হওয়ার গান বুদ্ধদেব বসু সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর [নতুন]

হওয়ার গান বুদ্ধদেব বসু সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর: আমরা আজকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। এরকম পোস্ট আমদের মতো কেউ করতে পারবে না। আমরা হলাম official-result.com. তাই আমাদের ওয়েবসাইটকে কখনো ভুলে জাবেন না। 😉😉

বিষয়সংক্ষেপ

হাওয়ারা চিরদিনই যেমন অপ্রতিরােধ্য, তেমনই গৃহহীন। হাওয়ারা অবাধ গতিতে সর্বত্রই যেমন ঘুরে বেড়ায়, তেমন ভাবেই ঘুরে বেড়ানাের মধ্য দিয়ে তাদের মনের হাহাকার, বেদনাই বার বার মূর্ত হয়ে ওঠে। হাওয়াদের কোনাে বাড়ি নেই, তাই তারা শুধু বাইরে কেঁদে মরে। তারা পৃথিবীর সমস্ত জল-স্থল, পাহাড়, বনজঙ্গলে তাদের বাড়ি খুঁজে বেড়িয়েছে। কিন্তু কোথাও তাদের বাড়ির খোঁজ তারা পায়নি। কখনও পার্কের বেঞ্চিতে ঝরা পাতাকে, বা জানলায় কেঁপে ওঠা দেয়ালের পাঁজরাকে, কখনও আবার চিমনির ধ্বনিকে বা কাননের কান্নাকে তারা জিজ্ঞাসা করেছে তাদের বাড়ির কথা। কিন্তু কোনাে উত্তর তারা পায়নি। তাদের কোনাে বাড়ি নেই, দেশ নেই। তাই তাদের এই প্রবাহ বা চলারও শেষ নেই। ঘরের মধ্যে শান্ত ছেলেকে দোলনাতে ঘুমাতে তারা দেখেছে, কার্পেটের ওপর কুকুরকে শুয়ে থাকতে তারা দেখেছে, কিন্তু তারা কখনও এক জায়গায় স্থির হয়ে বসতে পারেনি। তারা চিরকাল উত্তাল-উদ্দাম। তাদের চলার যেন কোনাে শেষ নেই। 

নামকরণ 

কবি বুদ্ধদেব বসু কবিতাটির নামকরণ করেছেন ‘ হাওয়ার গান’। কবিতাটির কাহিনি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কবিতার সমস্ত অংশ জুড়ে আছে হাওয়ার কথা। তাদের কোনাে বাড়ি নেই, তাই তারা বাইরে কেঁদে মরে। তারা বাড়ির সন্ধান করেছে সর্বত্র, কিন্তু কোথাও তার খোঁজ মেলেনি। তাদের চোখে অন্যান্যদের গৃহস্থালির ছবি ধরা পড়েছে, কিন্তু তাদের থাকার কোনাে নির্দিষ্ট বাড়ি নেই। তাই তাদের কোনাে বিশ্রামও নেই। তারা চিরকাল উদ্দাম ও উত্তাল। হাওয়াদের এই দুরবস্থার কথা হাওয়াই নিজের মুখে শুনিয়ে গিয়েছে। কবিতাটির প্রধান চরিত্র এখানে হাওয়া। তারা তাদেরই কথা বলে গিয়েছে। এই হাওয়ার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি মানুষের আর্তনাদ পরিস্ফুট হয়েছে। সুতরাং, কবিতাটির নাম ‘হাওয়ার গান’ রাখা যথার্থ ও সার্থক যেহেতু কবির অন্তঃকরণ বাস্তবতাকে প্রাধান্য দেয় বেশি, তাই আলােচ্য কবিতায় হাওয়াদের অবিরাম ছুটে চলার আর্তনাদের মধ্যে যে প্রকৃপকক্ষে, মানুষের জীবনপথে ছুটে চলা ও ব্যর্থতার কথাই প্রকাশিত হয়েছে, তা সহজেই অনুমেয় হয়েছে।   

হাতে কলমে

১.১ বুদ্ধদেব বসু রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখাে।

উঃ  বুদ্ধদেব বসু রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম ‘বন্দীর বন্দনা’ ও ‘কঙ্কাবতী। 

১.২ তিনি কোন পত্রিকা সম্পাদনা করতেন ?

উঃ বুদ্ধদেব বসু কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।

২ নীচের প্রশ্নগুলির একটি/দুটি বাক্যে উত্তর দাও : 

২.১ দুর্বার ইচ্ছায় হাওয়া কী কী ছুঁয়ে গেছে ? 

