অব্যয় পদ কাকে বলে? | অব্যয় পদ চেনার উপায়? | অব্যয় পদের শ্রেণীবিভাগ

অব্যয় পদ কাকে বলে: আজকে আমরা জানবো অব্যয় পদ কাকে বলে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আশা করি আপনারা এই প্রশ্নের উত্তর ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন।

অব্যয় পদ কাকে বলে
অব্যয় পদ কাকে বলে

অব্যয় পদ কাকে বলে?

ন + ব্যয় = অব্যয়। যার পরিবর্তন বা ব্যায় হয় না, অর্থাৎ যা অপরিবর্তনীয় শব্দ তাই অব্যয়। অর্থাৎ যে পদ সর্বদা অপরিবর্তনীয় থেকে কখনো বাক্যের শোভা বর্ধন করে, কখনো একাধিক পদের / বাক্যাংশের / বাক্যের সংযোগ বা বিয়োগ সম্বন্ধ ঘটায়, তাকে অব্যয় পদ বলে।

অব্যয়ের সাথে কোনো বিভক্তি চিহ্ন যুক্ত হয় না, সেগুলোর একবচন বা বহুবচন হয় না এবং সেগুলোর স্ত্রী ও পুরুষবাচকতা নির্ণয় করা যায় না। অন্যভাবে বলা যায়, যে পদে বচনে-লিঙ্গে-বিভক্তিতে কোনো পরিবর্তন ঘটে না, তা অব্যয়

অব্যয় কয় প্রকার?

বাংলা ভাষায় তিন প্রকার অব্যয় শব্দ রয়েছে, যথা-

  1. বাংলা অব্যয় শব্দ – আর, আবার, ও, হ্যাঁ, না ইত্যাদি।
  2. তৎসম অব্যয় শব্দ – এবং, সুতরাং, যদি, যথা, সদা, সহসা, হঠাৎ, অর্থাৎ, দৈবাৎ, বরং, পুনশ্চ, আপাতত, বস্তুত ইত্যাদি।
  3. বিদেশি অব্যয় শব্দ – আলবাত, বহুত, খুব, শাবাশ, খাসা, মাইরি, মারহাবা ইত্যাদি।

অব্যয় পদের শ্রেণীবিভাগ

অব্যয়ের প্রকারভেদকে নানা ভাবে বিভক্ত করা যায়। প্রধানত অব্যয় তিন প্রকার। যথা-

  1. পদান্বয়ী অব্যয়
  2. অনন্বয়ী অব্যয়
  3. বাক্যান্বয়ী অব্যয়

পদান্বয়ী অব্যয় কাকে বলে?

যে অব্যয় পদ বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত হয়ে এক পদের সঙ্গে অন্য পদকে সংযুক্ত করে, তাকে পদান্বয়ী অব্যয় বলে।

যেমন – কর্ম ব্যতীত সুখ লাভ সম্ভব নয়। রাকেশ ও তপন আজকে বেড়াতে যাবে। বিয়েতে আপনার কিন্তু আসা চাই।

ওপরে কথিত বাক্য তিনটিতে ব্যতীত, ও, কিন্তু এই অব্যয়গুলি বাক্যের মধ্যে বসে এক পদের সঙ্গে অন্য পদকে যুক্ত করেছে। সুতরাং এগুলি পদান্বয়ী অব্যয়

Also Read: স্বাভাবিক সংখ্যা কাকে বলে?

অনন্বয়ী অব্যয় কাকে বলে?

যে অব্যয় পদের সঙ্গে বাক্যের অন্যান্য পদের কোনো সম্বন্ধ থাকে না, তাকে অনন্বয়ী অব্যয় বলে

যেমন– বাঃ! কী সুন্দর দৃশ্য! হায়। আমার কপালে কি এই ছিল? মা, আমাকে আশীর্বাদ করো।

এখানে বা: হায়, মা—এই তিনটি পদ বাক্যের বাইরে বসে প্রশংসা, খেদ, সম্বোধন ইত্যাদি বুঝিয়েছে। এই পদগুলির দ্বারা মনের বিশেষ ভাব প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু সবকটি ক্ষেত্রেই মূল বাক্যের সঙ্গে এদের কোনো সম্বন্ধ নেই।

বাক্যান্বয়ী অব্যয় কাকে বলে?

যে অব্যয় বাক্যে অন্বয় বা সম্বন্ধ স্থাপন করে তাদের বাক্যান্বয়ী বা সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে।

অনন্বয়ী অব্যয়ের প্রকারভেদ

অনন্বয়ী অব্যয় আবার ছয় প্রকার।

এগুলো হলো-

  1. বাক্যালঙ্কার অব্যয়,
  2. ভাবপ্রকাশক অব্যয়,
  3. সংযোগমূলক অব্যয়,
  4. সম্মতিসূচক অব্যয়,
  5. উপমাবাচক অব্যয় ও
  6. অনুকার অব্যয়

বাক্যান্বয়ী অব্যয়ের প্রকারভেদ

অন্যদিকে বাক্যান্বয়ী অব্যয়কে আবার নানা ভাবে ভাগ করা যায়। যেমন-

  1. সংযোজক অব্যয়,
  2. বিয়োজক অব্যয়,
  3. সংকোচক অব্যয়,
  4. হেতুবাচক অব্যয়,
  5. সিদ্ধান্তবাচক অব্যয় এবং
  6. নিত্যসম্বন্ধীয় অব্যয়।

বাক্যালঙ্কার অব্যয় কাকে বলে?

