আজকে আমরা জানবো ভাষা কাকে বলে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আশা করি আপনারা এই প্রশ্নের উত্তর ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন।
ভাষা কাকে বলে উদাহরণ দাও, ভাষা কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি, ভাষার সংজ্ঞা, ভাষার প্রধান উপাদান কয়টি ও কি কি, ভাষার বৈশিষ্ট্য কি কি, বাংলা ভাষা কাকে বলে আঞ্চলিক ভাষা কাকে বলে, মাতৃভাষার বৈশিষ্ট্য কি কি, ভাষা কাকে বলে in bangla, প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার স্তর কয়টি ও কি কি
ভাষা কাকে বলে?
বাগযন্ত্রের সাহায্যে তৈরিকৃত অর্থবোধক ধ্বনির সংকেতের সাহায্যে মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমকেই ভাষা বলে।
মনে রাখার কৌশল: উপরের যেকোনো একটি সংজ্ঞা ১০ বার পড়ুন। তাহলে দেখবেন এমনিতে মনে থাকছে। ❤️
এখানে বাগযন্ত্র হলো গলনালি, মুখবিবর, কন্ঠ, জিহ্বা, তালু, দাঁত, নাক ইত্যাদির সমাবেশ।
আরো সহজভাবে, মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য কন্ঠনিঃসৃত বা মুখ থেকে বেরিয়ে আসা অর্থপূর্ণ কতগুলো আওয়াজ বা ধ্বনির সমষ্টিকে ভাষা বলা হয়।
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে
“মনুষ্যজাতি যে ধ্বনি বা ধ্বনিসকল দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করে, তার নাম ভাষা”
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে
“মনের ভাব প্রকাশের জন্য, বাগযেন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনি দ্বারা নিষ্পন্ন, কোনো বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত, তথা বাক্যে প্রযুক্ত, শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে”
অনেকে বলেন খ্রি: পূ: যুগেও বাঙালির অস্তিত্ব ছিল। শুধু ভারত ও বাংলাদেশে নয়, এখনকার পাকিস্তান, আফগানিস্থান ইত্যাদি দেশেও। তাই যদি হয়, তবে বলা যাবে বাঙালিরা একবিংশ শতকেও সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
পৃথিবীর সব প্রান্তেই এখন বাঙালির জয়জয়কার। সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলো, ব্যবসা, বাণিজ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি সবকিছুতেই বাঙালি চলে এসেছে প্রথম সারিতে। এমনকী লোকসংখ্যার বিচারেও। ভাষা ব্যবহারের দিক থেকে তো পৃথিবীতে চতুর্থ স্থানে রয়েছে এই বাংলা ভাষা।
Also Read: মুলদ সংখ্যা কাকে বলে?
ভাষার লিখন ব্যবস্থা কত প্রকার ও কি কি?
ভাষার লিখন ব্যবস্থা ৩ প্রকার:
বর্ণভিত্তিক : যে সব ভাষার বর্ণ রয়েছে যেমন: বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ইত্যাদি। এইসব ভাষার লিখন ব্যবস্থা হচ্ছে বর্ণভিত্তিক।
ভাবাত্মক: যেসব ভাষায় লেখার জন্য বর্ণ কিংবা অক্ষর কোনোটাই ব্যবহার করা হয় না, ছবি এঁকে এসব ভাষা লেখা হয়, এই লিখন ব্যবস্থাকেই ভাবাত্মক বলা হয়। যেমন: চীনা, কোরীয় ভাষা।
অক্ষরভিত্তিক : অক্ষর (কথার টুকরো অংশ) অনুযায়ী সেসকল ভাষা লেখা হয় তাকে অক্ষরভিত্তিক লিখনরীতি বলে। যেমন: জাপানি ভাষা।
ভাষার বৈশিষ্ট্য কি কি?
- যে কোন ধ্বনি বা শব্দ মাত্রই ভাষা নয়; বরং, শুধুমাত্র বোধগম্য ধ্বনি বা শব্দই হল ভাষার মূল।
- ভাষা অবশ্যই অর্থপূর্ণ হবে।
- ধ্বনি, শব্দ, পদ ও বাক্যের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিণ গাঠনিক পর্যায়কে রক্ষাকারী শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হল ভাষা।
- দেশ, কাল ও পরিবেশভেদে ভাষার পার্থক্য ও পরিবর্তন ঘটে থাকে।
- ভাষা মানুষের স্বভাব, সভ্যতা এবং সংস্কৃতিকে প্রকাশ করে।
- একটি বিশেষ সম্প্রদায়, জাতি বা গোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত ও ব্যবহৃত ভাব প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে একটি ভাষা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
- মানুষের স্বেচ্ছাকৃত আচরণ ও অভ্যাসের সমষ্টি হল ভাষা।
- ভাষা হল মানুষের স্বেচ্ছাকৃত আচরণ ও অভ্যাসের সমষ্টি।
- পরস্পরের ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যম।
- ভাষা বক্তব্যের অন্তর্গত রূপকে প্রকাশ করে।
ভাষার মূল অংশ কি কি?