উঃ দুর্বার ইচ্ছায় হাওয়া পৃথিবীর সমস্ত জল ও তীরকে ছুঁয়ে গিয়েছে। 

২.২ তার কথা হাওয়া কোথায় শুধায় ?

উঃ তার কথা হাওয়া জলে, স্থলে, পাহাড়ে, নগরে-বন্দরে, অরণ্যে, প্রান্তরে, পার্কের বেঞ্চে, ঝরাপাতায়, দেয়ালে, শার্সিতে, চিমনির নিস্বনে এবং কাননের ক্রন্দনে শুধায়। 

২.৩ মাস্তুলে দীপ জ্বলে কেন ? 

উঃ জাহাজ যেহেতু অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে চলাচল করে, তাই অন্যদের কাছে তার উপস্থিতির কথা জানাতে মাস্তুলে দীপ জ্বালিয়ে রাখা হয়। 

২.৪ পার্কের বেঞ্চিতে আর শার্সিতে কাদের উপস্থিতির চিহ্ন রয়েছে ?

উঃ পার্কের বেঞ্চিতে ঝরা পাতার এবং শার্সিতে দেয়ালের পঞ্জরের উপস্থিতির চিহ্ন রয়েছে। আসলে এর মধ্যে বাতাসের উপস্থিতি আছে। 

২.৫ নিশ্বাস কেমন করে বয়ে গেছে ? 

উঃ নিশ্বাস বুক-চাপা কান্নায় উত্তাল ও অস্থিরভাবে বয়ে গিয়েছে।

৩ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর সংক্ষেপে লেখাে : 

৩.১ হাওয়ার চোখে ঘরের যে ছবি পাওয়া যায়, কবিতা অনুসরণে লেখাে।

উঃ বুদ্ধদেব বসুর ‘হাওয়ার গান কবিতায় হাওয়ার চোখে ঘরের একটি সুন্দর মনােরম ছবি পাওয়া যায়। সেখানে দোলনায় একটি সুন্দর শিশু ঘুমিয়ে আছে। তার কোনাে ভাবনা নেই। নিস্তব্ধ ঘরে স্বপ্নের মতাে মায়াবি আলাে জ্বলছে। আবছা আলােয় দেখা যাচ্ছে। কার্পেটের ওপর একটি কুকুর তন্দ্রাচ্ছন্ন। এ যেন স্বপ্নের এক সুখী গৃহকোণ। কিন্তু হাওয়ার শান্তি নেই। নিজে দু-দন্ড বিশ্রাম নিতে পারে এমন কোনাে ঘর নিজের জন্য সে খুঁজে পায়নি। 

৩.২ সমুদ্রের জাহাজের চলার বর্ণনা দাও।

উঃ সমুদ্রের জাহাজ চলে নির্দিষ্ট নিয়মনীতি মেনে। নিজেদের ইচ্ছামতাে জাহাজের সারেঙ সাহেবরা জাহাজ চালাতে পারে না। তাদের প্রত্যেকের জন্য চলাচলের নির্দিষ্ট পথ আছে। সেগুলিকে অবলম্বন করেই তাদের এগােতে হয়। জাহাজে দিকনির্ণায়ক যন্ত্রও থাকে, যার দ্বারা তারা বুঝতে পারেন কোন্ দিকে এগিয়ে চলেছেন। রাত্রিতে জাহাজের মাস্তুলে আলাে জ্বালিয়ে রাখা হয়। অন্যরা যাতে বুঝতে পারে যে, জাহাজ চলাচল করছে। এভাবেই সমুদ্রে জাহাজ চলে। 

৩.৩ পৃথিবীর কোন্ কোন্ অংশে হাওয়া ঘুরে বেড়ায় লেখাে।

উঃ পৃথিবীর সমস্ত জলাশয়, সমুদ্র তীর, পাহাড়, গম্ভীর বন্দর, শহরের জনবহুল অঞলবনজঙ্গল, খােলা মাঠ বা তেপান্তর সর্বত্রই হাওয়ারা ঘুড়ে বেড়ায়। কারণ, তাদের থাকবার নির্দিষ্ট কোনাে ঘর নেই। তারা সর্বত্র বিরাজমান। তারা পার্কের বেঞ্চিতে কখনাে বা চিমনির শব্দে অথবা বাগানের ক্রন্দনে সব জায়গাতে ঘুরে বেড়ায়। তাদের ঘুরে বেড়ানাের মধ্যে কোনাে বাছবিচার নেই। তারা চিরকাল উত্তাল ও অস্থির।

৪ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর বিশদে লেখাে : 

৪.১ হাওয়াদের কী নেই ? হাওয়ারা কোথায়, কীভাবে তার খোঁজ করে ? 