যে অব্যয় বাক্যের মধ্যে বসে বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, তাকে বাক্যালঙ্কার অব্যয় বলে।

যেমন – এ গাড়ি তো গাড়ি নয়। দেখে মনে হয় যেন উরজাহাজ। ‘তো’ ‘যেন’ এগুলি বাক্যালঙ্কার অব্যয়। কারণ এগুলি বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।

অব্যয় পদ কাকে বলে?,অব্যয় পদ চেনার উপায়,অব্যয় পদের শ্রেণীবিভাগ

ভাবপ্রকাশক অব্যয় কাকে বলে?

যে অব্যয় বক্তার মনের ভাব প্রকাশ করে, তাকে ভাব প্রকাশক অব্যয় বলে।

যেমন – মরি মরি! একি লজ্জা! ধন্য ধন্য। বাংলাদেশ।

এখানে মরি মরি, ধন্য ধন্য বিশেষ ভাব প্রকাশ করেছে। তাই এগুলি ভাব প্রকাশক অব্যয়।

সম্মতি বা অসম্মতিসূচক অব্যয় কাকে বলে?

যে অব্যয় পদের দ্বারা বক্তার মনের ইচ্ছা বা অনিচ্ছা প্রকাশ পায়, তাকে সম্মতি বা অসম্মতিসূচক অব্যয় বলে।

যেমন – হ্যাঁ, আমি তো যাবই। না, কথাটা সত্যি নয়।

এখানে হ্যাঁ সম্মতিসূচক অব্যয় এবং না অসম্মতিসূচক অব্যয়।

উপমাবাচক অব্যয় কাকে বলে?

যে সব অব্যয়ের দ্বারা উপমা বা তুলনাকে বোঝায় তাকে, উপমাবাচক অব্যয় বলে।

যেমন – চাঁদের মতো সুন্দর। মিছরির ন্যায় মিষ্টি। তুলোর মতো নরম।

সংযোজক অব্যয় কাকে বলে?

যে অব্যয় পদ বাক্যের সঙ্গে বাক্যের বা পদের সঙ্গে পদের সংযোগ সাধন করে, তাকেই সংযোজক অব্যয় বলে।

যেমন – আমি খেলার মাঠে গিয়েছিলাম; কিন্তু তোমায় দেখতে পাইনি। বাবা এবং মায়ের কথা শোনা উচিত।

বিয়োজক অব্যয় কাকে বলে?

বিকল্প বোঝাতে বাক্যের মধ্যে যে অব্যয় ব্যবহৃত হয়, তাকেই বিয়োজক অব্যয় বলে।

যেমন – হয় তুমি একাজ কর নয় তাকে কাজটি করতে দাও। তুমি অথবা সমর সেখানে যাবে।

সংকোচক অব্যয় কাকে বলে?

যে অব্যয় একটি বিষয়কে সংকুচিত করে কিন্তু অন্য বিষয়কে প্রাধান্য দেয়, তাকে সংকোচক অব্যয় বলে।

যেমন – এখন খেলা বন্ধ করে বরং পড়াশোনায় মন দাও। ভালো খেলোয়াড় হয়েছ জানি; তবুও মন দিয়ে পড়াশোনা করো।

নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় কাকে বলে?

এমন কতগুলো অব্যয় আছে যারা একে অপরের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত একটি বসলে অপরটি বসবেই, একে নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় বলে।

যেমন – বটে কিন্তু, যেমন-তেমন, যখন-তখন, যেমনি কর্ম তেমনি ফল।

হেতুবাচক অব্যয় কাকে বলে?

কারণ বোঝাতে যে অব্যয় বাক্যে ব্যবহৃত হয় তাকে হেতুবাচক অব্যয় বলে।

যেমন – বাবা আমাকে মেরেছেন কারণ আমি তাঁর কথা শুনিনি। আপনি তাড়াতাড়ি আসবেন কেননা আমি পড়তে যাবো।

সিদ্ধান্তবাচক অব্যয় কাকে বলে?

যে অব্যয়ের দ্বারা সিদ্ধান্ত বোঝায় তাকে সিদ্ধান্তবাচক অব্যয় বলে।

যেমন – মশায় কামড়েছে তাই ম্যালেরিয়া হয়েছে। শ্যাম আসবে বলে রাম বসেছিল।

অনুকার অব্যয় কাকে বলে?

যে সব শব্দ ধ্বনির ব্যঞ্জনা দেয় তাকে, ধ্বন্যাত্মক অব্যয় বা অনুকার অব্যয় বলে।

যেমন – ঝমঝম্ করে বৃষ্টি পড়ছে। শোঁ শোঁ শব্দে বাতাস বইছে। হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে।

সম্বোধনসূচক অব্যয় কাকে বলে?

যে অব্যয়ের দ্বারা কাউকে সম্বোধন করা বোঝায়, তাকে সম্বোধনসূচক অবায় বলে।

যেমন – হ্যাঁগো, আজ কলকাতা যাবে কি? ওরে, একবার এদিকে আয়।

অব্যয় পদ কাকে বলে?,অব্যয় পদ চেনার উপায়,অব্যয় পদের শ্রেণীবিভাগ

See More

Also Read: ভাগ কাকে বলে? 

Also Read: সূচক কাকে বলে?

Leave a Comment