ষে প্রযােজ্য নয়। এই যুগে ‘স্বাবলম্বী’ ও ‘পূর্ণাঙ্গ’ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।

[2] রাষ্ট্রের আদর্শবাদী সংজ্ঞা:

কান্ট ও হেগেল উভয়ই রাষ্ট্রকে এক সর্বাত্মক ও ঐশ্বরিক কর্তৃত্বসম্পন্ন অতিমানবীয় নৈতিক প্রতিষ্ঠানরূপে অভিহিত করেছেন। হেগেলের রচনায় রাষ্ট্রকে পৃথিবীতে ঈশ্বরের পদচারণা বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

[3] রাষ্ট্রের আইনগত সংজ্ঞা:

প্রখ্যাত আইনবিদ হলের মতে, রাষ্ট্র হল এমন এক জনসমাজ যা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধনের জন্য স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে সর্বতােভাবে মুক্ত। ওপেনহাইমের অভিমত হল, যখন কোনাে নির্দিষ্ট একটি ভূখণ্ডে কোনাে সংগঠিত জনসমষ্টি সার্বভৌম সরকার প্রতিষ্ঠা করে, তখন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। আবার, প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উইলসনের মতে, কোনাে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে আইন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠিত জনসমষ্টি হল রাষ্ট্র।

[4] রাষ্ট্রের আধুনিক সংজ্ঞা:

আধুনিক আচরণবাদী চিন্তাবিদরা রাষ্ট্রের প্রচলিত সংজ্ঞাগুলি মেনে নিতে চাননি। এমনকি তাঁরা ‘রাষ্ট্র’ শব্দটির পরিবর্তে রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিভাষাটি প্রয়ােগের পক্ষপাতী। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বার্জেস ও ব্লুন্টসলির মতে, একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে রাজনৈতিক দিক থেকে সংগঠিত জনসমষ্টি হল রাষ্ট্র।

[5] রাষ্ট্রের মার্কসবাদী সংজ্ঞা:

মার্কসবাদীরা রাষ্ট্রের সংজ্ঞা নির্দেশ করতে গিয়ে বলেছেন যে, রাষ্ট্র হল শ্রেণিশােষণের এক হাতিয়ার ; এক শ্রেণি কর্তৃক অন্য শ্রেণির ওপর প্রভুত্ব বজায় রাখার প্রতিষ্ঠান| শ্রেণিবিভক্ত সমাজে শ্রেণিস্বার্থ সংরক্ষণের একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হল রাষ্ট্র।

[6] রাষ্ট্রের গার্নারের সংজ্ঞা:

গার্নারের মতে, রাষ্ট্র হল সাধারণভাবে বৃহৎ এক জনসমাজ যা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, যা বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ বা প্রায় মুক্ত এবং যার একটি সুসংগঠিত সরকার রয়েছে ও সেই সরকারের প্রতি অধিকাংশ জনগণ স্বাভাবিক আনুগত্য প্রদর্শন করে।

রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি?

রাষ্ট্র চারটি প্রধান উপাদান নিয়ে গঠিত। যথা:

  1. জনসংখ্যা
  2. ভূখন্ড বা অঞ্চল
  3. সরকার
  4. সার্বভৌমত্ব

1.জনসংখ্যা (Population)

রাষ্ট্র হল মানুষের একটি মানবিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের অন্যতম অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে জনসংখ্যা। জনসংখ্যা ছাড়া রাষ্ট্র হতে পারে না। একটি রাষ্ট্রের জনসংখ্যা কম-বেশি হতে পারে। যেমন সুইজারল্যান্ড, কানাডা, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর এর মতো খুব ছোট জনসংখ্যার রাষ্ট্র। অন্যদিকে রয়েছে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়ার যেখানে খুব বেশি জনসংখ্যা রয়েছে।

রাষ্ট্রে বসবাসকারী লোকদের নাগরিক বলে। নাগরিকরা রাষ্ট্রের অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করার পাশাপাশি বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে। অন্য দেশের নাগরিকরা বসবাস করলে তখন তাদের বলা হয় বিদেশি। রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে বসবাসকারী সকল ব্যক্তি, নাগরিক এবং সেইসাথে বিদেশিদের রাষ্ট্রীয় আইন ও নীতি মেনে চলতে হয়। রাষ্ট্র তার সরকারের মাধ্যমে তাদের উপর সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব প্রয়োগ করে।

Also Read: দূরত্ব কাকে বলে

2.অঞ্চল (Territory)

ভূখণ্ড একটি রাষ্ট্রের দ্বিতীয় অপরিহার্য উপাদান। রাষ্ট্র একটি আঞ্চলিক ইউনিট। নির্দিষ্ট ভূখণ্ড হল এর অপরিহার্য উপাদান। একটি রাষ্ট্র কখনো আকাশে বা সমুদ্রে থাকতে পারে না। এর পিজিকাল অংশ (অঞ্চল) নিয়ে গঠিত হয়। এটি মূলত একটি আঞ্চলিক রাষ্ট্র। একটি রাষ্ট্রের ভূখণ্ডের আকার বড় বা ছোট হতে পারে।

রাশিয়া, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, ব্রাজিল ইত্যাদি বড় আকারের রাষ্ট্র। অন্যদিকে নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, সুইজারল্যান্ড, বুরুন্ডি ইত্যাদি ছোট অঞ্চল রাষ্ট্র। সমগ্র ভূখণ্ড রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব বা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধীনে বেষ্টিত। রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডের অন্তর্ভুক্ত সমস্ত ব্যক্তি, সংস্থা, সমিতি, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি অঞ্চলের সার্বভৌম এখতিয়ারের অধীনে।

রাষ্ট্রের অঞ্চলের মধ্যে সমুদ্র বা কিছু দ্বীপও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আন্দামান ও নিকোবর ভারতের অংশ। সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের অংশ। রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের সমস্ত অংশের উপর সার্বভৌমত্ব প্রয়োগ করে।

3.সরকার (Government)

সরকার হল রাষ্ট্রের অন্যতম সংস্থা বা ম্যাজিস্ট্রেসি যা রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন, প্রয়োগ, এবং বিচার করে। সরকার রাষ্ট্রের তৃতীয় অপরিহার্য উপাদান। রাষ্ট্র সরকারের মাধ্যমে তার সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করে।

অনেকেই মনে করে যে রাষ্ট্র এবং সরকারের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। যাইহোক, এটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা উচিত যে সরকার রাষ্ট্রের একটি উপাদান মাত্র। এটি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে ভূমিকা পালন করে।

4.সার্বভৌমত্ব (Soveirgnity)

সার্বভৌমত্ব একটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ একমাত্র রাষ্ট্রই সার্বভৌমত্বের অধিকারী। সার্বভৌমত্ব ছাড়া কোনো রাষ্ট্র কল্পনা কার যায় না। প্রকৃতপক্ষে, সার্বভৌমত্ব হল সেই ভিত্তি যার ভিত্তিতে রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডে বসবাসকারী মানুষের জীবনের সমস্ত দিক নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা প্রদান করে।

Also Read: গতি কাকে বলে

তো আজকে আমরা দেখলাম যে রাষ্ট্র কাকে বলে এবং আরো অনেক বিস্তারিত বিষয় । যদি পোস্ট ভালো লাগে তাহলে অব্যশয়, আমাদের বাকি পোস্ট গুলো ভিসিট করতে ভুলবেন না!

Leave a Comment