উঃ বুদ্ধদেব বসুর লেখা ‘হাওয়ার গান কবিতায় হাওয়াদের বাড়ি নেই অর্থাৎ, আশ্রয় নেই। » হাওয়াদের বাড়ি না-থাকায় তারা পৃথিবীর সর্বত্র জলে-স্থলে, পাহাড়ে, বনজঙ্গলে বাড়ির খোঁজ করে বেড়ায়। কখনও শহরের ঘন ভিড়ে, কখনও বা জনহীন প্রান্তরে সর্বত্রই তারা বাড়ির খোঁজ করে। পার্কের বেঞ্চিতে পড়ে থাকা ঝরা পাতা, জানলায় কেঁপে ওঠা দেয়ালের পাঁজরা, চিমনির শব্দে বা কাননের কান্নায় সর্বত্রই হাওয়ারা তাদের বাড়ি কোথায় তা জিজ্ঞাস করেছে, কিন্তু কোনাে উত্তর তারা পায়নি। কোথায় গেলে তারা তাদের বাড়ির সন্ধান পাবে তাও তারা জানে না। তাই তারা চিরকাল বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ায় আর বাড়ির খোঁজ করে। 

৪.২. “চিরকাল উত্তাল তাই রে”-কে চিরকাল উত্তাল ? কেন সে চিরকাল উত্তাল হয়ে রইল ? 

উঃ বুদ্ধদেব বসুর ‘হাওয়ার গান কবিতায় প্রশ্নোক্ত উক্তি অনুসারে হাওয়ারা চিরকাল উত্তাল। 

➡️ হাওয়াদের কোনাে বাড়ি নেই। ফলে তাদের কোনােখানে স্থিতি নেই। তারা সর্বত্র ঘুরে বেড়ায়। তারা পৃথিবীর জল-স্থল, পাহাড়, বনজঙ্গল, নগরের কোলাহলময় পরিবেশ, শূন্য মাঠ সব জায়গাতে তাদের বাড়ির খোঁজ করেছে। কিন্তু, কোথাও তারা তাদের বাড়ির সন্ধান পায়নি। তাদের বিশ্রাম নেওয়ার মতাে কোনাে জায়গা নেই। তারা চিমনির নিস্বনে এবং কাননের ক্রন্দনে তাদের বাড়ির খোঁজ করেছে, কিন্তু সন্ধান তারা পায়নি। তাই তারা অবিরাম উন্মাদের মতাে উত্তাল হয়ে ছুটে বেড়ায়। তাদের জীবনে কোনাে স্থিতি, বিশ্রাম না-থাকায় তারা চিরকাল উত্তাল। 

৪.৩ কবিতাটির নাম ‘হাওয়ার গান’ দেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী যুক্তি কবির মনে এসেছিল বলে তােমার মনে হয় ? 

উঃ  কবি বুদ্ধদেব বসু কবিতাটির নাম রেখেছেন ‘হাওয়ার গান’। এই নামকরণ করার পিছনে যে-সমস্ত যুক্তিকে তিনি মনে স্থান দিয়েছিলেন সেগুলি হল— 

প্রথমত : কবিতাটিতে হাওয়ারা তাদের নিজেদের কথা নিজের মুখেই বলেছে। 

দ্বিতীয়ত : সমস্ত কবিতাটিতে হাওয়াদের কথাই বলা আছে। তাদের বাড়ি নেই। তারা তাদের বাড়ির খোঁজ করতে বিভিন্ন জায়গাতে বৃথাই ঘুরে বেড়িয়েছে। কোথায় কোথায় গেছে বা কী দৃশ্য তাদের চোখে পড়েছে সমস্তটাই তারা নিজেরাই বলে গিয়েছে। 

তৃতীয়ত : হাওয়াদের যে বাড়ি নেই, সেই কথাটিকে তারা কবিতার মধ্যে দু-বার বলেছে, ঠিক যেন গানের মতাে করে। গানে যেমন কলির পুনরাবৃত্তি করা হয়, তেমনিভাবে এখানেও ‘বাড়ি নেই’ শব্দদ্বয়ের পুনরাবৃত্তি। করা হয়েছে। তাই কবি কবিতাটির নাম ‘হাওয়ার গান রেখেছেন বলে আমার মনে হয়। 

৫নীচের পঙক্তিগুলির মধ্যে ক্রিয়াকে চিহ্নিত করাে এবং অন্যান্য শব্দগুলির সঙ্গে তার সম্পর্ক দেখাও : 