পৃথিবীর যেকোন ভাষাকে বিশ্লেষণ করা হলে মৌলিক উপাদান হিসেবে মূলত ৪ টি অংশ পাওয়া যায়। ঠিক বাংলা ভাষাকে বিশ্লেষণ করলেও ৪ টি অংশ পাওয়া যায়। এরা হল-
- ধ্বনি (sound)
- শব্দ (word)
- বাক্য (sentence)
- অর্থ (meaning)
Also Read: রেখা কাকে বলে?
ভাষা কত প্রকার ও কি কি?
ভাষা দুই প্রকার:
- লিখিত ভাষা : যে ভাষার লিখন ব্যবস্থা আছে তাকে লিখিত ভাষা বলে।
- মৌখিক ভাষা : যে ভাষার কোনো লেখার ব্যবস্থা নেই তাকে মৌখিক ভাষা বলে।
Also Read: সিলভার কাকে বলে?
বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ
বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশের মধ্যে আমারা উপরে বাংলা ভাষার উদ্ভব বা উৎপত্তি নিয়ে আলোচনা করলাম। এবার আমরা বাংলা ভাষার বিকাশ নিয়ে আলোচনা করব। বাংলা ভাষার বিকাশকে তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগগুলি –
(১) প্রাচীন বাংলা ভাষা
(২) মধ্য বাংলা এবং
(৩) আধুনিক বাংলা
প্রাচীন বাংলা ভাষা
এই পর্বের সময়সীমা আনু: ৯৫০-১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ। তুর্কি আক্রমণের সময় থেকে (১২০২ খ্রি:) পরবর্তী নিদর্শনহান অংশকে ধরা হয় না। ৯৫০-১২০০ খ্রি: পর্যন্ত ধরা হয়। এই পর্বে প্রাপ্ত নিদর্শন – ‘চর্যাপদে’, সর্বানন্দ রচিত ‘অমরকোষের’ টীকায় চার শতাধিক বাংলা প্রতিশব্দে, ধর্মদর্দাসের ‘বিদগ্ধ মুখমণ্ডলে’, ‘শেকশুভদয়ার’ গানে ছড়ায়।
Also Read: ব্যবস্থাপনা কাকে বলে?
প্রাচীন বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য
(১) পদান্তিক স্বরধ্বনির স্থিতি _ ভণতি > ভণই
(২) ক্ষতিপূরণ দীর্ঘীভবন _ ধর্ম > ধৰ্ম্ম > ধাম
(৩) বিভক্তির স্থানে অনুসর্গের ব্যবহার _ তোহোর অন্তরে – তোর তরে।
(৪) -এর/-অর/-র’ বিভক্তি যোগে সম্বন্ধ পদ। রুখের তেন্তলি কুম্ভিরে খাঅ।
মধ্য বাংলা ভাষা
সময়সীমা – ১৩৫০-১৭৬০ খ্রিস্টাব্দ। এর নিদর্শন মেলে বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’, বিভিন্ন মঙ্গলকাব্য, শাক্তসাহিত্য, বৈষ্ণব সাহিত্য, মহাভারত, রামায়ণ, ভাগবতের অনুবাদ ইত্যাদিতে।
মধ্য বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য
(১) আ – কারের পরবর্তী ই/উ’ ধ্বনির ক্ষীণতা _ বড়াঞি > বড়াই।
(২) সর্বনামের বহুবচনে কর্তৃকারকে ‘রা’ বিভক্তি _ আহ্মারা > আমরা।
(৩) অপিনিহিতির ব্যবহার করিয়া > কইরা
(৪) ষষ্ঠী বিভক্তির চিহ্ন ছিল _ ‘র. এর’ ইত্যাদি। যথা, ‘রূপের পাথারে আঁখি ডুবিয়া রহিল।
আধুনিক বাংলা ভাষা
সময়কাল ১৭৬০ থেকে বর্তমানকাল। মানুষের মুখের ভাষাই এই পর্বের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। তা ছাড়া ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের লেখকবৃন্দ থেকে আধুনিক যুগের রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, সমরেশ বসু প্রমুখের বিশাল রচনা সম্ভার এই ভাষার নিদর্শন। এর পাঁচটি উপভাষা রয়েছে – রাটী, বঙ্গালী, কামরূপী, ঝাড়খণ্ডী, বরেন্দী। উল্লেখ্য ভাগীরথী তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষের ‘রাঢ়ী’ উপভাষাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে ‘আদর্শ কথ্য বাংলা’।
আধুনিক বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য