৫.১ ঘরে ঘরে জ্বলে যায় স্বপ্নের মৃদু মােম। 

➡️ জ্বলে যায় = ক্রিয়াপদ। ‘ঘরে ঘরে’ শব্দদ্বয়ের সঙ্গে তার ‘অধিকরণ কারকগত’ সম্পর্ক এবং মৃদু মােম’ শব্দদ্বয়ের সঙ্গে তার ‘কর্মকারকগত সম্পর্ক। 

৫.২ আঁধারে জাহাজ চলে।

➡️ চলে = ক্রিয়াপদ। ‘আঁধারে’ শব্দটির সঙ্গে ‘অধিকরণ কারকগত সম্পর্ক এবং ‘জাহাজ’ শব্দটির সঙ্গে ‘কর্তৃকারকগত সম্পর্ক।

৫.৩ শার্সিতে কেঁপে-ওঠা দেয়ালের পঞ্জর। 

➡️ কেঁপে ওঠা = ক্রিয়াপদ। ‘শার্সিতে’ শব্দটির সঙ্গে ‘অধিকরণ কারকগত’ সম্পর্ক। ‘পঞ্জর' শব্দটির সঙ্গে কর্তৃকারকগত সম্পর্ক। 

৫.৪ অকূল অন্ধকারে ফেটে পড়ে গর্জন।  

➡️ ফেটে পড়ে = ক্রিয়াপদ। ‘অকূল অন্ধকারে’ শব্দদ্বয়ের সঙ্গে ক্রিয়ার ‘অধিকরণ কারকগত সম্পর্ক। ‘গর্জন’ শব্দটির সঙ্গে ক্রিয়ার ‘কর্তৃকারকগত সম্পর্ক। 

৬ 'বন্দর, বন্দর নগরের ঘন ভিড়'—পঙক্তিটির প্রথমে একই শব্দ দুবার ব্যবহার করা হয়েছে। এই রকম আরও চারটি পঙক্তি উদ্ধৃত করাে। কবিতার ক্ষেত্রে এই ধরনের শব্দ ব্যবহারের কৌশল অবলম্বনের কারণ কী ? 

উঃ  কবিতার মধ্যে একই শব্দ দুবার ব্যবহৃত হয়েছে এমন চারটি পঙক্তি হল-----

 ১. ছুঁয়ে গেছি বার-বার দুর্বার ইচ্ছায়। 

২. ঘরে ঘরে জ্বলে যায় স্বপ্নের মৃদু মােম।

৩. কেঁদে কেঁদে মরি শুধু ভাইরে। 

৪. খুঁজে খুঁজে ঘুরে ফিরি বাইরে।

কবিতার ক্ষেত্রে এই ধরনের শব্দ ব্যবহারের কৌশল অবলম্বনের কারণ হল—একই শব্দ পর পর দু-বার ব্যবহার করে অর্থগত বৈচিত্র্য সম্পাদন করা যায়। এ ছাড়া কবিতার পঙক্তিকে শ্রুতিমধুর করা যায়। অনেক সময় একই শব্দ দুবার বসিয়ে অলংকার সৃষ্টির মাধ্যমে কবিতায় গতি-সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং শুতিমধুর ধ্বনির ঝংকার সৃষ্টি করা হয়। 

৭ ধ্বনি পরিবর্তনের দিক থেকে শূন্য অংশগুলি পূর্ণ করাে :

➡️ চন্দ্র   > চন্ন > চাঁদ 

➡️ রাত্রি > রাত্তির

➡️ পঞ্জর > পাঁজর


৮ “হাওয়ার গান কবিতায় ব্যবহৃত পাঁচটি ইংরেজি শব্দ লেখাে। এই শব্দগুলির বদলে দেশি/বাংলা শব্দ ব্যবহার করে পঙক্তিগুলি আবার লেখাে। 

উঃ ‘হাওয়ার গান কবিতায় ব্যবহৃত পাঁচটি ইংরেজি শব্দ হল পার্ক; চিমনি; কার্পেট; সিনেমা; ডেক। 

➡️ পার্ক = (উদ্যান)—উদ্যানের বেঞ্চিতে ঝরা পাতা ঝঝর। 

➡️ চিমনি = (ধু নালি)—ধূম্র নালির নিস্বনে, কাননের ক্রন্দনে। 

➡️ কার্পেট = (গালিচা)-আবছায়া গালিচা কুকুরের তন্দ্রায়।

➡️ সিনেমা = (চলচ্চিত্র)—যাত্রীরা চলচ্চিত্রে কেউ নাচে, গান গায়। 

➡️ ডেক = (জাহাজের পাটাতন)—অবশেষে থামে সব, জাহাজের পাটাতন হয় নির্জন।

হওয়ার গান বুদ্ধদেব বসু সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর

বিষয়সংক্ষেপ

হাওয়ারা চিরদিনই যেমন অপ্রতিরােধ্য, তেমনই গৃহহীন। হাওয়ারা অবাধ গতিতে সর্বত্রই যেমন ঘুরে বেড়ায়, তেমন ভাবেই ঘুরে বেড়ানাের মধ্য দিয়ে তাদের মনের হাহাকার, বেদনাই বার বার মূর্ত হয়ে ওঠে। হাওয়াদের কোনাে বাড়ি নেই, তাই তারা শুধু বাইরে কেঁদে মরে। তারা পৃথিবীর সমস্ত জল-স্থল, পাহাড়, বনজঙ্গলে তাদের বাড়ি খুঁজে বেড়িয়েছে। কিন্তু কোথাও তাদের বাড়ির খোঁজ তারা পায়নি। কখনও পার্কের বেঞ্চিতে ঝরা পাতাকে, বা জানলায় কেঁপে ওঠা দেয়ালের পাঁজরাকে, কখনও আবার চিমনির ধ্বনিকে বা কাননের কান্নাকে তারা জিজ্ঞাসা করেছে তাদের বাড়ির কথা। কিন্তু কোনাে উত্তর তারা পায়নি। তাদের কোনাে বাড়ি নেই, দেশ নেই। তাই তাদের এই প্রবাহ বা চলারও শেষ নেই। ঘরের মধ্যে শান্ত ছেলেকে দোলনাতে ঘুমাতে তারা দেখেছে, কার্পেটের ওপর কুকুরকে শুয়ে থাকতে তারা দেখেছে, কিন্তু তারা কখনও এক জায়গায় স্থির হয়ে বসতে পারেনি। তারা চিরকাল উত্তাল-উদ্দাম। তাদের চলার যেন কোনাে শেষ নেই।

নামকরণ 

কবি বুদ্ধদেব বসু কবিতাটির নামকরণ করেছেন ‘ হাওয়ার গান’। কবিতাটির কাহিনি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কবিতার সমস্ত অংশ জুড়ে আছে হাওয়ার কথা। তাদের কোনাে বাড়ি নেই, তাই তারা বাইরে কেঁদে মরে। তারা বাড়ির সন্ধান করেছে সর্বত্র, কিন্তু কোথাও তার খোঁজ মেলেনি। তাদের চোখে অন্যান্যদের গৃহস্থালির ছবি ধরা পড়েছে, কিন্তু তাদের থাকার কোনাে নির্দিষ্ট বাড়ি নেই। তাই তাদের কোনাে বিশ্রামও নেই। তারা চিরকাল উদ্দাম ও উত্তাল। হাওয়াদের এই দুরবস্থার কথা হাওয়াই নিজের মুখে শুনিয়ে গিয়েছে। কবিতাটির প্রধান চরিত্র এখানে হাওয়া। তারা তাদেরই কথা বলে গিয়েছে। এই হাওয়ার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি মানুষের আর্তনাদ পরিস্ফুট হয়েছে। সুতরাং, কবিতাটির নাম ‘হাওয়ার গান’ রাখা যথার্থ ও সার্থক যেহেতু কবির অন্তঃকরণ বাস্তবতাকে প্রাধান্য দেয় বেশি, তাই আলােচ্য কবিতায় হাওয়াদের অবিরাম ছুটে চলার আর্তনাদের মধ্যে যে প্রকৃপকক্ষে, মানুষের জীবনপথে ছুটে চলা ও ব্যর্থতার কথাই প্রকাশিত হয়েছে, তা সহজেই অনুমেয় হয়েছে।  

হাতে কলমে

১.১ বুদ্ধদেব বসু রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখাে।

উঃ  বুদ্ধদেব বসু রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম ‘বন্দীর বন্দনা’ ও ‘কঙ্কাবতী। 

১.২ তিনি কোন পত্রিকা সম্পাদনা করতেন ?

উঃ বুদ্ধদেব বসু কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।

২ নীচের প্রশ্নগুলির একটি/দুটি বাক্যে উত্তর দাও : 

২.১ দুর্বার ইচ্ছায় হাওয়া কী কী ছুঁয়ে গেছে ? 

উঃ দুর্বার ইচ্ছায় হাওয়া পৃথিবীর সমস্ত জল ও তীরকে ছুঁয়ে গিয়েছে। 

২.২ তার কথা হাওয়া কোথায় শুধায় ?