(১) ব্যাপকভাবে ‘অভিশ্রুতি’ প্রক্রিয়ার ব্যবহার, যেমন _ করিয়া > কইর্যা > করে
(২) স্বরসঙ্গতি লক্ষণীয় _ দেশী > দিশি
(৩) বহুপদী ক্রিয়ারূপ দেখা যায় _ গান করা, খেলা করা
(৪) ইংরেজি, আরবি, ফারসি ইত্যাদি বহু বিদেশি শব্দের ব্যবহার চেয়ার, টেবিল, আলপিন, হাকিম, কুপন ইত্যাদি।
(৫) নতুন নতুন ছন্দোরীতি এবং গদ্যছন্দের ব্যবহার সম্প্রতি ঘটেছে।
আধুনিক বাংলা ভাষার মাধ্যমে বিশ্বের উন্নত দেশের জ্ঞানবিজ্ঞান এদেশে প্রচারিত হচ্ছে। ফলে আধুনিক চিন্তা ভাবনার বাহন হিসেবে বাংলা ভাষা ক্রমেই অধিকতর যোগ্য হয়ে উঠছে। তাছাড়া বাংলা এখন রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহারে নিজের যথোপযুক্ততা প্রমাণ করছে এবং প্রয়োজনবোধে বাইরের প্রভাবে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলছে।
Also Read: রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে?
–
ভাষা সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- দেশ, কাল ও পরিবেশভেদে ভাষার পার্থক্য ও পরিবর্তন ঘটে।
- বর্তমানে পৃথিবীতে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি ভাষা প্রচলিত আছে।
- বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৩০ কোটি লোকের মুখের ভাষা বাংলা।
- ধ্বনির সাহায্যে ভাষার সৃষ্টি হয়। আর ধ্বনির সৃষ্টি হয় বাগযন্ত্রের দ্বারা।
- ভাষার মূল উপাদান হলো ধ্বনি। আর অর্থপূর্ণ ধ্বনিই হলো ভাষার প্রাণ।
প্রশ্ন: ভাষার ক্ষুদ্রতম একক কি?
উত্তর :ধ্বনি।
প্রশ্ন: ভাষার মূল ভিত্তি কি?
উত্তর: ধ্বনি।
প্রশ্ন: ধ্বনির সাধারণ অর্থ কি?
উত্তর: যেকোনো ধরনের আওয়াজ।
প্রশ্ন: বাংলা ভাষার উদ্ভব ঘটে কোন দশকে?
উত্তর: খ্রিষ্টিয় দশম শতকের কাছাকাছি।
প্রশ্ন: ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে বাংলা ভাষার উদ্ভবকাল কত?
উত্তর: ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দ।
প্রশ্ন: ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে বাংলা ভাষার উদ্ভবকাল কত?
উত্তর: ৯৫০ খ্রিষ্টাব্দ।
প্রশ্ন: ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে বাংলা ভাষার উৎস কোন অপভ্রংশ থেকে?
উত্তর: গৌড় অপভ্রংশ থেকে।
প্রশ্ন: অনেকেই কোন ভাষাকে বাংলার জননী মনে করত?
উত্তর: সংস্কৃত।
প্রশ্ন: বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশের বিস্তৃত ইতিহাস রচনা করেন কে?
উত্তর: ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: বাংলা ভাষার উৎসমূলে যে ভাষার সন্ধান পাওয়া যায়, তার নাম কী?
উত্তর: ইন্দো-ইউরোপীয়।
প্রশ্ন: বাংলা ভাষা কত বছরের পুরনো?
উত্তর: বাংলা ভাষা প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো।
প্রশ্ন: বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যিক নিদর্শন কি?
উত্তর: শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য।
প্রশ্ন: ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে বাংলা ভাষার উদ্ভব কোন অপভ্রংশ থেকে?
উত্তর: পূর্ব ভারতে প্রচলিত মাগধী অপভ্রংশ থেকে।
তো আজকে আমরা দেখলাম যে ভাষা কাকে বলে এবং আরো অনেক বিস্তারিত বিষয় । যদি পোস্ট ভালো লাগে তাহলে অব্যশয়, আমাদের বাকি পোস্ট গুলো ভিসিট করতে ভুলবেন না!