উঃ
 তার কথা হাওয়া জলে, স্থলে, পাহাড়ে, নগরে-বন্দরে, অরণ্যে, প্রান্তরে, পার্কের বেঞ্চে, ঝরাপাতায়, দেয়ালে, শার্সিতে, চিমনির নিস্বনে এবং কাননের ক্রন্দনে শুধায়। 

২.৩ মাস্তুলে দীপ জ্বলে কেন ? 

উঃ জাহাজ যেহেতু অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে চলাচল করে, তাই অন্যদের কাছে তার উপস্থিতির কথা জানাতে মাস্তুলে দীপ জ্বালিয়ে রাখা হয়। 

২.৪ পার্কের বেঞ্চিতে আর শার্সিতে কাদের উপস্থিতির চিহ্ন রয়েছে ?

উঃ
 পার্কের বেঞ্চিতে ঝরা পাতার এবং শার্সিতে দেয়ালের পঞ্জরের উপস্থিতির চিহ্ন রয়েছে। আসলে এর মধ্যে বাতাসের উপস্থিতি আছে। 

২.৫ নিশ্বাস কেমন করে বয়ে গেছে ? 

উঃ নিশ্বাস বুক-চাপা কান্নায় উত্তাল ও অস্থিরভাবে বয়ে গিয়েছে।

৩ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর সংক্ষেপে লেখাে : 

৩.১ হাওয়ার চোখে ঘরের যে ছবি পাওয়া যায়, কবিতা অনুসরণে লেখাে।

উঃ বুদ্ধদেব বসুর ‘হাওয়ার গান কবিতায় হাওয়ার চোখে ঘরের একটি সুন্দর মনােরম ছবি পাওয়া যায়। সেখানে দোলনায় একটি সুন্দর শিশু ঘুমিয়ে আছে। তার কোনাে ভাবনা নেই। নিস্তব্ধ ঘরে স্বপ্নের মতাে মায়াবি আলাে জ্বলছে। আবছা আলােয় দেখা যাচ্ছে। কার্পেটের ওপর একটি কুকুর তন্দ্রাচ্ছন্ন। এ যেন স্বপ্নের এক সুখী গৃহকোণ। কিন্তু হাওয়ার শান্তি নেই। নিজে দু-দন্ড বিশ্রাম নিতে পারে এমন কোনাে ঘর নিজের জন্য সে খুঁজে পায়নি। 

৩.২ সমুদ্রের জাহাজের চলার বর্ণনা দাও।

উঃ
 সমুদ্রের জাহাজ চলে নির্দিষ্ট নিয়মনীতি মেনে। নিজেদের ইচ্ছামতাে জাহাজের সারেঙ সাহেবরা জাহাজ চালাতে পারে না। তাদের প্রত্যেকের জন্য চলাচলের নির্দিষ্ট পথ আছে। সেগুলিকে অবলম্বন করেই তাদের এগােতে হয়। জাহাজে দিকনির্ণায়ক যন্ত্রও থাকে, যার দ্বারা তারা বুঝতে পারেন কোন্ দিকে এগিয়ে চলেছেন। রাত্রিতে জাহাজের মাস্তুলে আলাে জ্বালিয়ে রাখা হয়। অন্যরা যাতে বুঝতে পারে যে, জাহাজ চলাচল করছে। এভাবেই সমুদ্রে জাহাজ চলে। 

৩.৩ পৃথিবীর কোন্ কোন্ অংশে হাওয়া ঘুরে বেড়ায় লেখাে।

উঃ
 পৃথিবীর সমস্ত জলাশয়, সমুদ্র তীর, পাহাড়, গম্ভীর বন্দর, শহরের জনবহুল অঞলবনজঙ্গল, খােলা মাঠ বা তেপান্তর সর্বত্রই হাওয়ারা ঘুড়ে বেড়ায়। কারণ, তাদের থাকবার নির্দিষ্ট কোনাে ঘর নেই। তারা সর্বত্র বিরাজমান। তারা পার্কের বেঞ্চিতে কখনাে বা চিমনির শব্দে অথবা বাগানের ক্রন্দনে সব জায়গাতে ঘুরে বেড়ায়। তাদের ঘুরে বেড়ানাের মধ্যে কোনাে বাছবিচার নেই। তারা চিরকাল উত্তাল ও অস্থির।

৪ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর বিশদে লেখাে : 

৪.১ হাওয়াদের কী নেই ? হাওয়ারা কোথায়, কীভাবে তার খোঁজ করে ? 

উঃ বুদ্ধদেব বসুর লেখা ‘হাওয়ার গান কবিতায় হাওয়াদের বাড়ি নেই অর্থাৎ, আশ্রয় নেই। » হাওয়াদের বাড়ি না-থাকায় তারা পৃথিবীর সর্বত্র জলে-স্থলে, পাহাড়ে, বনজঙ্গলে বাড়ির খোঁজ করে বেড়ায়। কখনও শহরের ঘন ভিড়ে, কখনও বা জনহীন প্রান্তরে সর্বত্রই তারা বাড়ির খোঁজ করে। পার্কের বেঞ্চিতে পড়ে থাকা ঝরা পাতা, জানলায় কেঁপে ওঠা দেয়ালের পাঁজরা, চিমনির শব্দে বা কাননের কান্নায় সর্বত্রই হাওয়ারা তাদের বাড়ি কোথায় তা জিজ্ঞাস করেছে, কিন্তু কোনাে উত্তর তারা পায়নি। কোথায় গেলে তারা তাদের বাড়ির সন্ধান পাবে তাও তারা জানে না। তাই তারা চিরকাল বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ায় আর বাড়ির খোঁজ করে। 

৪.২. “চিরকাল উত্তাল তাই রে”-কে চিরকাল উত্তাল ? কেন সে চিরকাল উত্তাল হয়ে রইল ? 

উঃ বুদ্ধদেব বসুর ‘হাওয়ার গান কবিতায় প্রশ্নোক্ত উক্তি অনুসারে হাওয়ারা চিরকাল উত্তাল। 

➡️ হাওয়াদের কোনাে বাড়ি নেই। ফলে তাদের কোনােখানে স্থিতি নেই। তারা সর্বত্র ঘুরে বেড়ায়। তারা পৃথিবীর জল-স্থল, পাহাড়, বনজঙ্গল, নগরের কোলাহলময় পরিবেশ, শূন্য মাঠ সব জায়গাতে তাদের বাড়ির খোঁজ করেছে। কিন্তু, কোথাও তারা তাদের বাড়ির সন্ধান পায়নি। তাদের বিশ্রাম নেওয়ার মতাে কোনাে জায়গা নেই। তারা চিমনির নিস্বনে এবং কাননের ক্রন্দনে তাদের বাড়ির খোঁজ করেছে, কিন্তু সন্ধান তারা পায়নি। তাই তারা অবিরাম উন্মাদের মতাে উত্তাল হয়ে ছুটে বেড়ায়। তাদের জীবনে কোনাে স্থিতি, বিশ্রাম না-থাকায় তারা চিরকাল উত্তাল। 

৪.৩ কবিতাটির নাম ‘হাওয়ার গান’ দেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী যুক্তি কবির মনে এসেছিল বলে তােমার মনে হয় ? 

উঃ  কবি বুদ্ধদেব বসু কবিতাটির নাম রেখেছেন ‘হাওয়ার গান’। এই নামকরণ করার পিছনে যে-সমস্ত যুক্তিকে তিনি মনে স্থান দিয়েছিলেন সেগুলি হল— 

প্রথমত : কবিতাটিতে হাওয়ারা তাদের নিজেদের কথা নিজের মুখেই বলেছে। 

দ্বিতীয়ত : সমস্ত কবিতাটিতে হাওয়াদের কথাই বলা আছে। তাদের বাড়ি নেই। তারা তাদের বাড়ির খোঁজ করতে বিভিন্ন জায়গাতে বৃথাই ঘুরে বেড়িয়েছে। কোথায় কোথায় গেছে বা কী দৃশ্য তাদের চোখে পড়েছে সমস্তটাই তারা নিজেরাই বলে গিয়েছে। 

তৃতীয়ত : হাওয়াদের যে বাড়ি নেই, সেই কথাটিকে তারা কবিতার মধ্যে দু-বার বলেছে, ঠিক যেন গানের মতাে করে। গানে যেমন কলির পুনরাবৃত্তি করা হয়, তেমনিভাবে এখানেও ‘বাড়ি নেই’ শব্দদ্বয়ের পুনরাবৃত্তি। করা হয়েছে। তাই কবি কবিতাটির নাম ‘হাওয়ার গান রেখেছেন বলে আমার মনে হয়। 

৫নীচের পঙক্তিগুলির মধ্যে ক্রিয়াকে চিহ্নিত করাে এবং অন্যান্য শব্দগুলির সঙ্গে তার সম্পর্ক দেখাও : 

৫.১ ঘরে ঘরে জ্বলে যায় স্বপ্নের মৃদু মােম। 

➡️ জ্বলে যায় = ক্রিয়াপদ। ‘ঘরে ঘরে’ শব্দদ্বয়ের সঙ্গে তার ‘অধিকরণ কারকগত’ সম্পর্ক এবং মৃদু মােম’ শব্দদ্বয়ের সঙ্গে তার ‘কর্মকারকগত সম্পর্ক। 

৫.২ আঁধারে জাহাজ চলে।

➡️ চলে = ক্রিয়াপদ। ‘আঁধারে’ শব্দটির সঙ্গে ‘অধিকরণ কারকগত সম্পর্ক এবং ‘জাহাজ’ শব্দটির সঙ্গে ‘কর্তৃকারকগত সম্পর্ক।

৫.৩ শার্সিতে কেঁপে-ওঠা দেয়ালের পঞ্জর। 

➡️ কেঁপে ওঠা = ক্রিয়াপদ। ‘শার্সিতে’ শব্দটির সঙ্গে ‘অধিকরণ কারকগত’ সম্পর্ক। ‘পঞ্জর’ শব্দটির সঙ্গে কর্তৃকারকগত সম্পর্ক। 

৫.৪ অকূল অন্ধকারে ফেটে পড়ে গর্জন।  

➡️ ফেটে পড়ে = ক্রিয়াপদ। ‘অকূল অন্ধকারে’ শব্দদ্বয়ের সঙ্গে ক্রিয়ার ‘অধিকরণ কারকগত সম্পর্ক। ‘গর্জন’ শব্দটির সঙ্গে ক্রিয়ার ‘কর্তৃকারকগত সম্পর্ক। 

৬ ‘বন্দর, বন্দর নগরের ঘন ভিড়’—পঙক্তিটির প্রথমে একই শব্দ দুবার ব্যবহার করা হয়েছে। এই রকম আরও চারটি পঙক্তি উদ্ধৃত করাে। কবিতার ক্ষেত্রে এই ধরনের শব্দ ব্যবহারের কৌশল অবলম্বনের কারণ কী ? 

উঃ  কবিতার মধ্যে একই শব্দ দুবার ব্যবহৃত হয়েছে এমন চারটি পঙক্তি হল—–

 ১. ছুঁয়ে গেছি বার-বার দুর্বার ইচ্ছায়। 

২. ঘরে ঘরে জ্বলে যায় স্বপ্নের মৃদু মােম।

৩. কেঁদে কেঁদে মরি শুধু ভাইরে। 

৪. খুঁজে খুঁজে ঘুরে ফিরি বাইরে।

কবিতার ক্ষেত্রে এই ধরনের শব্দ ব্যবহারের কৌশল অবলম্বনের কারণ হল—একই শব্দ পর পর দু-বার ব্যবহার করে অর্থগত বৈচিত্র্য সম্পাদন করা যায়। এ ছাড়া কবিতার পঙক্তিকে শ্রুতিমধুর করা যায়। অনেক সময় একই শব্দ দুবার বসিয়ে অলংকার সৃষ্টির মাধ্যমে কবিতায় গতি-সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং শুতিমধুর ধ্বনির ঝংকার সৃষ্টি করা হয়। 

৭ ধ্বনি পরিবর্তনের দিক থেকে শূন্য অংশগুলি পূর্ণ করাে :

➡️ চন্দ্র   > চন্ন > চাঁদ 

➡️ রাত্রি > রাত্তির

➡️ পঞ্জর > পাঁজর


৮ “হাওয়ার গান কবিতায় ব্যবহৃত পাঁচটি ইংরেজি শব্দ লেখাে। এই শব্দগুলির বদলে দেশি/বাংলা শব্দ ব্যবহার করে পঙক্তিগুলি আবার লেখাে। 

উঃ ‘হাওয়ার গান কবিতায় ব্যবহৃত পাঁচটি ইংরেজি শব্দ হল পার্ক; চিমনি; কার্পেট; সিনেমা; ডেক। 

➡️ পার্ক = (উদ্যান)—উদ্যানের বেঞ্চিতে ঝরা পাতা ঝঝর। 

➡️ চিমনি = (ধু নালি)—ধূম্র নালির নিস্বনে, কাননের ক্রন্দনে। 

➡️ কার্পেট = (গালিচা)-আবছায়া গালিচা কুকুরের তন্দ্রায়।

➡️ সিনেমা = (চলচ্চিত্র)—যাত্রীরা চলচ্চিত্রে কেউ নাচে, গান গায়। 

➡️ ডেক = (জাহাজের পাটাতন)—অবশেষে থামে সব, জাহাজের পাটাতন হয় নির্জন।

আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। “.হওয়ার গান বুদ্ধদেব বসু সহায়িকা বিষয়সংক্ষেপ প্রশ্ন ও উত্তর” এরকম আরো অনেক বিষয় জানতে হলে অব্যশয় আমাদের অন্যান্য পোস্ট পড়তে ভুলবেন না। ধন্যবাদ ❤

Leave a Comment